সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করেছে ই-লজিস্টিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান পেপারফ্লাই। এতে আটকে পড়েছে তাদের কাছে থাকা অনলাইনভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নগদ অর্থ ও গ্রাহকদের উদ্দেশে ডেলিভারির জন্য জমা দেওয়া পার্সেল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্যোক্তাদের অন্তত ৪০ লাখ টাকা আটকে আছে এ প্রতিষ্ঠানের কাছে। এ অবস্থায় নিজ নিজ ব্র্যান্ডের সুনাম ক্ষুণ্নের পাশাপাশি অর্থ ফিরে পাওয়া নিয়েও উদ্বিগ্ন উদ্যোক্তারা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার হাসান ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের পরিচালক হওয়ায় বিষয়গুলোর সুরাহা হওয়া নিয়েও আশাবাদী হতে পারছেন না তারা। যদিও ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমালের বিশ্বাস, এসব বিষয়ের সমাধান করবে পেপারফ্লাই।
২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে পেপারফ্লাই। ২০২১ ও ২২ সালে ভারতভিত্তিক ই-লজিস্টিকস খাতের ডিজিটাল সলিউশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইকম এক্সপ্রেস থেকে দুই দফায় ২০২ কোটি টাকা বিনিয়োগও পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে এর এক বছর যেতে না যেতেই গত সপ্তাহ থেকে কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে তারা। পার্সেল সরবরাহের জন্য মার্চেন্টদের থেকে নতুন বুকিং বন্ধের পাশাপাশি আগে থেকে জমা হওয়া পার্সেলও ডেলিভারি হচ্ছে না। সেইসঙ্গে আগের পার্সেল ডেলিভারির পর গ্রাহকদের থেকে সংগ্রহ করা অর্থও দেওয়া হচ্ছে না মার্চেন্টদের।
পেপারফ্লাইয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মার্চেন্টদের অন্তত ৪০ লাখ টাকা আটকে আছে প্রতিষ্ঠানটিতে। যারা মাঠ পর্যায়ে পার্সেল ডেলিভারি করতেন, তারাই মূলত গ্রাহকদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে তারা সেই অর্থ আর অফিসে জমা দেননি। ডেলিভারি বয় এবং মাঠ পর্যায়ের অনেক কর্মী অফিসের সরঞ্জাম নিয়ে গেছেন। এই টাকা আর পেপারফ্লাইয়ে ঢুকবে বলে মনে হয় না। অনেকে মার্চেন্টদের পার্সেল নিয়ে চলে গেছে। আর করপোরেট গ্রাহকদের বকেয়া পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
‘রাফার’ নামক একটি এফ-কমার্স প্ল্যাটফর্মের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ রাফসান তার গ্রাহকদের পার্সেল ডেলিভারির জন্য সম্প্রতিই কাজ শুরু করেছিলেন পেপারফ্লাইয়ের সঙ্গে। আটটি পার্সেল দিয়েছিলেন, যার মধ্যে দুটি পার্সেল পাওয়া যাচ্ছে না। এ উদ্যোক্তা বলেন, সপ্তাহখানেক আগে পেপারফ্লাইকে পার্সেল দেওয়া শুরু করি। আটটি পার্সেলের মধ্যে ছয়টি পার্সেল ডেলিভারি হয়েছে। বাকি দুটির খবর নেই। যেগুলো ডেলিভারি হয়েছে, সেগুলোর টাকাও পাইনি।
অন্যদিকে, ‘বই সদাই’ নামক একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের পার্সেল নিয়েছিল পেপারফ্লাই। সেগুলোর মধ্যে অনেক নষ্ট হলে উভয়পক্ষ বৈঠক করে বই সদাইকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয় প্রতিষ্ঠানটি। এর কয়েক মাস পার হলেও সেই অর্থ পায়নি বই সদাই।
বই সদাইয়ের প্রধান নির্বাহী বেলাল হোসেন বলেন, মাত্র দেড় মাস পেপারফ্লাইয়ের সঙ্গে কাজ করি আমরা। তাদের বাজে সেবার কারণে আর এগোইনি। আমাদের ৭০-৮০টি পার্সেল তারা নষ্ট করে ফেলে। মাস দুয়েক আগে তারা আমাদের সঙ্গে বৈঠক করে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। এটা কিন্তু আমাদের পণ্যের কেনা দাম হিসাব করে ঠিক হয়। তারপরও এই টাকা পাইনি।
ই-ক্যাবে অভিযোগের বিষয়ে জবাবে বেলাল বলেন, আমরা এবং পেপারফ্লাই উভয়েই ই-ক্যাবের সদস্য। তাই ই-ক্যাব থেকে একটা সমাধান পাওয়ার আশা রাখি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যাদের কাছে অভিযোগ করব, সেখানেই শাহরিয়ার সাহেব বসে আছেন। তিনি ই-ক্যাবের পরিচালক। ই-ক্যাবের ফেসবুক গ্রুপে পেপারফ্লাই নিয়ে কোনো পোস্ট দিলে সেগুলো প্রকাশিত হয় না।
এসব বিষয়ে পেপারফ্লাইয়ের তিন অংশীদার প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার হাসান, চিফ অপারেটিং অফিসার রাজিবুল ইসলাম এবং চিফ মার্কেটিং অফিসার রাহাত আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
তবে পেপারফ্লাই এসব সমস্যার সমাধান করবে বলে বিশ্বাস করেন ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। তিনি বলেন, আমি যতদূর জানি তারা কার্যক্রম বন্ধ করেছে, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি। আমার বিশ্বাস, এ ধরনের যত ইস্যু আছে, তারা সমাধান করে দেবে।