ডেটিং অ্যাপস আসলে কি বা কেন? কী হয় এই অ্যাপসে? দেখা যাচ্ছে, এসব অ্যাপসের মূল ব্যবহারকারী প্রায় সবাই বয়সে তরুণ। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা যে কোনো বয়সীরা বিনামূল্যে এখানে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এরপর যে যার পছন্দমতো ডেটিংয়ের জন্য মানুষ খোঁজেন।
এ প্রসঙ্গে সময় সংবাদকে এক ব্যবহারকারী বলেন, এগুলো গুগল বা প্লে স্টোরে বিনামূল্যেই পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্ট খুলতেও তেমন একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না। অ্যাপসগুলোর ফিল্টারিং সিস্টেম বেশ উন্নত। এখানে টাকা আদান প্রদানের কিছু বিষয় থাকে। পছন্দ হলে অনেকেই টাকার অফার দেয়।
নানারকম লোভনীয় সুবিধায় ভরপুর থাকে এই অ্যাপসগুলো। ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে পছন্দের এলাকা, বয়স, লিঙ্গ, উচ্চতা অর্থাৎ যেমন চান তেমনই সঙ্গী খোঁজে বের করতে পারবেন এখানে। আর মিলে গেলেই সরাসরি সাক্ষাৎ বা ডেটিংয়ের জন্য বাসায় আমন্ত্রণ। আবার অনেকেই আছেন, ডেটিং অ্যাপস ব্যবহার করে করছেন একাধিক প্রেম। ভালোবাসার নামে আদায় করছেন টাকা পয়সা।
প্রতারিত হওয়া একজন বলেন, আমার থেকে বিভিন্ন সময় একটি মেয়ে ৭৬ হাজার টাকা নিয়েছে। একটা সময় জানতে পারি ডেটিং অ্যাপসের মাধ্যমে সে মেয়ের আরও অনেকের সঙ্গেই সম্পর্ক আছে এবং সে সবার থেকেই এভাবে টাকা নিয়ে থাকে। এটাই তার ব্যবসা। ডেটিং অ্যাপস মূলত একটা শারীরিক সম্পর্কেরই জায়গা। পছন্দ হলে কখনো আমি তাদের বাসায় যাই, বা তারা আমার বাসায় আসে এমন।
আরেকজন সময় সংবাদকে বলেন, আমি কারো থেকে জোড় করে টাকা নিচ্ছি না। কেউ স্বেচ্ছায় টাকা দিতে চাইলে আমার তো টাকা নিতে সমস্যা নেই? আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। অনেক খরচ। বাবা-মা যে টাকা দেয় তা দিয়ে চলতে কষ্ট হয়ে যায়।
ডেটিং অ্যাপসকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক যেমন এসেছে হাতের নাগালে তেমনই অনেকেই এসব ব্যবহার করে খুলে বসেছেন প্রতারণার ফাঁদ। ডেটিংয়ের নামে বাসায় ডেকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি প্রতারিত হওয়া এক ব্যক্তি বলেন, আমি তাদের বাসায় যাওয়ার পর প্রায় ছয়জন লোক আমাকে টর্চার করা শুরু করে। তারা আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে বসে। এত টাকা আমার পক্ষে কোনোভাবেই দেওয়া সম্ভব না। আমি যখনই ওদের কথার নেগেটিভ উত্তর দিতাম, সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে মারধর শুরু করত।
ডেটিং অ্যাপস ব্যবহার করে প্রতারণা করা ৩ ব্যক্তিকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। এসব অ্যাপসের মাধ্যমে তরুণ তরুণীদের নানা ফাঁদে ফেলা হচ্ছে সে বিষয়টিও শিকার করেছেন তারা। তবে এমন অনেক প্রতারকরাই রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই এসব অ্যাপস ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে গোয়েন্দা বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, কিছু অ্যাপসের মাধ্যমে অনেকেই অর্থের বিনিময়ে দেখা করছেন, শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন। একটা সময়ে গিয়ে তারা প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন। এসব ব্যবহার করলে যে কেউ পারিবারিকভাবে কেলেঙ্কারির মুখে পড়তে পারেন। এগুলো থেকে আমাদের সবাইকে বিরত থাকতে হবে। পারিবারিক, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সবার উচিত সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা।
অ্যাপসগুলো নিয়ন্ত্রণে তেমন একটা পদক্ষেপ নেই সরকারী পর্যায়ে। এগুলো বন্ধে বিটিআরসিকে চিঠি দেওয়ার কথাও জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু চাইলেও এসব অ্যাপস নিয়ন্ত্রণে আনা যায় কি না সে প্রশ্নই ছিল প্রযুক্তিবিদ সালাউদ্দিন সেলিমের কাছে।
তিনি বলেন, যে কোনো খারাপ অ্যাপসের ব্যাপারে চাইলে গুগলকে রিপোর্ট করা যায়। তখন তারা এসব অ্যাপসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এ ছাড়া সব দেশের একটা ইন্টারনেট গেটওয়ে থাকে। চাইলে সেই গেটওয়ে থেকেও অ্যাপসগুলো বন্ধ করা যায়। আমাদের দেশে অ্যাপস চালানোর নির্দিষ্ট কোনো পলিসি নেই। যদি থাকত, তাহলে সে পলিসির বাইরে কোনো অ্যাপস দেশের ভেতর চালানো সম্ভব হতো না।
সন্তান ঘরে থাকা মানেই ভালো থাকা, ডিজিটাল যুগে এসে এই ধারণা পোষণ করা একেবারেই ভুল। ঘরে বসেই হয়তো আপনার সন্তান বা পরিচিতজন দেদার ব্যবহার করছে ডেটিং অ্যাপস। ফলে নৈতিক অধঃপতন যেমন এসেছে হাতের মুঠোয় তেমনই বেড়েছে প্রতারণার খপ্পরে পড়ার ঝুঁকি। তাই সুস্থ মস্তিষ্কে আপনাকেই ঠিক করতে হবে কোন পথে যাবেন? আর সচেতন হতে হবে অভিভাবকসহ সবাইকে।