যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন তৈরি করা না হলে এ পণ্যের ওপর কমপক্ষে ২৫ শতাংশ ট্যারিফ (শুল্ক) আরোপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন হলে আইফোনের দাম ৩ হাজার ডলার ছাড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে অন্যান্য ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের দাম বেড়ে সাধারণের নাগালের বাহিরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের। ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত শুক্রবার করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানান আর্থিক বিশ্লেষণ ও বিনিয়োগ পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েডবুশের বিশ্লেষক ড্যান আইভস। খবর সিএনএন।
ট্রাম্প গত শুক্রবার বলেন, ‘অনেক আগেই অ্যাপলের সিইও টিম কুককে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। আমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া সব আইফোন এ দেশেই তৈরি হবে, ভারতে বা অন্য কোনো দেশে নয়। যদি সেটা না হয়, তাহলে অ্যাপলকে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।’
তবে এ নিয়ম শুধু অ্যাপল নয়, যেকোনো স্মার্টফোন নির্মাতার জন্যও প্রযোজ্য হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি জানান, নতুন শুল্ক আগামী মাসের শেষ নাগাদ কার্যকর হতে পারে। সেক্ষেত্রে জুনের পর থেকে স্যামসাং, গুগলসহ সব স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্রেই উৎপাদন চালু করতে হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিকভাবে চিন্তা করলে এটা বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নয়। এটা হবে কোম্পানিগুলোর জন্য বিপুল খরচ ও চ্যালেঞ্জের বিষয়।
বিশ্লেষক ড্যান আইভস জানান, আইফোনের উৎপাদন পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগতে পারে। সেই সঙ্গে ডিভাইসটির দাম ৩ হাজার ডলার (সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি) পর্যন্ত হতে পারে। যেখানে বর্তমানে অ্যাপলের সবচেয়ে দামি আইফোনের বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার ২০০ ডলার। তিনি বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন মানে ব্যবহারকারীর জন্য খরচ বাড়বে দ্বিগুণের বেশি।’
তার মতে, অ্যাপল যদি নিজেদের উৎপাদন সরবরাহ চেইনের মাত্র ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে সরাতে চায়, তাতেই প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার খরচ ও অন্তত তিন বছর সময় লাগবে।
এর আগে এপ্রিলের শুরুতে বিভিন্ন দেশের আমদানীকৃত পণ্যের ওপর বড় ধরনের শুল্ক বাড়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এসব পণ্যের মধ্যে ছিল স্মার্টফোনসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস। তবে এর কিছুদিন পরই স্মার্টফোন ও কম্পিউটারসহ বেশকিছু ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক বা ট্যারিফ প্রত্যাহার করেন তিনি। সেই সঙ্গে তখন বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে এসব পণ্যের ওপরও ‘সেমিকন্ডাক্টর সংশ্লিষ্ট শুল্ক’ বসানো হতে পারে।
আইফোনের সরবরাহ ও উৎপাদন চেইন দীর্ঘদিন ধরেই চীনকেন্দ্রিক, যেখানে দক্ষ শ্রমিক, যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীসহ কারিগরি অভিজ্ঞতার একটি সমৃদ্ধ পরিকাঠামো রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো সে পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি, তাই উৎপাদন স্থানান্তর করা অ্যাপলের জন্য ব্যয়বহুল ও কঠিন হবে।
শুল্ক আলোচনার মধ্যেই এপ্রিলে অ্যাপল জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া সব আইফোন ভারতে তৈরির পরিকল্পনা করছে টেক জায়ান্টটি। পরিবর্তনটি আগামী বছর থেকেই শুরু হতে পারে বলে কোম্পানির এক সূত্রের বরাতে জানা গেছে। এর মধ্যে ট্রাম্পের এ ২৫ শতাংশ শুল্কের হুঁশিয়ারি অ্যাপলের সিদ্ধান্তে কতটুকু পরিবর্তন আনবে, তা নিয়ে ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও এ বিষয়ে অ্যাপল এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে চলতি মাসের শুরুতে সংস্থাটি জানায়, চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে এখনো ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বহাল রয়েছে। ফলে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের জন্য ৯০ কোটি ডলার অতিরিক্ত ব্যয়ের আশঙ্কা করছে কোম্পানিটি।