ফেসবুক তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি দ্য ভার্জে প্রকাশিত রিপোর্টে এই খবর সামনে এসেছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও অগমেন্টেড রিয়েলিটির দুনিয়ায় গবেষণার কাজ করছিল মার্কিন কোম্পানিটি। সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির থেকে নিজের পরিচয় পরিবর্তন করতেই নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেসবুক।
দ্য ভার্জের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী ২৮ অক্টোবর ফেসবুকের কানেক্ট কনফারেন্স। সেই দিনই নাম পরিবর্তনের বিষয়ে ফেসবুকের প্রধান মার্ক জুকারবার্গ আলোচনা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র এমনটা জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে দ্য ভার্জের রিপোর্টে। দ্য ভার্জে প্রকাশিত রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, কোম্পানির অধীনে ফেসবুক, Instagram, WhatsApp-এর ব্র্যান্ডগুলি পৃথকভাবে কাজ করতে থাকবে। তবে, এই রিপোর্ট সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ফেসবুক।
কেন
ইতিমধ্যেই মেটাভার্সের জন্য ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লগ্নির ঘোষণা করেছে মার্ক জাকারবার্গের কোম্পানি। এই জন্য ইউরোপে ১০,০০০ নতুন কর্মসংস্থান হবে বলে কোম্পানির তরফ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু মেটাভার্স আসলে কী?
কেন ফেসবুক নিজের নাম পরিবর্তন করছে?
গুগল যেমন অ্যালফাবেট নামক কোম্পানির অধীনে কাজ করে একই ভাবে একটি পেরেন্ট কোম্পানির অধীনে কাজ করবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও কোম্পানির অন্যান্য সার্ভিস।
ফেসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছে দ্রুত মেটাভার্সের মাধ্যমে গোটা দুনিয়া চলবে। তাই এই দুনিয়ায় নিজের নাম শক্ত করতে এখনই কোম্পানির নাম বদল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন কোম্পানিটি। ইতিমধ্যেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কোম্পানি অকুলাস কিনে নিয়েছে ফেসবুক। তাই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির দুনিয়ায় আর পিছিয়ে থাকতে রাজি নয় কোম্পানিটি।
আর এই কারণেই সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির পরিচয় থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে ফেসবুক। এই মুহূর্তে ফেসবুকের উপরে একাধিক অভিযোগ উঠছে। আর সেই সময় কোম্পানির পরিচয় পরিবর্তন করে গ্রাহকের বিশ্বাস ফিরে পেতে চাইছে কোম্পানিটি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ একাধিক দেশে ইতিমধ্যেই কড়া সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে কোম্পানিটি। কোম্পানির বিরুদ্ধে জেনে শুনে সমাজের ক্ষতি করার অভিযোগ এনেছেন ফেসবুকের প্রাক্তন প্রোডাক্ট ম্যানেজার।
মেটাভার্স আসলে কী?
এই প্রশ্নের একাধিক উত্তর হতে পারে। কিন্তু এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হল মেটাভার্স একটি সমান্তরাল ভার্চুয়াল দুনিয়া। সেখানে বিভিন্ন চরিত্র পরিচয় ও জিনিসপত্র থাকবে।
ইন্টারনেট জামানার পরে মেটাভার্স জনপ্রিয়তা পেতে পারে। তবে সিলিকন ভ্যালির গবেষকরা মনে করেন ফিসিকাল ও ডিজিটাল দুনিয়ায় উপস্থিত থাকবে মেটাভার্স।
তবে একটিমাত্র কোম্পানির মাধ্যমে মেটাভার্স তৈরি সম্ভব নয়। তাই ফেসবুক ছাড়াও আরও অনেক কোম্পানির মেটাভার্স তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে।
মেটাভার্স কীভাবে কাজ করবে?
ডিজিটাল স্পেস, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেম, একটি ভার্চুয়াল দুনিয়া অথবা ফোর্টনাইটের মতো সামান্য এক গেমও মেটাভার্স হিসাবে কাজ করতে পারে। সম্প্রতি ফোর্টনাইট একটি ‘মিউজিক এক্সপেরিয়েন্স’ আয়োজন করেছিল। সেখানে গেমের মধ্যে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হচ্ছিল। অর্থাৎ গেমের মধ্যেই ব্যান্ড নিজেদের প্রোডাক্ট শোকেস করতে পারবে।
মেটাভার্সের মাধ্যমে গ্রাহক ভার্চুয়াল সার্ভিস পাবেন। এছাড়াও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে ভার্চুয়াল অ্যাসেট তৈরি করা যাবে।
মেটাভার্স নিয়ে ফেসবুকের পরিকল্পনা কী?
ফেসবুকের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মেটাভার্স। এমন একটি ডিজিটাল দুনিয়া যেখানে মানুষ বেশিরভাগ সময় বন্ধুদের সঙ্গে কাটাবে এবং ভার্চুয়াল অ্যাসেটের মূল্য বেশি হবে, যেখানে সব নিয়ম আলাদা হবে। আর এই রকম একটা কিছু তৈরি করতে চাইছে ফেসবুক। আর এই জন্য ফেসবুক নিজস্ব অকুলাস ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবেন। এর মাধ্যমেই মানুষ মেটাভার্সের দুনিয়ায় প্রবেশ করবেন।
ফেসবুক জানিয়েছে মেটাভার্সের মাধ্যমে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে কাজ, খেলা, কেনাকাটা করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি অনলাইনে যে সময় কাটাচ্ছেন তা আরও ভালো করে তোলার জন্যই মেটাভার্স নিয়ে হাজির হচ্ছে ফেসবুক।
ফেসবুক আরও জানিয়েছে রাতারাতি মেটাভার্স তৈরি সম্ভব নয়। এই কাজ শেষ হতে ১০-১৫ বছর সময় লাগবে। তবে মেটাভার্স কীভাবে তৈরি হবে আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে কোম্পানিটি।
মার্ক জুকারবার্গ ২০০৪ সালে এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি একাধিক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছিলেন যে, ফেসবুকের ভবিষ্যতে সাফল্যের চাবিকাঠি মেটাভার্স ধারণার মধ্যে নিহিত। মেটাভার্স ধারণাকে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে এই রিব্র্যান্ডিং আরও কার্যকর হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।