সারাদেশে অনলাইন বিক্রেতাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ই- কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এবং এটুআই, আইসিটি ডিভিশন, এর সহায়তায় পেপারফ্লাই চালু করেছে “সেলার ওয়ান” প্রোগ্রাম। আজ বেলা ১২টায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে সেবাটি চালু করা হয়। এই পরিষেবার মাধ্যমে ঢাকার বাইরের এবং গ্রামীন ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি সারা দেশের ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে।
আমাদের দেশের রাজধানী কেন্দ্রিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর পরিপূর্ণ ক্ষমতায়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে না। ঢাকার মত করে অন্যান্য জেলায় পরিবহণ, দক্ষ জনবল এবং দ্রুত ও বিস্তৃত আর্থিক পরিষেবাগুলির সুবিধা মেলে না। তবে, মানুষের উদ্যোগ ও সৃজনশীলতা কোনও অর্থনৈতিক হিটম্যাপের দ্বারা আবদ্ধ হতে পারে না। ঢাকার বাইরে অবস্থিত যে কোনও আকারের অনলাইন ব্যবসা পরিচালনার সুবিধার্থেই পেপারফ্লাইের এই সেলার ওয়ান নামক নতুন সেবা, যার মাধ্যমে দেশজুড়ে যে কেউ আজ অনলাইন মারচেন্ট হতে পারবে।
অনলাইন উপস্থিতিই ই-কমার্স গল্পের শেষ নয়, বরং এটি কেবল সূচনালগ্ন। পূর্ণাঙ্গ লজিস্টিক সহায়তা, ফেসবুক এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে ব্যবসা করার জ্ঞান ও দক্ষতা এবং আর্থিক সহায়তা কিংবা ব্যাংক ঋণ ব্যতীত দেশের উদীয়মান ই-কমার্স শিল্পটি বাঁচতে পারে না। বর্তমানে আমাদের দেশে যে বৃহৎ অনলাইন বিক্রেতাগোষ্ঠী রয়েছে তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি দেয়া এবং বাংলাদেশের ই-কমার্স শিল্পের প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে তাদের ই-কমার্সের জন্য প্রস্তুত করার এখনই উপযুক্ত সময়। সময়োপযোগী এই চিন্তাকে সমর্থন করার জন্য, পেপারফ্লাই ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সম্মিলিত ভাবে এই সেলার ওয়ান প্রোগ্রামটি চালু করে।
ঢাকা শহর ছাড়িয়ে দেশের সবকটি জেলায় পেপারফ্লাইের ৬৪ টি নিজস্ব পয়েন্টের মাধ্যমে মার্চেন্টের পণ্য পিকআপ করে এবং একইসাথে যে কোনও ঠিকানাতে পৌঁছে দিতেই এই নতুন পরিষেবা। সেলার ওয়ান দেশের এই অত্যন্ত সম্ভাবনাময় শিল্পের জন্য ব্যাপক সরবরাহের প্রয়োজনীয়তাকে সহজ করার মধ্যদিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সঙ্গতি রেখে অধিকতর ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি এবং স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
ই-কমার্সের ক্ষেত্রে দেশব্যাপী লজিস্টিক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে “সেলার ওয়ান” দেশের সামগ্রিক অনলাইন বিক্রেতার সংখ্যাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করবে এবং পুরো ই-কমার্স ইকোসিস্টেম এর সম্প্রসারণে সহায়তা করবে। ঢাকার বাইরের ও গ্রামীণ ব্যবসায়ীদের অনলাইনের মাধ্যমে দেশব্যাপী সরাসরি গ্রাহকদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রয় করতেও এই সেবাটি সহায়তা করবে। করোনার প্রভাবে যেহেতু প্রচুর দোকান বন্ধ বা অচল রয়েছে, তাই এই ছোট ব্যবসাগুলির বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য এই মুহূর্তে বিকল্প বিক্রয় পন্থা প্রয়োজন- যেখানে সেলার ওয়ান তাদের প্রয়োজনের বন্ধু হিসেবেও পাশে দাঁড়াবে।
সংবাদ সম্মেলনে পেপারফ্লাইয়ের চিফ মার্কেটিং অফিসার রাহাত আহমেদ বলেন, “আমরা সর্বদা ই-কমার্স কেন্দ্রিক লজিস্টিক ইন্ডাস্ট্রির পথপ্রদর্শক হিসেবে নতুন নতুন পরিসেবা এবং সমাধান নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। সেলার ওয়ান প্রোগ্রামটি আমাদের একটি নতুন প্রয়াস যা সারা দেশে অনলাইন বিক্রেতার সংখ্যাবৃদ্ধি করার মাধ্যমে ইকমার্স ইকোসিস্টেমকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও, এই পরিষেবাটি ঢাকার বাইরের বা গ্রামীণ ব্যবসায়ীদের অনলাইনের মাধ্যমে দেশব্যাপী সরাসরি গ্রাহকদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রয়ে সুবিধা দিয়ে সমৃদ্ধ করবে।”
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সম্মানিত প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার এসময় বলেন, “গ্রামীণ বা প্রান্তিক বিক্রেতাদের বাধা নিরসনেই ই-ক্যাব এবং পেপারফ্লাই এই প্রচেষ্টা, যাতে আরও ব্যবসায়ীরা ঢাকার বাইরে থেকে তাদের অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে পারে। অবশ্যই এই পরিবর্তন রাতারাতি ঘটবে না, তবে এই প্রবর্তনের মাধ্যমে আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি যে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।“
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগ এটুআই এর হেড অফ ইকমার্স, রেজওয়ানুল হক জামি, ই-ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, আইএফসি বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টর স্পেসালিস্ট হোসনে ফেরদৌস সুমি এবং সৈয়দ এম ওমর তৈয়ব, এসইভিপি এবং হেড অফ এমএসএমই ব্যাংকিং, প্রাইম ব্যাংক। অনুষ্ঠানে লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর সিইও বিজন ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
কভিড -১৯ এর কারণে প্রচুর ব্যবসা বন্ধ রয়েছে বা হওয়ার পথে। এই ছোট ব্যবসাগুলি বেঁচে থাকতে ও বেড়ে উঠতে বিকল্প বিক্রয় ব্যবস্থার প্রয়োজন। ই-কমার্স দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং অনেক ব্যবসায়ি অনলাইনে তাদের ব্যবসা শুরু করছেন। বর্তমানে ৫০ হাজারেরও বেশি অনলাইন মার্চেন্ট ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে এবং এই সক্রিয় এফ-কমার্স বিক্রেতাদের বেশিরভাগই ঢাকার ভেতরের। ঢাকার বাইরের অনলাইনে ব্যবসাগুলি এখনও পেশাদার কোনও ই-কমার্স কেন্দ্রিক লজিস্টিক পার্টনার, অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনার জ্ঞান এবং আর্থিক সহায়তার অভাবের কারণে বিকাশিত হয়নি। এই উদ্যোক্তাদের ব্যবসা অনলাইনে আনার জন্য একটি চ্যানেল সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করার মধ্যদিয়ে দেশজুড়ে ই-কমার্স শিল্প বিকাশের একটি সম্ভবনাময় সুযোগ রয়েছে। সেলার ওয়ান সম্ভাব্য ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার মাধ্যমে ভাল ব্যবসা, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়নে অবদান রাখবে।