দেশের ৪১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটির অবৈধ ক্যাম্পাস আছে এবং কার্যক্রম চালাচ্ছে অননুমোদিত উপায়ে।
প্রতিষ্ঠার একযুগ পার করার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় আছে চারটি। অপর দুটিতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) নিয়ে দ্বন্দ্বের পাশাপাশি আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে। এছাড়া ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি তথা চ্যান্সেলর নিযুক্ত উপাচার্য নেই।
জানতে চাইলে সংস্থাটির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ যুগান্তরকে বলেন, ভর্তি মৌসুম সামনে রেখে জনস্বার্থে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি সবসময় দেওয়া হয়, যাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রতারিত না হন বা বিপাকে না পড়েন। ওই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান অবৈধ ঘোষিত এবং আগে থেকেই ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে চলছে সেগুলোর ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা প্রয়োজন। আর সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সনদে স্বাক্ষর করেন উপাচার্য এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তাই যেসব প্রতিষ্ঠানে উপাচার্য নেই সেখানেও শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার আগে চিন্তা করতে হবে। কেননা, বৈধ উপাচার্যের স্বাক্ষরবিহীন সনদ চাকরিজীবনে কাজে আসবে না।
আগামী দুএকদিনের মধ্যে এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে ইউজিসি। এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে- প্রথমেই অবৈধ ক্যাম্পাস ও অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী হিসাবে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ আছে। এগুলো হচ্ছে, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভর্তি বন্ধ থাকার নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে আছে ৫টি। সেগুলো হলো-কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আশা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি। এছাড়া বিওটিতে দ্বন্দ্ব আর আদালতে বিচারাধীন মামলা নিয়ে আছে তিনটি। তবে এরমধ্যে ইবাইস ও ব্রিটানিয়া দুই ক্যাটারিতে আছে। আর তৃতীয়টি হচ্ছে ঢাকার সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
ইউজিসি বলছে, ইবাইস, আমেরিকা বাংলাদেশ এবং ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা পরিচালনায় কোনো ‘আইনগত ভিত্তি’ দেওয়া উপাচার্য উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুমোদিত কোনো ক্যাম্পাস ও ঠিকানা এবং চ্যান্সেলর তথা রাষ্ট্রপতির নিয়োগ দেওয়া উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। এক কথায় আইনস্বীকৃত বা বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। এ তিন ইউনিভার্সিটির একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা ও ফলাফল এবং একাডেমিক সনদের আইনগত ভিত্তি নেই।
ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে বলা হচ্ছে, ২০১৭ সাল থেকে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্য এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। চ্যান্সেলরের নিয়োগ দেওয়া বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতি, অপ্রতুল শিক্ষক সংখ্যা, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, শিক্ষা সহায়ক ক্যাম্পাসের অনুপস্থিতি, লাইব্রেরিতে প্রয়োজনীয় পাঠ্য বইয়ের অপ্রতুলতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির সব শিক্ষাক্রমের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। এসব কারণে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি।
চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে প্রধান অভিযোগ হচ্ছে সরকারের বারবার দেওয়া আলটিমেটাম লঙ্ঘন করে ভাড়া বাড়িতে বা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা। স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাসহ সব কার্যক্রম স্থানান্তরে ব্যর্থতার দায়ে ইউজিসি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেছে ১ জানুয়ারি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় চারটি ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ করাতে পারবে।
এদিকে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত উপাচার্য নেই। দেশে বর্তমানে ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এগুলোর মধ্যে ১০২টি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে। যারমধ্যে রাষ্ট্রপতি বা চ্যান্সেলরের নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য আছে ৭০টিতে। বাকি ৩২টিতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন নামে উপাচার্য বসিয়ে রেখেছে। কোথাও বলা হচ্ছে ‘ডেজিগনেটেড’ উপাচার্য, আবার কোথাও ‘ভারপ্রাপ্ত’।
সূত্র জানায়, বেতন দেওয়ার ভয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ উপাচার্য নিয়োগ করে না। তাছাড়া অনেক স্থানে উপাচার্যরা বিওটির কথামতো চলেন না। সে ক্ষেত্রে ইচ্ছামতো বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় পরিচালনা সম্ভব হয় না। এসব কারণে উপাচার্য নিয়োগ না করার প্রবণতা বেশি বলে ইউজিসির কর্মকর্তারা জানান। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা ইউজিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।