তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক ছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব হবে না। শ্রম থেকে প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরের অংশ হিসেবে দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগাতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পর অগামী বছর থেকেই প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের ভাষা শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য জাতীয় পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত করা হচ্ছে কোডিং, প্রোগ্রামিং এবং প্রবলেম সলভিং দক্ষতা।
প্রতিমন্ত্রী আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত “ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন বিওন্ড” উপলক্ষে উপলক্ষে মুজিব হান্ডেড ২০২১ এক্সিবিশন ও সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জের উপযোগী জনশক্তি তৈরি করতে একইসঙ্গে গ্রাজ্যুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য টপ আপ ট্রেনিং, ফাস্ট ট্রাক ফিউচার লিডারস ইনকিউবেশন অ্যান্ড ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইউনিভার্সিটি ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে কুয়েট ও চুয়েটে একটি ইউনিভার্সিটি ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে আরো ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি বললেন ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে চট্টগ্রাম হাইটেক পার্ক, খুলনা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (কুয়েক) ইনকিউবেশন সেন্টার এবং চিটাগাং ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (চুয়েট) ইনকিউবেশন সেন্টার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন ,যখন আমরা ফোরআইআর নিয়ে কথা বলছি, তখন বিশেষ করে করোনা এবং ৪আইআর যুগে কতটা র্যাপিড ও ম্যাসিভ পরিবর্তন হতে চলেছে তার অভিজ্ঞতা পেতে শুরু করেছি। সব কিছুই বদলে যাচ্ছে। আমাদের কাজের ও ব্যবসার ধরণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের পদ্ধতি- সবই বদলে যাচ্ছে। এমনকি আমাদের বিনোদনের ধারাও পরিবর্তিত হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্র আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। সোশ্যাল মিডিয়া ও এন্টারটেইনমেন্ট প্লাটফর্মগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। কখনো কখনো মুভিগুলো আমাদের পছন্দ এবং অভ্যাসকে প্রভাবিত করছে।
এনালিটিক্যাল ও এআই প্লাটফর্ম আমাদের বন্ধু এমনকি জীবনসঙ্গীর পছন্দকেও বদলে দিচ্ছে। এটাই বাস্তবতা। আর এ কারণেই এই প্রযুক্তিগুলো প্রশিক্ষণ ও রপ্তকরণের মাধ্যমে এই র্যাপিড ও ম্যাসেভ পরিবর্তনকে নিজেদের বাগে আনতে হবে। একইসঙ্গে বক্তব্যে দেশের আইসিটি শিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়ার নানা বিবরণও তুলে ধরেছেন পলক।
তিনি বলেছেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়াটাই আজ আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এজন্য সরকার-শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে। অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক ছাড়া চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুজিব ১০০ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সিবিশনের সভাপতি ও আইসি৪আইআর ২০২১ সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ সারোয়ার মোর্শেদ, ইউজিসি সেক্রেটারি ফেরদৌস জামান এবং পরিচালক ড. মাকসুর রহমান ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী জনশক্তি ও শিল্প বিকাশে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডাস্ট্রি ও একডেমি পর্যায়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। চুক্তিতে সরকারের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধকের ভূমিকা পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
এসময় ওয়ালটন হাইটেকের সঙ্গে ড্যাফোডিল ফ্যামিলি, এইচআর ফেডারেশনের সঙ্গে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), ই-ক্যাবের সঙ্গে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এবং আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডসহ মোট ৩০টি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।
দুই দিনের এই সম্মেলনে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়, আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়, ইনডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্ভাবিত চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী রোবট, ড্রোন, ট্র্যাক্টরসহ নানা হাইটেক সমাধান উপস্থাপন করছে।