অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার লাগাম টানা যাচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি ব্যবসা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এক্ষেত্রে বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডির রমরমা ব্যবসা চলছে। সম্প্রতি হুন্ডি ব্যবসার দায়ে নোয়াখালীর চাটখিলে বিকাশের এক এজেন্টসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, শাহাদাৎ হোসেন (২৩) ও বলাই চন্দ্র দাস (২৬)। গ্রেফতারকৃতরা দুবাই, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর এবং হংকংসহ বিভিন্ন দেশের হুন্ডি ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এর আগেও বিভিন্ন সময় হুন্ডি ব্যবসার অভিযোগে বেশ কয়েকজন বিকাশ এজেন্ট গ্রেফতার হয়েছেন। গত বছরের (২০২২) সেপ্টেম্বরে রাজধানীর শাহজাদপুর থেকে মো. আবুল হাসান নামে এক বিকাশ এজেন্টকে গ্রেফতার করে সিআইডি। বিকাশের এজেন্টশিপ নিয়ে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা করতেন তিনি। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতেও বিভিন্ন জেলা থেকে আটজন বিকাশ এজেন্টকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। রাজশাহী, পাবনা এবং ময়মনসিংহ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সূত্র জানায়, হুন্ডির সাথে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৩১ জন বিকাশ এজেন্টের হিসাব জব্দ করে এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও হুন্ডি বিষয়ক ৩৪টি লেনদেনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে সংস্থাটি। বিএফআইইউ হুন্ডি ও ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং সংশ্লিষ্ট ১১টি গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রেরণ করেছে।
এছাড়াও হুন্ডি বিষয়ক ২টি সন্দেহজনক লেনদেনের প্রতিবেদন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধ ফরেক্স, বেটিং এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন সংশ্লিষ্ট ৫১টি ওয়েবসাইট, ১২টি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ এবং ১৫টি অ্যাপসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে বিএফআইইউ।
জানা গেছে, মুদ্রাপাচার ও ট্রেড মিস ইনভয়েসিং সংক্রান্ত ২টি গোয়েন্দা প্রতিবেদন সিআইডিতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও একই বিষয়ে ৯টি সন্দেহজনক প্রতিবেদন পর্যালোচনাধীন রয়েছে।
বিএফআইইউ জানিয়েছে, মোরাল সুয়েশন করে আনব্লকড করে দেওয়া ২১৮ টি হিসাবে কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স বৈধ পথে দেশে এসেছে। ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্সের তথ্য মতে, এসব হিসাবের মাধ্য ১ কোটি ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯১ টাকা সমপরিমাণ রেমিট্যান্স বৈধ পথে দেশে এসেছে।
এদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিএফআইইউর নজরদারির কারণে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে হুন্ডি ব্যবসার চিত্র ধরা পড়েছে। সম্প্রতি বিএফআইইউ কিছু হিসাবের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এসব হিসাবে হুন্ডিতে লেনদেনের অস্তিত্ব পেয়েছে সংস্থাটি।
জানতে চাইলে বিএফআইইউর উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, হুন্ডি ব্যবসা, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং জুয়ার সাইট বন্ধে কাজ করছে বাংলাদেশ ফাইন্যন্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স।
এদিকে সম্প্রতি আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সঙ্গে ব্র্যান্ড পার্টনারশিপ চুক্তি করেছে বিকাশ। ফলে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের স্পন্সর হয়েছে বাংলাদেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠানটি। এএফএ-এর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। এশিয়া অঞ্চলে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে সংস্থাটির বিপণন বিভাগ এই অঞ্চলে তাদের ব্র্যান্ড সম্প্রসারণের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে এএফএ। আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের স্পন্সর হলেও কিভাবে লিওনেল মেসির দলের সঙ্গে বিকাশ পারস্পরিক সহযোগিতা করবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। এছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল অর্থসংকটে ভুগলেও ভিনদেশি একটি দলের স্পন্সর হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।