বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকার মোবাইল ফোনের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। দেশের ৪ টেলিকম অপারেটরদের জন্য সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম বা সার্টের সাইবার থ্রেট গবেষণা দলের করা ‘হরাইজন স্ক্যানিং রিপোর্টে’ এ তথ্য উঠে এসেছে।
রিপোর্টে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এই চারমাসের ম্যালওয়্যার সংক্রমণের হিসেব তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটকের গ্রাহকগণ ৫ লাখ ২৫ হাজার ৮২০ বার ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশ টেলিকম অপারেটরদের হরাইজন স্ক্যানিং প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে এই ম্যালওয়্যার সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
ওই ৪ টেলিকম অপারেটর হচ্ছে গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও টেলিটক।
গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৮৩ দশমিক শূন্য ২ মিলিয়ন। গ্রামীণফোনে মোট ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫৭টি ম্যালওয়্যার এবং ৪৭টি ‘ইউনিক’ ম্যালওয়্যার পাওয়া গেছে। ‘অ্যান্ড্রয়েড ডট হুমার’ নামের এই ভাইরাসে হার সবচেয়ে বেশি ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
আরো পডুন: ম্যালওয়্যার কি আর এটা থেকে কিভাবে বাঁচবেন?
রবি আজিয়াটার মোট ম্যালওয়্যার সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ৫৭৮টি। যার মধ্যে ৪০টি ‘ইউনিক’ ম্যালওয়্যার রয়েছে। রবিতে ‘অ্যাভালান্সি-অ্যান্ড্রোমিডা’ ভাইরাসের সংক্রমণের হার ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যা ৩৭ দশমিক ৪১ মিলিয়ন। বাংলালিংকের মোট ম্যালওয়্যার সংখ্যা ৯৮ হাজার ৪২৩ এবং ৩১টি ‘ইউনিক’ ম্যালওয়্যার পাওয়া গেছে। বাংলালিংকে ‘অ্যান্ড্রয়েড ডট হুমার’ নামের ভাইরাসের হার ২১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
সরকারি অপারেটর টেলিটকে ২৮ হাজার ১৬২টি ম্যালওয়্যার শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ‘ইউনিক’ ম্যালওয়ার ৩১টি। টেলিটকে ‘অ্যাভালান্সি-অ্যান্ড্রোমিডা’ ভাইরাসের হার ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ম্যালওয়্যার কি
ম্যালওয়্যার একটি ক্ষতিকর এপ্লিকেশন। যা স্মার্টফোন বা অন্য কোনো ডিভাইসে অনুমতি ছাড়াই বিভন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। সেটি হতে পারে আপনার উপর নজরদারি করা, আপনার মোবাইলের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া অথবা আপনার ডিভাইসে থাকা ডাটা হাতিয়ে নেওয়া। ব্যাংক একাউন্ট, ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও হ্যাকারদের কাছে চলে যেতে পারে।
তাই সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মার্টফোনে অ্যাপ ইনস্টল করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে করে ভুয়া বা বিপজ্জনক কোনো অ্যাপস ফোনে ইনস্টল না হয়ে যায়। সন্দেহজনক লিংক ক্লিক করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্টে সার্ট টেলিকম অপারেটরদের আইটি অবকাঠামো রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান সাইবার হুমকি মোকাবেলায় তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।
সফোস ২০২২ রিপোর্ট
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্লাউড-নেটিভ সিকিউরিটি প্ল্যাটফর্ম সোফোস, সম্প্রতি তাদের স্টেট অফ র্যানসমওয়্যার ২০২২ রিপোর্টে রিয়েল-ওয়ার্ল্ড র্যানসমওয়্যার অভিজ্ঞতার বার্ষিক পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, জরিপে প্রায় ৬৬% সংস্থা ২০২১ সালে র্যানসমওয়্যারের শিকার হয়েছিল।
এশিয়া-প্যাসিফিক, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা এবং আফ্রিকা জুড়ে প্রায় ৩১টি দেশের ৫,৬০০ টি সংস্থার জরিপ করার পর সোফোস এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সমীক্ষা চলাকালীন ৯৬৫টি কোম্পানি তাদের র্যানসমওয়্যার পেমেন্টের বিবরণ শেয়ার করেছে।
প্রতিবেদনে আরও প্রকাশিত হয়েছে যে র্যানসমওয়্যার আক্রমণে ডেটা এনক্রিপ্ট করা সংস্থাগুলি তাদের ডেটা ফেরত পেতে মোটামুটিভাবে ৮,১২,৩৬০ ইউএস ডলার বা প্রায় ৭ কোটি টাকা খেসারত দিয়েছে । উপরন্তু, ৪৬% ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের ডেটা এনক্রিপ্টেড ছিল এবং ব্যাকআপ সহ অন্যান্য ডেটা পুনরুদ্ধারের পদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও তারা মুক্তিপণ পরিশোধ করেছে।