পরিত্যক্ত পত্রিকা ও কার্ডবোর্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি করা যাবে ব্যাটারি, গ্যাস ফিল্টার এবং আগুন থেকে সুরক্ষার ইনসুলেটর। কার্বনের ছোট ব্লকের মধ্যে পরিত্যক্ত কাগজ পুড়িয়ে ব্যাটারি তৈরির তেমন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির (এনটিইউ) একদল বিজ্ঞানী। খবর দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।
এনটিইউর বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি পরিচালিত গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক লাই ছাং কুয়ান। তার দাবি অনুসারে, কেবল ২০২০ সালেই সিঙ্গাপুরে মোট উৎপাদিত বর্জ্যের এক-পঞ্চমাংশ ছিল পরিত্যক্ত কাগজ। বিশেষ করে কাগজের প্যাকেট, ব্যাগ ও কার্ডবোর্ড। গত ২৩ নভেম্বর দেয়া এক প্রেজেন্টেশনে তিনি বলেন, কাগজকে চার থেকে ছয়বার পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা যায়। প্রতিবার গুণগত মানের অবক্ষয় হওয়ার কারণে তা শেষে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ব্যবহারের অযোগ্য কাগজকে তখন ভস্মীভূত করে ফেলা হয়। এভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এনটিইউতে মেকানিক্যাল অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ান প্রফেসর লাই। তিনি দাবি করেন, আমরা সস্তা ও সহজলভ্য কিছুকে ব্যবহার করে মূল্যবান কিছু তৈরি কছি। গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ না ঘটিয়ে পরিত্যক্ত কাগজকে কার্বন ফোমে রূপান্তর করছি। কার্বন ব্লকগুলোকে ১ হাজার ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে উত্তপ্ত করা হয়। ফলে তা ভস্মীভূত হয় না। তার বদলে নিখাদ কার্বনে পরিণত হয়। কাগজের ব্লকগুলো পরে কার্বন অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, অ্যানোড ব্যটারির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত। সাধারণত কার্বন অ্যানোড তৈরি করা হয় জীবাশ্ম জ্বালানিপ্রাপ্ত গ্রাফাইট দিয়ে। গ্রাফাইটের বদলে কাগজের ব্যবহার একদিকে পরিবেশের দূষণ কমাতে ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে ঘটবে বর্জ্যের যথাযথ ব্যবহার। গবেষণায় দেখা যায়, এভাবে নির্মিত প্রতি এক গ্রামের অ্যানোড দণ্ড ১০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার সক্ষমতার ব্যাটারি তৈরিতে যথেষ্ট। একটা সাধারণ স্মার্টফোনের জন্য লাগবে ৪০ গ্রাম, বর্তমান বাজারের গ্রাফাইটের ব্যাটারিও এই সক্ষমতার। কাগজে নির্মিত অ্যানোড ১ হাজার ২০০ বার চার্জ করা যাবে। বর্তমান বাজারে প্রচলিত অ্যানোডের চেয়ে এ সংখ্যা দ্বিগুণ।
আশাতীত সাফল্যকে কাজে লাগাতে গবেষক দল প্যাটেন্টের জন্য আবেদন করেছেন। আগামী পাঁচ বছর এ গবেষণাকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে চান তারা। এ আবিষ্কারে মোটরগাড়ি শিল্প বিশেষভাবে উপকৃত হবে। বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যাটারির ব্যবহার বাড়াতেও অবদান রাখবে। অধ্যাপক লাই দাবি করেন, আগামী দিনে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বৈদ্যুতিক গাড়ির চেসিসেই এ অ্যানোড ব্যবহার করতে পারবে। এতে গাড়ির ওজন অনেক কমবে। বর্তমান কার্বন অ্যানোডের চেয়ে নতুন আবিষ্কৃত অ্যানোড চার গুণ শক্তিশালী। যদিও এর ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিতে গবেষকরা এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
অধ্যাপক লাই আশা প্রকাশ করেন, আগামী বিশ্বের জন্য পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ব্যাটারির চাহিদা অনেক বেশি জরুরি। সেই চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম এ আবিষ্কার। গবেষণার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও অধ্যাপক হিনেসট্রোজা মনে করেন, বর্জ্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে ইলেকট্রোডের মতো উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন নিঃসন্দেহে দারুণ আবিষ্কার। এ আবিষ্কার গবেষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসবে।