দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডধারীর তথ্য ডার্ক ওয়েবে ফাঁস হয়েছে। সরকারি একটি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
ডার্ক ওয়েব হলো ইন্টারনেট জগতে অবৈধ কর্মকাণ্ডের মার্কেটপ্লেস। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্লেষণ করা নমুনার ৪৬ শতাংশের বেশি ক্ল্যাসিক কার্ডের তথ্য ডার্ক ওয়েবে ফাঁস হয়েছে। তথ্য ফাঁসের মূল কারণ গ্রাহকদের অসচেতনতা বা অবহেলা। ব্যাংক খাতের দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থার কথাও উঠে এসেছে গবেষণাটিতে।
বিজিডি ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইনসিডেন্স রেসপন্স টিম (সার্ট) নামের সরকারি সংস্থাটি সম্প্রতি ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। সার্টের সাইবার থ্রেট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রায় এক বছর ধরে এ-সংক্রান্ত গবেষণা করে। সার্ট সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অধীন সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে। তারা সাইবার নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে।
সার্টের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ডার্ক ওয়েবে দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যাংক কার্ডধারীর তথ্য ফাঁস হয়েছে।
সংস্থাটি দুই হাজারের মতো ব্যাংক কার্ড বিশ্লেষণ করেছে। এই বিশ্লেষণের আলোকে সার্ট জানিয়েছে, ক্ল্যাসিক ক্যাটাগরির ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ, গোল্ড ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ, প্লাটিনাম ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ ও প্রিপেইডের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ কার্ডের তথ্য ডার্ক ওয়েবে পাওয়া গেছে।
ডার্ক ওয়েবে ফাঁস হওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে সার্ট দেখেছে, অনেক কার্ডেরই পাসওয়ার্ড দুর্বল।
সংস্থাটি গ্রাহকের কার্ডের পাসওয়ার্ড, লেনদেন, ই–মেইলসহ অনেক তথ্য ডার্ক ওয়েবে পেয়েছে।
সার্টের পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, করোনা মহামারির পর থেকে দেশে কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। মানুষ অনলাইনে প্রচুর কেনাকাটা করছে। দুর্বল কম্পিউটিং সিস্টেম বা ডিভাইসের নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতায় অনেকের কার্ডের তথ্য ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে।
তারেক এম বরকতউল্লাহ আরও বলেন, বেশ কিছু ব্যাংকের নেটওয়ার্কিং পদ্ধতি, নিম্নমানের ডিভাইসের ব্যবহার, হালনাগাদ ব্যবস্থাপনা না থাকায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে নিজেদের শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। গ্রাহকদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি গ্রাহকদের নিজ থেকেই সতর্ক হতে হবে।
দেশে অনলাইন ব্যাংকিং, কার্ডের লেনদেন বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত মে মাস পর্যন্ত ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৭১ লাখ ৬৯ হাজার ১৫০টি, ক্রেডিট কার্ড ১৯ লাখ ৪১ হাজার ১৬২টি ও প্রিপেইড কার্ড ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ২৯০টি।
মে মাস পর্যন্ত ডেবিট কার্ডে ২৬ হাজার ৫০ কোটি, ক্রেডিট কার্ডে ২ হাজার ৩৭১ কোটি ও প্রিপেইড কার্ডে ১৭৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে প্রায়।