২০২১ সাল, এদিক ওদিক চাকরি আর বিদেশী অ্যাসাইনমেন্ট থেকে আয় করা টাকা দিয়ে শুরু করেন নিজের স্টার্টাপ ব্যবসা। স্টার্টাপটা ছিলো মুদি দোকানদারদের সাথে ফ্রন্ট আর ব্যাক এফিলিয়েশন। বন্ধু আর ফেসবুকে পরিচয় হওয়া কিছু ট্যালেন্টেড মানুষের সাথে নিয়ে তৈরি হল টিম। অনেক খেটে একটা ১ মিনিটের ওভিসি (বিজ্ঞাপন ভিডিও) বানালাম, হাজার হাজার ব্যনার, পোষ্টার আর স্টিকারে বিভিন্ন এলাকার চারিদিক ভরে ফেললাম। একদিন খুব আয়োজন করে টীমের সবাই মিলে পাবলিসিটি করলাম, ২০ জনের কাছাকাছি টিম হওয়ায় বেশ সারা পেলো, হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌছে গেলো আমাদের ব্রান্ডের নাম। ১৫ই আগস্ট, ২০২১ এর কথা। সম্ভবত শুক্রবার। বেলা ৩টা বা একটু বেশী। একটা অজানা নাম্বার থেকে কল আসলো, রিসিভ করলাম। একজন মন্ত্রীর থেকে সরাসরি হুমকি বন্ধ হল নতুন স্টার্টাপের গল্প। নিজের ফেসবুক ওয়ালে এমনটাই লিখেছেন “বিজয় ডিএসএস” পেইজ এর ওনার আশরাফ হোসেন শচীন। নিচে তার লেখা তুলে ধরা হল:
‘একটা গল্প বলবো যেটা বলিনি কোনদিন, আওয়ামীলীগ সরকারের একজন মন্ত্রীর থেকে সরাসরি হুমকি পাওয়া এক নতুন স্টার্টাপের গল্প। ২০২১ সাল, এদিক ওদিক চাকরি আর বিদেশী এসাইনমেন্ট থেকে আয় করা টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম নিজের স্টার্টাপ ব্যবসা। ইনভেস্টমেন্ট, প্রডাক্ট মার্কেট ফিট, এমভিপি, এসবের হালকা ধারনা হয়েছিলো তবে তখনো গভীরভাবে জানা বাকি।
স্টার্টাপটা ছিলো মুদি দোকানদারদের সাথে ফ্রন্ট আর ব্যাক এফিলিয়েশন। টিম বানালাম কিছু বন্ধু আর ফেসবুকে পরিচয় হওয়া কিছু টলেন্ডেড মানুষের সাথে। অনেক খেটে একটা ১ মিনিটের ওভিসি (বিজ্ঞাপন ভিডিও) বানালাম, হাজার হাজার ব্যনার, পোষ্টার আর স্টিকারে বিভিন্ন এলাকার চারিদিক ভরে ফেল্লাম। একদিন খুব আয়োজন করে টীমের সবাই মিলে পাবলিসিটি করলাম, ২০ জনের কাছাকাছি টিম হওয়ায় বেশ সারা পেলো, হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌছে গেলো আমাদের ব্রান্ডের নাম।
১৫ই আগস্ট, ২০২১ এর কথা। সম্ভবত শুক্রবার। বেলা ৩টা বা একটু বেশী। একটা অজানা নাম্বার থেকে কল আসলো, রিসিভ করলাম।
কলদাতাঃ আপনি কি “বিজয় ডিএসএস” পেইজ এর ওনার বলছেন?
আমিঃ জ্বি বলছি, কি ভাবে সহায়তা করতে পারি বলুন।
কলদাতাঃ আমার নাম মোস্তফা জব্বার! আমি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আছি। ‘বিজয় ডিজিটাল’ আমার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান, আমার কাছে সকল কপিরাইট আছে। আপনি বিজয় নামে প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবেন না।
আমিঃ স্যার, আমি খুবই গর্বিত আপনি কল করেছেন। আপনার হাত থেকে আমি S2S এর পুরষ্কার পেয়েছি (আইসিটি ডিভিশনের একটি বিজনেস কম্পিটিশন)।
জব্বারঃ এসব বাদ দেন, এই মুহুর্তে আপনার পেইজ, ওয়েবসাইট বন্ধ করেন।
আমিঃ স্যার, বাংলাদেশে প্রায় ৮০ টার মতো প্রতিষ্ঠান আছে যারা বিজয় নামে অপারেট করে, RJSC এর ওয়েবসাইটে গেলেই পাওয়া যায়। আমরাও নেইম ক্লিয়ারেন্স পেয়েছি, রেজিস্ট্রেশন করছি। লিগালি আমরা কোন দোষ করি নি।
জব্বারঃ আমাকে এতো লজিক দেখাতে যাবেন না।
আপনি আমার প্রতিষ্ঠানের নাম চুরি করেছেন। আপনাকে আমি একদিন সময় দিলাম, এর মধ্যে এই নাম সরিয়ে ফেলবেন। আর তা না হলে কিভাবে আপনাকে সোজা করবো সেটাও আমার জানা আছে, একদম দেখিয়ে দেবো।
আমিঃ স্যার, আমার কয়েক লক্ষ টাকার মার্কেটিং কন্টেন্ট অলরেডি বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে গেছে, আমার সব বিনিয়োগ শেষ হয়ে যাবে।
জব্বারঃ সেটা আমার দেখার বিষয় না, আজকের পরে যেনো বিজয় নাম না দেখি। (বলে ফোন কেটে দিলো)
আমার রুমে দাড়িয়েই ফোনে কথা বলছিলাম, ফোন রেখে মনে হলো আমার পায়ের নিচের থেকে মাটি সরে গেছে। বেচে আছি না মরে গেছি কিছু অনুভব করতে পারছিলাম না। একটু পরে টিমকে জানালাম, কিছু বন্ধু আর সিনিয়রকে ফোন করলাম, জিজ্ঞেস করলাম এখন কি করবো। অনেকেই অনেক বুদ্ধি দিলো। একজন বললো মোস্তফা জব্বারকে আমার উচিত আবারো ফোন দিয়ে কনভিন্স করা। তবে আমি ফোন দেইনি, টেক্সট করেছিলাম। লিখেছিলাম, ‘স্যার আমার অনেক বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে যাবে, আমি কম্পানীর নাম পরিবর্তন করে ফেলবো, তবে খুব কৃতজ্ঞ থাকবো যদি আইসিটি ডিভিশনের কোন ফ্যসিলিটি পাওয়ার জন্য আমাকে একটু রেফার করতেন’। উনি রিপাই দিয়েছিলেন, ‘আপনাকে যে জেলে দেইনি এটাই আপনার ভাগ্য, এই নাম্বারে আর যোগাযোগ করবেন না’। এভাবেই একরম গায়ের জোড়ে, কোন লিগাল গ্রাউন্ড ছাড়া, হুমকি আর ভয় দেখি আমার থেকে কেড়ে নেয়া হলো আমার বহুদিনের গড়া পরিচয়। জীবনে এরকম ভয়, অসহায়ত্ব আর আত্মসমর্পন কখনো কল্পনা করিনি।
১৬ই আগস্ট ২০২১ এ আমরা কম্পানী ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজ ডাউন করে ফেলি। খিলগাও, মিরপুর, ওয়ারী ও মতিঝিল থেকে ‘বিজয় ডিএসএস’ এর বেশীরভাগ ব্যনার, পোষ্টার সরিয়ে ফেলি। দুইমাস পরে, নতুন নামে লাইসেন্স করি, ‘দুর্জয় ডিএসএস’, পরবর্তিতে RJSC রেজিস্ট্রেশন করি, ‘দুর্জয় ডিএসএস টেকনোলজিস লিমিটেড’।
আমার কাছের বেশকিছু বন্ধু ও সিনিয়র এই ঘটনা সম্পর্কে জানেন। একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহশ আমার ছিলো না। তার ‘দেখিয়ে দেবো’ হুমকির পরে নিরাপদও মনে করিনি। শুধু চুপ করে নিজের কয়েক লক্ষ টাকার বিনিয়োগ জলে ফেলে পরাজয় মেনে নিয়েছিলাম। ইতিহাস জানে, জালিমের পতন অবধারিত।’