এক বছর ধরে করা গবেষকরা আইফোনের সঙ্গে অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহার করে পারকিনসন’স রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্তদের পর্যবেক্ষণ করেছেন।
পারকিনসন’স রোগের লক্ষণ ধরতে পারে অ্যাপল ওয়াচ: গবেষণা
পারকিনসন’স রোগের লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে অ্যাপল ওয়াচ— এমনই তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, পারকিনসন’স রোগের লক্ষণ শনাক্ত করার পাশাপাশি এ রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা দিতে পারে স্মার্টওয়াচটি।
এ গবেষণার জন্য আইফোনের সঙ্গে অ্যাপল ওয়াচের সংযোগ ঘটিয়ে এক বছর ধরে পারকিনসন’স রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত রোগীদের পর্যবেক্ষণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ রচেস্টার মেডিক্যাল সেন্টার’-এর নিউরোলজিস্টরা।
এতে দেখা যায়, আক্রান্ত রোগীদের হাঁটার ধরন বা কাঁপুনির মতো লক্ষণগুলো পরোক্ষ উপায়ে ট্র্যাক করতে পারে স্মার্টওয়াচটি। এ ছাড়া, ভয়েস রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে কারো কথা বলা সংশ্লিষ্ট সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন খুঁটিনাটিও তুলে ধরে এটি।
“এ ধরনের ডিজিটাল পদ্ধতিগুলো পারকিনসন’স রোগে আক্রান্ত রোগীদের অগ্রগতি দেখানোর পাশাপাশি বাস্তবনির্ভর সমাধানের প্রতিশ্রুতিও দেয়,” বলেন ‘ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার মেডিকাল সেন্টার’-এর নিউরোলজির সহযোগী অধ্যাপক জেমি অ্যাডামস।
“গবেষণায় দেখা যায়, স্মার্টওয়াচ ও স্মার্টফোন থেকে পাওয়া ডেটা দূর থেকেই এই রোগের একাধিক ডোমেইনের সম্ভাব্য পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে, যা ভবিষ্যতে বিভিন্ন থেরাপির কার্যকারিতা মূল্যায়নেও সহায়ক হতে পারে।”
“পার্কিনসন’স রোগের ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলোয় ভবিষ্যতে বিভিন্ন অর্থবহ ডিজিটাল পরিমাপক ব্যবহারের কাছাকাছি নিয়ে যায় আমাদের এ গবেষণাটি, যা রোগীর থেরাপি সংশ্লিষ্ট বিকাশের গতি বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সম্ভাবনাও দেখাচ্ছে।”
ডিভাইসটির সংগ্রহ করা ডেটায় দেখা গেছে, পারকিনসন’সের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত রোগীদের চলাফেরা অনেক কমে আসে ও তাদের কথা বলার সময় কম্পনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাতে সামান্য পরিবর্তনও হয়।
এ ছাড়া, রোগীদের বাহু ঘোরানোর প্রবণতা কমে যাওয়ার বিষয়টিও শনাক্ত করেছিল স্মার্টওয়াচটি, যা এ রোগের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের দৈনন্দিন কায়িক ব্যায়ামের একটি রূপ।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ‘এনএইচএস’-এর তথ্য অনুসারে, পারকিনসন’স রোগের মূল লক্ষণগুলো হল— কাঁপুনি, যা সাধারণত হাতে শুরু হয়। আর হাত-পা যখন বিশ্রাম নেয় তখন এমন কাঁপুনি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে; চলাচলের গতি কমে যাওয়া, যা ‘ব্র্যাডিকিনেসিয়া’ নামেও পরিচিত। আর এটি শারীরিক গতিবিধিকে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে অনেক কমিয়ে দেয়, যার ফলে নিত্যদিনের বিভিন্ন কাজ আরও জটিল হয়ে ওঠে।
এ ছাড়া, পেশী শক্ত হওয়া বা অনমনীয়তাও এ রোগের একটি লক্ষণ, যেখানে পেশীগুলো টান লাগার কারণে ঘুরে বেড়ানো ও মুখের অভিব্যক্তি তৈরির কাজ জটিল হয়ে ওঠে। এর ফলে পেশীতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা ‘ডাইস্টোনিয়া’ নামেও পরিচিত।
এ গবেষণার ফলাফল উঠে এসেছে ‘ইউজিং এ স্মার্টওয়াচ অ্যান্ড স্মার্টফোন টু অ্যাসেসমেন্ট আর্লি পারকিনসন’স ডিজিজ ইন দ্য ওয়াচ-পিডি স্টাডি ওভার দ্য টুয়েলভ মান্থস’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘এনপিজে পারকিনসন’স ডিজিজ’-এ।