চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বিশ্বব্যাপী ট্যাবলেট বিক্রি বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিস প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। এ সময় মোট ট্যাবলেট বিক্রি হয়েছে তিন কোটির বেশি। গ্রাহক পর্যায় ও শিক্ষা খাতে পুরনো ডিভাইস বদলে নতুন ট্যাবলেট কেনার প্রবণতার কারণে সব অঞ্চলেই এ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
ক্যানালিস বলছে, ফেব্রুয়ারিতে লুনার নিউ ইয়ার উপলক্ষে সরকারি খুচরা ভর্তুকির কারণে চীনে ট্যাবলেটের ভোক্তা চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কসংক্রান্ত অনিশ্চয়তার জেরে জানুয়ারিতে ট্যাবলেট আমদানি বেড়ে যায়। তবে ফেব্রুয়ারিতে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা আসার পর মাসের ব্যবধানে আমদানিতে দ্বিগুণ অংকের পতন দেখা যায়।
ক্যানালিসের গবেষণা ব্যবস্থাপক হিমানি মুক্কা বলেন, ‘চীনা সরকারের ভোক্তা ভর্তুকি ও লুনার নিউ ইয়ারের ছাড় বছরের প্রথম তিন মাসে ট্যাবলেট সরবরাহে বড় অংকের প্রবৃদ্ধি এনে দিয়েছে।’
তিনি জানান, যেসব ট্যাবলেট নির্মাতারা ভর্তুকির সঙ্গে উৎসব উপলক্ষে ছাড় দিয়েছে, তারা বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখেছে। ফলে চীনে পরিণত হয়েছে সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা বড় বাজার। অ্যাপল এ বাজারে নিজের অবস্থান ধরে রাখলেও চীনা ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদা বাড়ছে। এর মধ্যে এগিয়ে আছে হুয়াওয়ে ও শাওমি। কোম্পানি দুটি এ সময় ব্যাপক গ্রাহক আকর্ষণ করেছে। অন্যদিকে অনর সাশ্রয়ী দামের মানসম্মত পণ্যের কারণে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একই সঙ্গে এসব ব্র্যান্ড চীনের বাইরের অনেক বাজারেও দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
ক্যানালিসের গবেষণা ব্যবস্থাপক কিয়ারেন জেসপ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাবলেট বাজার মৌসুমি প্রত্যাশার সঙ্গে মিল রেখেই চলেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক ঘোষণাগুলো বড় ধরনের চাহিদা তৈরি করেনি, কারণ কয়েক দিন পরই বেশির ভাগ ব্যক্তিগত ইলেকট্রনিক পণ্যকে শুল্কমুক্ত ঘোষণা করা হয়। বরং মার্কিন বাজারে ট্যাবলেটের মূল চাহিদা এসেছে কভিডকালীন কেনা ডিভাইসগুলোর রিপ্লেসমেন্ট বা প্রতিস্থাপন থেকে। এসব ডিভাইসের বয়স এখন চার-পাঁচ বছর হয়ে গেছে।’
তার মতে, নতুন মডেল বাজারে আসাও চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করেছে। ২০২৫ সাল জুড়েই কিছু ব্যবহারকারী পুরনো ট্যাবলেট বদলে নতুন চিপযুক্ত ডিভাইস কিনবে। তবে ইলেকট্রনিক পণ্য শুল্কমুক্ত থাকলেও খরচের ক্ষেত্রে ট্যাবলেট এখন অনেকের জন্য অগ্রাধিকার নয়, কারণ অন্যান্য খাতে চাপ বেড়েছে। তাই সামগ্রিকভাবে ট্যাবলেট বাজারে প্রবৃদ্ধি ধীর হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন কিয়ারেন জেসপ।
এ সময় বৈশ্বিক ট্যাবলেট বাজারে আইপ্যাড সিরিজের মাধ্যমে নিজেদের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে টেক জায়ান্ট অ্যাপল। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বার্ষিক হিসাবে ১৪ শতাংশ বেড়ে আইপ্যাড বিক্রি পৌঁছেছে ১ কোটি ৩৭ লাখে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্যামসাংয়ের সরবরাহ ৫ দশমিক ২ শতাংশ কমে ৬৬ লাখে নেমে এসেছে। এদিকে চীনের বাজারে শক্ত অবস্থানের ফলে শাওমি প্রথমবার লেনোভোকে ছাড়িয়ে তৃতীয় স্থানে উঠেছে।
ল্যাপটপের চেয়ে হালকা ও ছোট হওয়ায় ট্যাবলেট সহজে সঙ্গে নেয়া যায়, যেমন ভ্রমণ, ক্লাস বা অফিসের পথে। আবার স্মার্টফোনের তুলনায় বড় স্ক্রিনে ভিডিও দেখা, বই পড়া বা গেম খেলা বেশ আরামদায়ক। অনলাইন ক্লাস ও রিমোট ওয়ার্কের দরুন ট্যাবলেট সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ক্যানালিসের তথ্যানুযায়ী, আগের প্রান্তিক অর্থাৎ ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাপী ট্যাবলেট বিক্রি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৪ কোটি ইউনিটে পৌঁছায়। ফলে গত বছর মোট বিক্রি ছাড়ায় ১৪ কোটি ইউনিট, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৯ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।