বাংলাদেশের মানুষ প্রথমবারের মতো মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পায় সিটিসেলের মাধ্যমে। প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের (পিবিটিএল) এ প্রতিষ্ঠান প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু করে। এটি দেশের মানুষকে প্রথম মোবাইল ফোন সেবা দিয়ে প্রযুক্তিগতভাবে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল। তবে, এর এগিয়ে যাওয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় নানা সংকট ও সমস্যা। এ সময় সিটিসেলের কাছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির বিপুল বকেয়ার বিষয়টিও সামনে আসে। ফলে ২০১৬ সালে সরকারের পক্ষ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি সিটিসেল।
কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সিটিসেলের পরিষেবা জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়। এর পেছনে তৎকালীন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
কোম্পানির মালিকানায় বিএনপির সাবেক সিনিয়র নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের পরিবারের সংশ্লিষ্টতা থাকায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সম্মুখীন হন তারা। কিন্তু এখন সিটিসেল আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে ফের গ্রাহক সেবায় ফিরতে চাচ্ছে। এজন্য লাইসেন্সসহ তরঙ্গ বরাদ্দ পেতে বিটিআরসির কাছে আবেদনও করেছে তারা।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে লাইসেন্স ফেরত পেতে আবেদন করেছে পিবিটিএল। আবেদনপত্রে বিগত আট বছর ধরে পক্ষপাতদুষ্ট, অপ্রত্যাশিত ও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সিটিসেল বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে নির্ধারিত সময়ে বকেয়া পরিশোধের পরও কোম্পানির মালিকানায় ভিন্ন মতের রাজনৈতিক ব্যক্তির অংশ থাকায় বিটিআরসি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তরঙ্গ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয় বলেও অভিযোগ করা হয় সেখানে।
এতে আরও বলা হয়েছে, পিবিটিএলের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে জমা দেওয়া তথ্য ও প্রমাণগুলো বিবেচনা করা হয়নি। এ কারণে স্বেচ্ছাচারী ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদনপত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
লাইসেন্স ফেরত পেলে খুব শিগগিরই সবকিছু গুছিয়ে গ্রাহক সেবায় ফেরার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন প্যাসিফিক টেলিকমের হেড অব রেগুলেটরি ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স নিশাত আলি খান।
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিটিসেলের নেটওয়ার্ক বন্ধ করা হয়েছিল। তারা (বিটিআরসি) নিজেরাই হঠাৎ কোম্পানিতে এসে সুইচ অফ করে দিয়ে যায়। আমরা লাইসেন্সের জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করেছি। চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সিটিসেলের লাইসেন্স দিতে কোনো আপত্তি নেই। তবে, আইনগত দিকগুলো বিবেচনা করতে হবে।’
‘গ্রাহক সেবায় ফিরতে যুগের সঙ্গে মানানসই ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে’ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘লাইসেন্স ফেরত পেলে অপারেশনাল কাজগুলোর দিকে মনোযোগ দেব। আগে সিটিসেল সিডিএমএ (কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস) প্রযুক্তি ব্যবহার করত। বর্তমানে জিএসএম, ৪-জি, ৫-জি প্রযুক্তি জনপ্রিয় হয়ে যাওয়ায় সিডিএমএ প্রায় বিলুপ্ত। আমরাও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করব। তবে, এক্ষেত্রে স্বল্প লাভে গ্রাহকসেবা নিশ্চিতের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। আমরা সার্বিকভাবে গ্রাহক সেবায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’