ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এতোটা বিকাশ হতো না। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে হুমায়ুন আহমেদ এর মতো সাহিত্যিকদেরও আত্মপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি হতো না। পশ্চিম বাংলায় আধুনিক বাংলাসাহিত্য ও বাংলা প্রকাশনার উন্মেষ, বিকাশ সাধিত হলেও বিশ্বের ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষীর জন্য বাংলাদেশই হচ্ছে বাংলা ভাষার রাজধানী। বাংলাদেশই ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলার এনকোডিং ও কিবোর্ডের মান প্রমিত করেছে। বাংলা ভাষার ১৬টি টুলস উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করছে।
মন্ত্রী গতকার শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অন্যদিন হুমায়ুন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ উপলক্ষ্যে অন্যদিন ও এক্সিম ব্যাংক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে, অধ্যাপক মো: জাফর ইকবাল, সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মো: আবদুর বারী এবং নবীন সাহিত্যিক মাহবুব ময়ূখ রিশাদ বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী নতুন প্রজন্মকে গল্প উপন্যাস তথা সাহিত্য বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টিতে হুমায়ুন আহমেদের অবদান তুলে ধরে বলেন, বাংলা সাহিত্য বৈশ্বিক নেতৃত্বের আসনে উপনীত হওয়ার জন্য হুমায়ুন আহমেদের অবদান চির অম্লান হয়ে থাকবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল প্রযুক্তিতেও বাংলাভাষার অভাবনীয় বিকাশ ঘটেছে। পৃথিবীর এমন কোন ডিজিটাল প্রযুক্তি নাই যেখানে বাংলা লেখা যাবে না বলে উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার এই উদ্ভাবক। হুমায়ুন আহমেদ বেঁচে থাকলে জাতি আরও অনেক কিছু পেত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, হুমায়ুন আহমেদের পথ ধরে বিশাল সাহিত্য গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে।
তারা বাংলা সাহিত্যেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্য হিসেবে পরিণত করবে বলে সাবেক নিপুন সম্পাদক ও নব্বইয়ের দশকে দেশের প্রথম ডিজিটাল সংবাদ সংস্থা আবাস এর প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাফা জব্বার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রকাশকদের বড় সমস্যার নাম মার্কেটিং। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ফলে সে সংকট আজ কেটে গেছে।
দেশে ডেস্কটপ পাবলিশিংয়ের জনক মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডেস্কটপ পাবলিশিংয়ের আগে দেশে সীসার হরফ তার পর ফটো টাইপসেটার ছিল মূদ্রণ শিল্পের প্রযুক্তি। পৃথিবীতে প্রথম দেশ বাংলাদেশই ট্রেসিং পেপারে প্রকাশনার কাজ করেছে। এজন্য দীর্ঘ প্রচেষ্টায় আমি সফলতা পেয়েছি। এরই ফলে ৮ পৃষ্ঠার একটি পত্রিকা প্রকাশ করতে যেখানে ১২০জন মানুষের প্রয়োজন হতো সেখানে মাত্র ২০জন মানুষ ৮ পৃষ্ঠার পত্রিকা প্রকাশের জন্য যথেষ্ট হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকাশনা শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়। এটি আমার জন্য সৌভাগ্যের যে দেশের কাগজে প্রকাশিত বইয়ের শতভাগ আমার তৈরি অক্ষর দিয়ে ছাপা হয়। কাগজের বইয়ের পাশাপাশি ডিজিটাল বই প্রকাশে এগিয়ে আসতে প্রকাশকদের পরামর্শ দেন মন্ত্রী।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, প্রথম এবং দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব মিস করে শতশত বছর প্রযুক্তিতে পশ্চাদপদ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিশ্বে অনুকরণীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে দেশ প্রেমিক প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসার আাহ্বান জানান মন্ত্রী। পরে মন্ত্রী বিজয়ীদের মধ্যে হুমায়ুন সাহিত্য পুরস্কার হস্তান্তর করেন।
হুমায়ুন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ পুরস্কৃত হয়েছেন দুই প্রজন্মের দুই সাহিত্যিক। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য এবার পুরস্কার পেয়েছেন ইমদাদুল হক মিলন। এছাড়া নবীন সাহিত্য বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন মাহবুব ময়ূখ রিশাদ। ২০১৫ সালে শুরু হয় ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’। ২০১৫ সালে এ দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছিলেন যথাক্রমে শওকত আলী ও সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম। ২০১৬ সালে হাসান আজিজুল হক ও স্বকৃত নোমান, ২০১৭ সালে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও মোজাফ্ফর হোসেন, ২০১৮ সালে রিজিয়া রহমান ও ফাতিমা রুমি, ২০১৯ সালে রাবেয়া খাতুন ও সাদাত হোসাইন, ২০২০ সালে হাসনাত আবদুল হাই ও নাহিদা নাহিদ, ২০২১ সালে সেলিনা হোসেন ও ফাতেমা আবেদীন এবং ২০২২ সালে পুরস্কৃত হয়েছেন আনোয়ারা সৈয়দ হক ও মৌরি মরিয়ম।