সুজলা সুফলা শষ্য শ্যমলার দেশ বাংলাদেশ। আর ৬৪ টি জেলার মধ্যেই রংপুর জেলা বাংলাদেশের উওরাঞ্চলের এক ঐতিহ্যবাহী জনপদ। সুপ্রাচিন কাল থেকে এই জেলা গৌরবময় ও বিচিত্রপূর্ন ইতিহাসের অধিকারী। বাংলাদেশের উওর পশ্চিমা অঞ্চলে অবস্থিত এই জেলাটি,আয়তনে ২৪,০০০৫৬ বর্গ কিলোমিটার। মোট ৮ টি উপজেলা নিয়ে রংপুর জেলাটির প্রশাসনিক অঞ্চল বিস্তৃত। বাংলাদেশের সকল জেলার মতই রংপুরেও নিজস্ব বৈশিষ্ট্যর কিছু আঞ্চলিক দেশীয় পন্য রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখ্য কিছু পন্য দেশের সকল জেলায় ও দেশের বাহিরে ও খ্যাতি ছড়িয়েছে তা হলো- রংপুরের শতরঞ্জি,রংপুরের বেনারসি পল্লীর বেনারসি, মৃৎশিল্পে মাটির তৈরি বাটনা ও কাঠের তৈরি ঘোটা,রংপুরের আঞ্চলিক মুখরোচক খাবার সিদল। তাছাড়া রংপুর অঞ্চলে সম্মিলিত খামার গড়ে উঠেছে যা অর্থনিতিতে ব্যাপক হারে প্রভাব ফেলছে।
চলুন জেনে নেই রংপুরের আঞ্চলিক উল্লেখ্য দেশীয় পন্য সম্পর্কে –
রংপুরের শতরঞ্জিঃ
বাঙালী সংস্কৃতি ঐতিহ্যের মুল পটভূমি হচ্ছে গ্রাম। বুনন শিল্পে শতরঞ্জি রংপুরের গৌরব ও ঐতিহ্য। রংপুর শহরের পশ্চিমে ঘাঘট নদীর তীরে অবস্থিত নিসতেবগঞ্জ নামক গ্রামটি হলো শতরঞ্জির নামক শিল্পের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আশীর্বাদ ভূমি। ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায় ত্রয়োদশ শতাব্দীতেও এ এলাকায় শতরঞ্জি প্রচল ছিল। সে সময়ে রাজা বাদশাহও বিত্তবান শ্রেণীর মানুষদের বাড়িতে আভিজাত্যর প্রতিক হিসেবে ছিল এই শতরঞ্জি। বৃটিশ শাসন আমলে এত বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, সে সময়কালেই রংপুরের তৈরি শতরঞ্জি সমগ্র ভারত বর্ষ,বার্মা,সিংহল,ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। ১৯৭৬ সালে সরকারি ভাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) নিসতেবগঞ্জ গ্রামে শতরঞ্জি তৈরির একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। তাছাড়া ১৯৯৪ সালে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বিনা পয়সায় বিনা পয়সায় আরও উন্নত প্রশিক্ষন দিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে ঐতিহাসিক এই শতরঞ্জি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করেন। সে থেকে শতরঞ্জি উৎপাদন আর দমে যাইনি। সেই থেকে রংপুরের শতরঞ্জি এখনো স্বর্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমান সময় সাপেক্ষে ই-কমার্সের মাধ্যমে কারুশিল্পের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা শতরঞ্জির জন্য অত্যান্ত শুভ। বর্তমানে রংপুরের শতরঞ্জি ই কমার্সের মাধ্যমে ও দেশের সকল জেলাতে ও দেশের বাহিরে ও রপ্তানি হচ্ছে। তাছাড়া রংপুরে এখন কারুপন্য লিমিটেডস নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে শতরঞ্জি তৈরির পাঁচটি কারখনা। এসব কারখানায় প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করে। এক পরিসংখ্যান প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যায় বর্তমান বাংলাদেশের রপ্তানি বানিজ্য হস্তশিল্পপের ৬০শতাংশই হয়ে থাকে রংপুরের শতরঞ্জি, যা রংপুরের জন্য আশীর্বাদ।
রংপুরের বেনারসিঃ রংপুর শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গঙ্গাচড়া উপজেলায় গড়ে উঠেছে এই বেনারসি পল্লী টি। প্রায় ১০০ তাতী মিলে এই এলাকায় বেনারসি পল্লীটি গড়ে তোলেন। এই বেনারসি পল্লীটি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গড়ঘন্টা ইউনিয়নের তালুক হাবু গ্রাম সহ আরোও ৪/৫ টি স্থান জুড়ে বেনারসি উৎপাদন ক্ষমতা রাখছে। রংপুরের বেনারসি পল্লীতে উৎপাদিত গুলোর রয়েছে বিচিত্র সব নাম হলো- বেনারসি, বারবুটা,কুচিকাট,ফুলকলি ইত্যাদি।
সিদলঃ উত্তরবঙ্গের মধ্যে রংপুরের লোক মুখে সিদল একটি মুখরোচক খাবার। সিদল একটি কৃষি জাত পন্য,যার প্রচলন শুরু হয় সর্বপ্রথম এই রংপুরেই। তাছাড়া ও শোনা যায় সিদল ভারতের উত্তর পশ্চিমবঙ্গর দিকে আসাম, ত্রিপুরা অঞ্চলের অনেক মানুষ বিষেয় করে আদিবাসীরা এই সিদল খায়। এটি মুল্যত মলা,ঢেলা,টাকি দেশীয় কয়েক প্রকার শুঁটকি মাছের গুড়ো ও কচুশাক ও বিভিন্ন মসলার সমন্বয়ে পেষ্ট করে কাবাব সাইজের বানিয়ে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এটি অনেক ভাবেই তরকারি ও ভর্তা রেসিপি করে পরিবেশন করা হয়। সিদলে পুষ্টি গুনাগুন হিসেবে থাকে আয়োডিন, আমিষ,প্রটিন ও কোলষ্টেরল। বর্তমানে ই-কমার্সের সাথে দেশী পন্য নিয়ে অনেক উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে এই রংপুরের আঞ্চলিক সিদল এখন প্রচার দেশের সব জেলায়, সাথে ছড়িয়ে যাচ্ছে রংপুরের ঐতিহ্য বাহি খাবার সিদল এবং পাশাপাশি এভাবে নিজেদের এলাকায় স্থানীয় ঐতিহ্য কে ধরে রাখছে।
মৃৎশিল্পে মাটির তৈরি বাটনাঃ মাটির বাটনা ও কাঠের তৈরি ঘোটা এই আঞ্চলিক পন্যর ব্যবহার মুল্যত শুরু উত্তরবঙ্গে।মাটির তৈরি এই বাটনা ও কাঠের ঘোটা দিয়ে মশলা বাটার কাজ থেকে শুরু করে ভর্তা বাটার কাজে অন্যরকম অবদান রাখে। মাটির তৈরি বাটনা ঘোটা ও এখন ই-কমার্সের মাধ্যমে দেশের সকল জেলাতে ভালো সারা পেয়েছে। মাটির বাটনা মুল্যত বানিয়ে থাকে কুমার শ্রেনীর পেশাজীবিরা। এরা সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত,তারা পাল পদবী তে পরিচিত।
এছাড়া ও রংপুর অঞ্চল কে তামাকের জন্য বিখ্যাত বলা হয়। তাছাড়া অন্য সব জেলার মতো এই অঞ্চলে সিজেনাল হাড়িভাঙ্গা আম,লিচুর ফলন গুনগত ভাবে অনেক ভালো যা স্থানীয় বাজার তথা সারা দেশের বাজারে সমান হারে সমাদ্রত। রংপুর জেলার আঞ্চলিক সব ঐতিহাসিক পন্য নিয়ে লেখার মাধ্যমে দেশের সব জেলায় সকল পন্য প্রচারে সুযোগ থাকে। এবং ই কমার্সের মাধ্যমে নিজ এলাকা থেকে আঞ্চলিক পন্যকে নিয়ে অনেক জনেই নিজেদের উদ্যোগে সংযোজনে অনুপ্রাণিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবং নতুন উদ্যোক্তা হওয়ায় অনুপ্রেরণিত হবে।