মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদের ব্যাংক হিসাব যাদের স্বাক্ষরে পরিচালিত হচ্ছে, ব্যাংকগুলো সে স্বাক্ষর পরিবর্তন করতে পারবে না। পাশাপাশি এসব হিসাব থেকে কোনো অর্থ লেনদেনও করতে পারবে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তবে গ্রাহকদের নিয়মিত লেনদেন চালু থাকবে। নগদের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর গ্রাহকের অর্থ সুরক্ষায় এ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাণিজ্যিক ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই সিদ্ধান্ত মূলত নগদের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভীর উদ্বেগ থেকেই এসেছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘নগদ অতিরিক্ত ৬৫০ কোটি টাকা ই-মানি তৈরি করে জালিয়াতি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া কারও টাকা তৈরির অধিকার নেই।’
তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী, মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র গ্রাহকের জমা টাকার বিপরীতে ই-মানি তৈরি করতে পারে। কিন্তু নগদ এই নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। পাশাপাশি তারা সরকারি ভাতার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ‘লুট’ করেছে বলে জানান গভর্নর।
গভর্নর আরও বলেন, ‘আমরা নগদে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছি। তবে আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে সেই দল কাজ করতে পারছে না। আমরা আপিল করেছি। আশাকরি ন্যায়বিচার পাব।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই সময়ের মধ্যে নগদ নথিপত্র গায়েব বা জালিয়াতির প্রমাণ মুছে ফেলতে পারে। তাই গ্রাহকের অর্থ সুরক্ষায় ব্যাংকগুলোকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নগদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক নিয়োগের পর একটি বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের তদন্তে উঠে আসে নগদে বড় ধরনের আর্থিক জালিয়াতির তথ্য।
নিরীক্ষায় দেখা যায়—
-
ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে অবৈধভাবে ই-মানি তৈরি করেছে নগদ।
-
সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ভাতার অর্থ (প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা) আত্মসাৎ করা হয়েছে।
-
সবমিলিয়ে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব অমিল রয়েছে।
নগদ পরিচালনায় এই অনিয়ম ও জালিয়াতির সময় প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি।
এসব অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৪ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। যদিও প্রশাসক দলের কার্যক্রমে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় এখন তদন্তে অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
১. নগদের বিরুদ্ধে কী ধরনের জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে?
৬৫০ কোটি টাকার ই-মানি অবৈধভাবে তৈরি এবং ২ হাজার কোটি টাকার সরকারি ভাতা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
২. এখন কি নগদ ব্যবহার করা নিরাপদ?
হ্যাঁ, গ্রাহকের স্বাভাবিক লেনদেন চালু আছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে।
৩. নগদে প্রশাসক কেন দেওয়া হয়েছিল?
নিরীক্ষায় বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাবের প্রমাণ পাওয়ায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।