বিশ্বজুড়ে ধীর হয়ে এসেছে স্মার্টফোনের বাজার প্রবৃদ্ধি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ইউনিট। এ সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ২ শতাংশ বেশি। টানা তিন প্রান্তিক ধরে স্মার্টফোন বাজারে প্রবৃদ্ধির হার ধীরগতিতে বেড়েছে। এ সময় বাজার খুব বেশি সম্প্রসারণ হয়নি, আবার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেও যায়নি। বাজার গবেষণা সংস্থা ক্যানালিসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। খবর টেকস্পট।
স্মার্টফোন বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপল ও স্যামসাং এখনো বাজারের শীর্ষ দুটি অবস্থান ধরে রেখেছে, তবে সামগ্রিকভাবে স্মার্টফোন শিল্পের গতি এখন অনেক মন্থর।
ক্যানালিস জানিয়েছে, স্মার্টফোন শিল্পে চলমান ধীরগতির পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। সংস্থাটির মতে, ‘রিপ্লেসমেন্ট সাইকেল’ বা ফোন বদলের ধারা শেষ হয়ে গেছে। একজন ব্যবহারকারী সাধারণভাবে তিন-পাঁচ বছর পর পুরনো ফোনটি বদলে ফেলে। ফলে বড়সংখ্যক মানুষ একই সময়ে নতুন ফোন কেনে। যখন সবাই নতুন ফোন কিনে ফেলে এবং সাময়িকভাবে আর কেউ ডিভাইস পরিবর্তন করে না, তখন সে সাইকেল বা চক্র শেষ হয়ে গেছে বলে ধরা হয়।
এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেক স্মার্টফোন নির্মাতা এখন বিক্রি ও মজুদের ব্যাপারে আরো সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ফলে নতুন মডেলের ফোন বাজারে আনায় কিছুটা ধীরতা দেখা যাচ্ছে। আবার সাম্প্রতিক মডেলগুলোয় বড় কোনো উদ্ভাবন না থাকায় ব্যবহারকারীদের আগ্রহও কমে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে অনেক নির্মাতা মজুদ ও বিক্রি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, ফলে বাজারে প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে। এমন অবস্থায় সাময়িকভাবে বাজার স্থবির থাকলেও ভবিষ্যতে আবার গতি ফিরতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্মার্টফোন বিক্রি ও বাজার হিস্যার দিক থেকে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে স্যামসাং। প্রতিষ্ঠানটি এ সময়ের মধ্যে ছয় কোটির বেশি স্মার্টফোন বিক্রি করে বাজারের ২০ শতাংশ হিস্যা নিশ্চিত করেছে। তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় স্যামসাংয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশ। অন্যদিকে অ্যাপল প্রথম প্রান্তিকে সরবরাহ করেছে পাঁচ কোটির বেশি আইফোন। এ সময় টেক জায়ান্টটির বাজার হিস্যা ছিল ১৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে শক্তিশালী বিক্রির কারণে অ্যাপলের বাজার হিস্যা বার্ষিক হিসাবে বেড়েছে ১৩ শতাংশ। স্যামসাং সামান্য ব্যবধানে শীর্ষে থাকলেও প্রবৃদ্ধির দিক থেকে অ্যাপলের অবস্থান ছিল শক্তিশালী।
ক্যানালিসের গবেষণা ব্যবস্থাপক লি সুয়ান জানান, যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন বিক্রিতে বড় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যার বড় অংশই এসেছে অ্যাপলের থেকে।
তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য শুল্ক নীতির আগাম পূর্বাভাস পেয়ে অ্যাপল আগেই পণ্যের মজুদ বাড়িয়ে নেয়। ফলে কোম্পানিটি অন্যদের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে ছিল। একই সঙ্গে শুল্ক ঝুঁকি কমাতে প্রতিষ্ঠানটি ভারতে আইফোন উৎপাদনও বাড়িয়েছে।
এদিকে প্রথম প্রান্তিকে শাওমি, ভিভো ও অপো শীর্ষ পাঁচ স্মার্টফোন নির্মাতার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
শুল্ক প্রসঙ্গে ক্যানালিসের বিশ্লেষকদের ধারণা, এর ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে এন্ট্রি-লেভেল বা সাশ্রয়ী স্মার্টফোন। ডিভাইসের গড় বিক্রয়মূল্য বাড়তে থাকায় কম দামি ফোনের বাজার প্রায় উঠে যেতে পারে। প্রবণতাটি শুধু স্মার্টফোনেই নয়, অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যেও দেখা দেবে। যেমন সম্প্রতি মাইক্রোসফট অনেককে চমকে দিয়ে এক্সবক্স কনসোলের দাম ৮০-১৩০ ডলার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।