রাজধানীর মতিঝিলের হাটখোলা শাখায় ইউনিয়ন ব্যাংকে ঘটেছে এক চাঞ্চল্যকর তুঘলকি কেলেঙ্কারি। অভিযোগ উঠেছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে গ্রাহকদের অজান্তে তাঁদের নামে ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে, যার টাকা গেছে অন্যের পকেটে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে শাখা ব্যবস্থাপকসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
গ্রাহক আটকে রাখে কর্মকর্তাদের
বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা ওই শাখার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এর পরই বিষয়টি ফাঁস হয়। ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, তাঁরা কোনো ঋণ নেননি, অথচ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী তাঁদের নামে ঋণের দায় রয়েছে।
উচ্চপদস্থদের ছত্রচ্ছায়া
সূত্র জানায়, ব্যাংকের সাবেক এমডি এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠরা দীর্ঘদিন এই শাখায় প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা এস আলম গ্রুপকে সুবিধা দিতে গিয়ে ভুয়া নামে ঋণ ছাড় করিয়েছেন। বর্তমানে শাখার আমানতের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা, আর বিতরণ করা ঋণ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা, যার সিংহভাগই গিয়েছে এস আলম গ্রুপের পকেটে।
“আমার সময়ে মাত্র ৮ লাখ ঋণ হয়েছিল”—সাবেক ব্যবস্থাপক
ঘটনায় অভিযুক্ত ২০২৩ সালের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন দাবি করেছেন, “যেটা হয়েছে, সেটা ২০১৩ সালে শুরু হয়েছে। আমি মাত্র এক বছর দায়িত্বে ছিলাম। আমার সময়ে এমন ঋণ হয়েছে ৮ লাখ টাকা। যেভাবেই হোক ব্যাংককে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে রদবদল
২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। বর্তমানে চেয়ারম্যান মু. ফরীদ উদ্দীন আহমদ এবং এমডি মো. হুমায়ুন কবির দুর্নীতির তদন্ত এবং ব্যাংক উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
২৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি!
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৮৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ঋণ এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন নামে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কম্বল বিতরণেও দুর্নীতি!
এদিকে সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR) তহবিলেও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক এমডি মোকাম্মেল হক চৌধুরীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ৭ লাখ ৮৫ হাজার কম্বলের বিল বাড়িয়ে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
মামলার আসামিদের তালিকায় রয়েছেন—
-
সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম ও সেলিম উদ্দিন
-
সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর
-
বেশ কয়েকজন সাবেক পরিচালক ও শীর্ষ কর্মকর্তারা
তদন্ত চলছে, তবে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
ইতোমধ্যে হাটখোলা শাখার বিষয়ে পৃথক তদন্ত শুরু করেছে প্রধান কার্যালয়। তবে গ্রাহকেরা আশঙ্কা করছেন, তদন্তে ধামাচাপা পড়তে পারে বড় ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা থাকায়। তাঁরা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি না পাওয়া পর্যন্ত ঋণের দায় নিতে রাজি নন।