বিজ্ঞানীরা মানুষের জন্য কতকিছুই না করছেন৷ তাদের একের পর এক আবিষ্কার আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলছে৷ করোনাকালেও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা থেমে থাকেনি। করোনার বিভীষিকা, মারণক্ষমতা, ভয়াবহতা মানুষের মধ্যে থাকলেও ২০২১ সালে বিজ্ঞানীদের সফলতা থেমে থাকেনি। দেখতে গেলে বিজ্ঞানে কিছু যুগান্তকারী ঘটনাও ঘটল অতিমারী-কবলিত এই ২০২১ সালেই। বিজ্ঞানের চলমান অগ্রগতির সাথে হাঁটতে হলে সাম্প্রতিক সময়ের আবিষ্কার ও উদ্ভাবন সম্পর্কে জানা জরুরি। দেখে নেওয়া যাক কী কী আবিষ্কার।
কোভিড-১৯ টিকা
এই বছরের সব চেয়ে বড় আবিষ্কারটিই করোনা সম্পর্কিত। এই ২০২১ সালেই আবিষ্কৃত হয়েছে কোভিড-১৯ টিকা। ২০২০ থেকেই অবশ্য এই আবিষ্কারের প্রেক্ষিত তৈরি হয়েছে। কিন্তু ২০২১ সালেই তা বাজারে প্রাপ্য হয়। ২০২০ সালের শেষে টিকা বাজারে এসে গিয়েছিল, তবে তা আপৎকালীন ব্যবহারের জন্য।
মঙ্গল গবেষণা
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গল গবেষণায় যুগান্তকারী ঘটনা ঘটল। পৃথিবী ও মঙ্গলের কক্ষপথের অ্যালাইনমেন্ট ঘটল। যা প্রতি ২৬ মাস পর পর ঘটে। এই মহাজাগতিক ঘটনার উপর নির্ভর করে মঙ্গল নিয়ে নানা খুঁটিনাটি ও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় মত্ত হতে পারেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলপৃষ্ঠ বিষয়ে নানা নতুন তথ্য হাতে আসে।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ
সব থেকে বড় ও সব চেয়ে শক্তিশালী জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এই বছরই বিজ্ঞানীদের হাতে এল। এটি প্রায় ১০ লক্ষ মাইল মহাকাশপথে নজরদারি চালাতে পারে!
আদি মানব
চীনে ৯০ বছর আগে একটি করোটির জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল। সেটি একটি পরিবারের হাতে গোপন ছিল। তারা ২০১৮ সালে সেটি একটি জাদুঘরে দান করে। আর তার উপর গবেষণার ফল বেরিয়ে আসে এই ২০২১ সালেই। এটি আদি মানবের একটি প্রজাতির করোটি। এই করোটির বড় ক্রেনিয়াম, যাতে মস্তিষ্কের আকারও বেশ বড়। মোটা ভুরু, প্রায় বর্গাকার চোখের কোটর।
নির্বিচার পশুহত্যা
মানবজাতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রাণীদের বিবর্তনকে থমকে দিচ্ছে। যেমন আফ্রিকায় যে হাতি এখন পাওয়া যাচ্ছে তা দাঁতহীন। আর এটা হয়েছে একদল চোরা শিকারির নির্বিচার পশুহত্যার জেরে। ১৯৭৭ থেকে ১৯৯২ সালে, মোজাম্বিসিয়ান সিভিল ওয়ার সময় পর্বে প্রচুর হাতি হত্যা করা হয়েছে। এখন দাঁত না জন্মাবার ট্রেন্ডটি হাতিদের জিনে ঢুকে পড়েছে।
প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠন
নামকরা জার্নাল সায়েন্স ২০২১ সালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী আবিষ্কারের মর্যাদা দিয়েছে প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠনের সহজ ও নির্ভুল উপায় বাতলে দেয়ার প্রোগ্রাম আলফাফোল্ড ও রোজ-টিটিএফোল্ডকে। আলফাফোল্ড সফটওয়্যার প্রোগ্রামটি তৈরি করেছে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ড টেকনোলোজিস।
মানবদেহে ক্রিসপার
মানবদেহের অভ্যন্তরে ক্রিসপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে জিন এডিটিংয়ের সফলতা এসেছে এ বছরেই। চিকিৎসাশাস্ত্রে ক্রিসপার প্রযুক্তির প্রথম সফলতা দেখা যায় ২০২০ সালে। তবে সেটা ছিল রক্তের স্টেম সেলকে রোগীর দেহের বাইরে এনে ল্যাবে করা এডিটিং। ২০২১ সালে বিজ্ঞানীরা আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে সরাসরি রোগীর দেহেই জিন এডিটিংয়ের কাজটা সেরে ফেলেছেন। এভাবে তারা রোগীর যকৃতে বিষাক্ত উপাদানের পরিমাণ কমিয়ে আনার পাশাপাশি চোখে জেনেটিক ডিজিজে আক্রান্ত একজনের দৃষ্টিশক্তিকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।