ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে গাজীপুর জেলা পরিচিত। ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর এই জেলায় বর্তমানে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর সদর দপ্তর সহ ঘুরে বেড়ানোর বিভিন্ন মনোরম পরিবেশ এবং সুন্দর সুন্দর রিসোর্ট। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের একটি বড় অংশ আসে গাজীপুর জেলায় থেকে।
১৭৭০.৫৪ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে গাজীপুর জেলার অবস্থান। শিক্ষার হার ৫৬.৪০%। ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটারের দূরত্বে অবস্থিত এই গাজীপুর জেলা। গাজীপুর সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর ও কালীগঞ্জ, এই পাঁচ উপজেলা নিয়ে গাজীপুর জেলা গঠিত। এর উত্তরে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা, দক্ষিণে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এবং পশ্চিমে ঢাকা ও টাংগাইল জেলা রয়েছে।
অর্থাৎ গাজীপুর থেকে চারিদিকে স্থলপথে যাতায়াত করার সুব্যাবস্থা রয়েছে। সড়ক এবং রেল পথে গাজীপুর থেকে চলাচল যথেষ্ট সুবিধাজনক। তাই চাইলেই সহজে গাজীপুর থেকে অনান্য জেলায় পণ্য ও সেবা আদান-প্রদান সম্ভব।
ধান, পাট, আখ, তুলা, বাঁশ, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা, লিচু ও পেঁপেঁর মত অর্থকরী ফসলে সমৃদ্ধ গাজীপুর জেলা। এছাড়া গাজীপুর এর ঘরে ঘরে বিভিন্ন নকশি পিঠা প্রচলিত রয়েছে। দেশীয় মুরগী এবং দেশীয় মুরগীর ডিম এখানে সহজপ্রপ্য। গাজীপুর যথেষ্ট সবুজ সতেজ হবার কারনে এ জেলার গাভীর দুধ বেশ সমাদৃত।
গাজীপুর জেলা দেশের অন্যতম বৃহত্তর, সমৃদ্ধশালী এবং সম্ভাবনাময় জেলা। বিভিন্ন পণ্যের উপস্থিতি এবং যোগাযোগ ব্যাবস্থা বলে দেয় যে এ জেলায় ই-কমার্সের যথেষ্ট সুযোগ এবং সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ এর অন্যতম উপাদান হিসেবে ই-কমার্স আমাদের দেশেও নিজের অবস্থান শক্ত করেছে। ক্রেতা-বিক্রেতা অনেকেই এখন ই-কমার্স এর দিকে ঝুঁকছে। ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে গাজীপুর জেলায় ই-কমার্স হবে একটি পছন্দনীয় পেশা।
যেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১২০০ লোকের বসবাস, সেখানে পণ্যের এবং সেবার চাহিদা অবশ্যই রয়েছে। আবার গাজীপুরে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর, মিল,কারখানা থাকার ফলে নানা জেলার মানুষের বসবাস এখানে, যাদের আবার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা। সঠিক ভাবে ই-কমার্স কে কাজে লাগাতে পারলে গাজীপুর জেলার বাসিন্দারা যেমন প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য ঘরের দরজায় পেয়ে উপকৃত হবে তেমনি গাজীপুর জেলার পণ্য, সেবা,উদ্যোগ এবং ব্যাবসায় এরও প্রসার ঘটবে।
ইতিমধ্যে গাজীপুর জেলা থেকে অনেকেই ই-কমার্সে ব্যাবসায়ে নাম লিখিয়েছেন এবং তারা বেশ ভালো করছেন।
নকশি স্টোর এর স্বত্বাধিকারী নন্দিনি আলম বলেন, “আমি বসবাস করি শ্রীপুর উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে, ই- কমার্স এর মাধ্যমে নকশি কাঁথা সহ অন্যান্য নকশি পণ্য পৌঁছে দেই দেশের ৬৪ জেলায়। এটা অবশ্যই আমাদের মত নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বড় একটা সুযোগ। ঘরে বসে ফেসবুকের মাধ্যমে ওর্ডার নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিস এ পণ্যের বুকিং দেই, আবার পণ্য সোর্স থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংগ্রহ করি।”
এসডি ডিলেসিয়াস এর স্বত্বাধিকারী সুবর্না রানী দাস ও নিজের হাতে তৈরি দুধের প্যাড়া সন্দেশ, মুরালি, নাড়ু নিয়ে কাজ করে ভালো সাড়া পেয়েছেন এবং নিজের কাজের পরিধি বাড়িয়ে বর্তমানে টাঙ্গাইলের
হাফসিল্ক নিয়েও কাজ শুরু করেছন।
গাজীপুর জেলায় ই-কমার্সকে আরও বেশী শক্তিশালী এবং ফলপ্রসু করে তুলতে গাজীপুর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে। কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ অবশ্যই আছে, তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা মোকাবেলা করা সম্ভব। তা করতে পারলেই ই-কমার্সে সম্ভাবনাময় গাজীপুর জেলা সফলতার মুখ দেখবে।