অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে অর্থ উত্তোলন এবং অনলাইনে কেনাকাটা করার জন্য জনপ্রিয় মাধ্যম পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সকল পেওনিয়ার প্রিপেইড মাস্টারকার্ড অনির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত অকেজো হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ আপনার যদি একটি পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড থাকে এখন থেকে আপনি সেটি আর ব্যবহার করতে পারবেন না। আপনার পেওনিয়ার একাউন্টে যে মাস্টারকার্ড ব্যালেন্স রয়েছে তাও সাময়িকভাবে ফ্রিজ হয়ে গিয়েছে অর্থাৎ আপনি সেই অর্থও আপাতত উত্তোলন করতে পারবেন না।
পেওনিয়ার থেকে জানানো হয়েছে সাময়িক সময়ের জন্য তারা মাস্টারকার্ড ব্যবহারকারীদের একাউন্ট ব্যালেন্স ফ্রিজ করে দিয়েছে এবং তারা আশা করে ভবিষ্যতে এই অর্থ আপনি আবার উত্তোলন করতে পারবেন। তবে এই মুহূর্তে অনির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত আপনি আপনার পেওনিয়ার একাউন্টে থাকা মাস্টারকার্ড ব্যালেন্স অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন না।
অবশ্য, যদি প্রিপেইড মাস্টারকার্ডের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কোন ফান্ড আপনার পেওনিয়ার একাউন্টে থাকে সেই অ্যামাউন্ট আপনি পেওনিয়ার একাউন্ট থেকে এখনই উত্তোলন করতে পারবেন- তবে সেটা কার্ড ব্যবহার করে নয় বরং আপনার পেওনিয়ার একাউন্টের সাথে সংযুক্ত ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ঐ টাকা তুলতে পারবেন।
পেওনিয়ারে থাকা ব্যালেন্সের কী হবে? পেওনিয়ার থেকে অর্থ কীভাবে তুলবেন?
সহজে বলতে গেলে আপনার পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড একাউন্টে যদি কোন ডলার থেকে থাকে তাহলে সেই ডলার আপনি আপাতত উত্তোলন করতে পারছেন না। যদি অনেক বেশি ডলার আপনার একাউন্টে জমা থাকে যেটা আসলে পেওনিয়ার মাস্টারকার্ডের ধারণক্ষমতার চাইতেও বেশি তাহলে সেই বাড়তি পরিমাণটি আপনি উত্তোলন করতে পারবেন।
আপনার পেওনিয়ার একাউন্টে লগইন করলে আপনি আপনার কার্ড ব্যালেন্স এবং একাউন্ট ব্যালেন্স জানতে পারবেন। কার্ড ব্যালেন্সের চেয়ে যদি একাউন্ট ব্যালেন্স বেশি হয় তাহলে বাড়তি পরিমাণটি আপনি ব্যাংকের মাধ্যমে উত্তোলন করতে পারবেন। পেওনিয়ার কার্ডের সর্বোচ্চ ব্যালেন্স ১০ হাজার ডলার বা আরও কমবেশি হতে পারে (নিশ্চিত না)। এত বেশি অ্যামাউন্ট সাধারণ ব্যবহারকারীরা পেওনিয়ারে রাখেনা।
পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড কেন বন্ধ হল?
পেওনিয়ার এর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রে এবং এই কোম্পানিকে কার্ড ইস্যু করার সার্ভিস দেয় যুক্তরাজ্যের একটি কোম্পানি ওয়্যারকার্ড কার্ড সল্যুশনস লিমিটেড।
ওয়্যারকার্ড কার্ড সল্যুশন্স লিমিটেড নামের ঐ কোম্পানিটির মূল মালিক হচ্ছে জার্মানির একটি কোম্পানি যার নাম ওয়্যারকার্ড এজি।
সম্প্রতি ওয়্যারকার্ড এজি একটি আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে জড়িয়ে পড়ে। কোম্পানিটির হিসেব থেকে প্রায় ২০০ কোটি ডলার উধাও হয়ে যায়। এরপর ওয়্যারকার্ড এজি’র সিইও মার্কাস ব্রাউন পদত্যাগ করেন, এবং জার্মানিতে গ্রেফতার হন। তার কয়েকদিনের মধ্যেই ওয়্যারকার্ড এজি কোম্পানিটি নিজেদেরকে দেউলিয়া ঘোষণা করার প্রক্রিয়া শুরু করে।
এরপর যুক্তরাজ্যের আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা “এফসিএ” ওয়্যারকার্ড সল্যুশনসের সকল কার্ড কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। পেওনিয়ার জানিয়েছে, যেহেতু পেওনিয়ারের প্রিপেইড মাস্টারকার্ডগুলো এই যুক্তরাজ্যের ওয়্যারকার্ড সল্যুশন্সের দ্বারা ইস্যু করা হয়েছে, তাই আপনার পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড বর্তমানে আর কোনো কাজ করবেনা। এটি দিয়ে আপাতত আপনি কোনো লেনদেন করতে পারবেন না। সেইসাথে এই মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে আপনি পেওনিয়ারে যে অর্থ এনেছেন সেই অর্থও আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না- যতদিন পর্যন্ত এই আইনি বিষয়টি সমাধান না হয়।
পেওনিয়ার একাউন্টে কি টাকা গ্রহণ বা রিসিভ করা যাবে?
হ্যাঁ। এখন আপনি আপনার পেওনিয়ার একাউন্টে নতুনভাবে অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন। সেই নতুন ব্যালেন্স উত্তোলন করার জন্য পেওনিয়ারের সাথে নিজের ব্যাংক একাউন্ট যুক্ত করে সেই ব্যাংকে পেওনিয়ার থেকে নতুন ব্যালেন্সের টাকা তোলা যাবে।
বিভিন্ন অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেমন আপওয়ার্ক, ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, ৯৯ডিজাইনস ইত্যাদি পেওনিয়ারের প্রিপেইড মাস্টারকার্ড সেবার মাধ্যমে সদস্যদের অর্থ উত্তোলনের সেবা দিয়ে থাকে। এখন ওয়্যারকার্ড কাণ্ডের পর সবাইকেই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।