চাকরিজীবী আমির হোসেন। কিছুদিন আগেও ৬৯৮ টাকায় বাংলালিংকের প্যাকেজ কিনতেন। পেতেন ৩০ দিন মেয়াদি ৩০ জিবি ইন্টারনেট, সঙ্গে ৮০০ মিনিট। ব্যবহারের মধ্যে মোবাইলে ফেসবুকে থাকা, ই-মেইল চেক করা। আর কিছু সময় ইউটিউবে নাটক দেখা। চাকরির জন্য সময় বের করা কঠিন। সামান্য সময়ের জন্য ক্লান্তি কাটাতে এই প্যাকেজ কিনে ব্যবহার করতেন। এই প্যাকেজ থেকে আগে ডেটা ও মিনিট থেকে যেত। বর্তমানে ৮৮৯ টাকার প্যাকেজ কিনছেন। ৩০ দিন মেয়াদি ৪০ জিবি, সঙ্গে এক হাজার মিনিট। আমির হোসেনের নেট ব্যবহার আগের মতো রয়েছে। কিন্তু মাসের অর্ধেক সময় পাওয়ার পর ইন্টারনেট ‘হাওয়া’ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলালিংকের এই গ্রাহকের। একই অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাহিদ ইমতিয়াজের। তিনি শুধু ফেসবুক ব্যবহার ও মাঝে মধ্যে ফেসবুকে ভিডিও দেখেন। এতে ১৫-১৮ দিনেই হাওয়া হয়ে যায় ৩০ দিনের প্যাকেজ। মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে বাংলালিংকের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের এই ধরনের বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব জানিয়েছেন, আগে বাংলালিংকের ৩০ দিন মেয়াদি দশ জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে ২৩-২৫ দিন ব্যবহার করা যেত। অথচ একই প্যাকেজ এখন ১৫ দিন না যেতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে ব্যাখা চাইলে কলসেন্টার থেকে বলা হয়েছে, ব্যবহারের ওপর নির্ভর করেই এমবি শেষ হচ্ছে। অথচ নেট ব্যবহার আগের তুলনায় কমিয়েছি। কারণ প্রত্যেকটা ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম বেড়েছে। আদতে মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক কৌশলে গ্রাহকদের থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে; যা সুষ্ঠু মনিটরিং হচ্ছে না। আমরা গ্রাহকরা নিরুপায়।
অন্যদিকে, চাকরিজীবী আমির হোসেন বলেন, ‘আমি গত সাড়ে আট বছর ধরে বাংলালিংকের ইন্টারনেট কিনে ব্যবহার করছি। আগে ৬৯৮ টাকার ৩০ দিন মেয়াদি ৩০ জিবি ইন্টারনেট, সঙ্গে ৮০০ মিনিট প্যাকেজ নিতাম। ইচ্ছামতো পুরো মাস ব্যবহার করলেও শেষ হতো না, কিছু ডেটা থেকে যেত। অথচ বর্তমানে ৮৮৯ টাকায় ৩০ দিন মেয়াদি ৪০ জিবি ইন্টারনেট, সঙ্গে এক হাজার মিনিট হেবি বান্ডেল প্যাকেজ ব্যবহার করছি। অথচ এই প্যাকেজে ২০ দিন যেতে না যেতেই ডেটা হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। বাংলালিংকের
এমন প্রতারণায় বিস্মিত হচ্ছি। দেশ ডিজিটাল হলেও ডিজিটাল প্রতারণা শনাক্ত হচ্ছে না, শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে না।’
শুধু ইন্টারনেট হাওয়া নয়, বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক নিয়েও অভিযোগ করেন আহসান হাবীব। তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে গেলে নেট থাকে না। ফোরজি সিগন্যাল থাকলেও ভিডিও দেখতে বা কোনো কিছু আপলোড বা ডাউনলোড দিতে গেলেও হচ্ছে না। এমনকি ফেসবুক পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় না। ফোরজি চালু হলেও গতি নেই। এখনও ভয়েস কলে কলড্রপ ভোগান্তি আবার ডেটা কলে রিকানেকশন হচ্ছে।’
একই অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাহিদ ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, ফোরজি চালু হলেও বাংলালিংকের সেবার মান বাড়েনি। উল্টো ব্যয় বেড়েছে। প্রায় সময় ফোনে নেটওয়ার্ক ধীরগতিতে কাজ করে। ফোরজি সিগন্যাল থাকলেও ফোরজি সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ঢাকার বাইরে ট্যুরে গেলে নেটওয়ার্ক ভোগান্তি আরও বাড়ে।
সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সময়ে বাংলালিংকের অভিযোগ তুলনামূলক বাড়ছে। ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে কেবল আপলোড বা ডাউনলোডের যেকোনো একটিতে ভালো সেবা দিলে গ্রাহক প্রকৃত সেবা পায় না। আপলোড ও ডাউনলোড দুটি ক্ষেত্রেই নির্ধারিত মানের সেবা প্রদানে বাধ্য মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো, যদিও অপারেটরগুলো তা দিচ্ছে না। এছাড়া বর্তমান সময়ে বাণিজ্যিক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার যে পরিমাণ বাড়ছে, আগামীতে তা বহুগুণ বাড়বে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, বাংলালিংকের বর্তমান মোবাইল ফোন গ্রাহক চার কোটিরও বেশি। অপারেটরটির গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও সেবার মান ধরে রাখতে না পারায় গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা বাজে হচ্ছে। প্রযুক্তির দিকে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সারা বিশ্বে বাণিজ্যিক খাত সমৃদ্ধ হচ্ছে। মানুষ এখন কাজের প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
অপরদিকে, গ্রাহকদের মতে, অসহ্য কল ড্রপ ও কথা বোঝা না যাওয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেটে ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন বাংলালিংক গ্রাহকরা। অন্যদিকে অধিকাংশ গ্রাহকেরই অভিযোগÑফোনে ডেটা প্যাকেজ চালু করলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এমবি শেষ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকার ভেতরে নেটওয়ার্ক পারফরমেন্সে অন্যান্য অপারেটরের তুলনায়ও পিছিয়ে। আবার মফস্বলের অনেক জায়গায় নেটওয়ার্ক থাকা বা হঠাৎ হঠাৎ নেটওয়ার্ক না থাকার অভিজ্ঞতা কথাও জানিয়েছেন গ্রাহকরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট রেগুলেটরি অফিসার তৈমুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি জবাব দেননি। বক্তব্যের বিষয় লিখে হোয়াসঅ্যাপে বার্তা দেয়া হলেও জবাব দেননি।
এই বিষয়ে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অপারেটরগুলোর অনেকগুলো সমস্যা থাকলেও তা সঠিক মনিটরিং হচ্ছে না। বিটিআরসি অপারেটরগুলোর সার্ভিস নিরীক্ষার জন্য কোয়ালিটি অব সার্ভিস চালু করলেও তার আদলে গ্রাহকদের কোনো কাজে আসছে না। সারাদেশে কোয়ালিটি অব সার্ভিসে কোন অপারেটরের কোয়ালিটি কেমন তা যদি সঠিক করা হলে গ্রাহকদের উপকার হতো।
বিটিআরসি’র প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৮৬ লাখ। আর ইন্টারনেট গ্রাহক ১২ কোটি ৫৪ লাখ। এর মধ্যে বাংলালিংকের সারাদেশে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার।