পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র ‘পিওরইট’ ইউনিলিভার থেকে কেনার পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এও স্মিথ করপোরেশন বাংলাদেশে পণ্যটির গায়ে আগের কোম্পানির ট্যাগ রেখেই মানহীন পণ্য বিক্রি করছে। নির্ধারিত লিটারের অর্ধেকও বিশুদ্ধ করতে পারছে না কিট। অভিযোগ জানালে গ্রাহকরা পাচ্ছেন না সেবা, বরং হুমকি ও অপমানের মুখে পড়ছেন।
কাজ করছে না ফিল্টার কিট, ফোনেও মিলছে না সমাধান পিওরইটের প্যাকেজে ১৫০০ বা ৩০০০ লিটার পানি বিশুদ্ধ করার কথা থাকলেও, বাস্তবে ৭০০-৭৫০ লিটার বিশুদ্ধ করতেই ফিল্টার কিট অচল হয়ে পড়ছে। ১৬৬২৭ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানালেও গ্রাহকরা পাচ্ছেন না কার্যকর সমাধান। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিনিধি এসে দায় এড়িয়ে বলেন, ‘পানিতে আয়রন বেশি থাকার কারণে কিট দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
প্রতিনিধির খারাপ আচরণ, ফেরত নিচ্ছে না পণ্য রাজধানীর মগবাজার পেয়ারাবাগ এলাকার বাসিন্দা আয়শা আক্তার অভিযোগ করেন, তিনি মাত্র পাঁচ মাসে ৭৫০ লিটারের কম পানি বিশুদ্ধ করতে পেরেছেন। ফেরত চাইলে খারাপ ব্যবহার করেন প্রতিনিধি।
দোকানিরাও জানেন না মালিকানা বদলের তথ্য কারওয়ান বাজার ও মগবাজারের বেশিরভাগ বিক্রেতা জানেন না পিওরইট এখন ইউনিলিভারের পণ্য নয়। এও স্মিথের নাম জানলেও তারা বলেন, ‘আমাদের কেউ কিছু বলেনি।’ বিক্রয় প্রতিনিধিরাও বিভ্রান্ত।
সাংবাদিক পরিচয়ে ‘ফ্রি কিট’ অফার, প্রতিবেদন না করার অনুরোধ তিন দিন ধরে অনুসন্ধান শেষে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা একজন সাংবাদিককে অনুরোধ করেন প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে। তিনি বলেন, ‘সংবাদ হলে চাকরি যেতে পারে। আপনি ফ্রি একটা নতুন কিট নিন, কাউকে বলবেন না।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অসহায়ত্ব জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুম আরেফিন বলেন, ‘পিওরইটের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। তবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছি না। কেউ পরিমাপক প্রতিষ্ঠান থেকে রিপোর্টসহ অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।’
ইউনিলিভারের বক্তব্য ইউনিলিভার কাস্টমার কেয়ার লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি নাহারুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘পিওরইট এখন আমাদের পণ্য নয়। এও স্মিথের কাছে এটি বিক্রি হয়েছে। তারা এখন পরিচালনা করছে।’
এও স্মিথের নীরবতা ১৫ এপ্রিল এও স্মিথের চেয়ারম্যান কেভিন জে হুইলারকে মেইল করা হলেও কোনো জবাব আসেনি। গ্রাহকসেবায় ঘাটতি ও বাংলাদেশে ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি নীরব রয়েছে।
পাঠকদের জন্য পরামর্শ:
- কেনার আগে পণ্যটির উৎপাদক প্রতিষ্ঠান যাচাই করুন
- গ্রাহকসেবা নম্বরে সাড়া না পেলে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ জানান
- ফেরত নীতিমালা নেই এমন ব্র্যান্ড এড়িয়ে চলুন
বহুজাতিক কোম্পানির নাম ভাঙিয়ে দেশে মানহীন পণ্য বিক্রি নতুন নয়। তবে পিওরইটের মতো লাইফস্টাইল ও স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট পণ্যে এ রকম প্রতারণা গ্রাহকের জীবনঝুঁকিতে ফেলছে। কোম্পানির দায়বদ্ধতা নিশ্চিত না হলে এ চক্রের দৌরাত্ম্য চলতেই থাকবে।