সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন ভাতা বিতরণের ক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ শেষ হতে যাচ্ছে। উপকারভোগীদের জন্য এখন থেকে এমএফএস সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিজে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকবে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১৫ এপ্রিলের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আগামী ১ জুলাই থেকে উপকারভোগী নিজেই পছন্দের এমএফএস বা ব্যাংক বেছে নিতে পারবেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরকে নতুন করে চুক্তি না করার মৌখিক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে বর্তমানে যে চুক্তি রয়েছে, বিশেষ করে ‘নগদ’-এর সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চুক্তি, তার মেয়াদ শেষ হবে ৩০ জুন।
সরকারি ভাতা ‘নগদ’-নির্ভর
গত কয়েক বছরে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি থেকে শুরু করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ভাতা বিতরণে নগদই ছিল একমাত্র ডিজবার্সমেন্ট চ্যানেল। ডাক বিভাগের সঙ্গে ২০১৭ সালে চুক্তির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে নগদ, যা পরে একটি এমএফএস হিসেবে রি-ব্র্যান্ড হয়।
২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং একটি প্রশাসক নিয়োগ করে। এর আগে, নগদের মোট গ্রাহক সংখ্যা ৯ কোটির বেশি ছিল, যার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহকই ছিলেন সরকারি উপকারভোগী।
নতুন নিয়মে কী থাকছে
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী—
-
উপকারভোগীরা নিজেদের পছন্দমতো এমএফএস বা ব্যাংক নির্বাচন করতে পারবেন
-
নগদ বিতরণের ক্ষেত্রে ক্যাশ আউট চার্জ হবে সর্বোচ্চ ০.৬০ শতাংশ
-
উপকারভোগীর ওপর কোনো অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করা যাবে না
-
নতুন হারে চার্জ কার্যকর হবে অবিলম্বে, তবে পুরনো চুক্তির ক্ষেত্রে ১ জুলাই থেকে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চুক্তি নবায়ন অনিশ্চিত
‘নগদ’-এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে উপবৃত্তি বিতরণের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ জুন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, নতুন করে চুক্তি নবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই, বরং মৌখিকভাবে তা থেকে সরে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, “চুক্তির মেয়াদ রয়েছে ৩০ জুন পর্যন্ত। তাই এখনই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”
বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে
সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন নিয়ম কার্যকর হলে বিকাশ, রকেট, উপায়সহ অন্যান্য এমএফএস কোম্পানিগুলোর জন্য বাজার উন্মুক্ত হবে। এতে সরকারি ভাতা বিতরণে একাধিপত্যের অবসান ঘটবে, বাড়বে স্বচ্ছতা ও গ্রাহক স্বাধীনতা।