আরিফা খাতুন, ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিনিধি, টেকজুম ডটটিভি// বর্তমানে ই-কমার্সের বদৌলতে বাংলাদেশে দেশী পণ্যের জোয়ার এসেছে। বিশেষ করে দেশী তাঁতের পোশাকের চাহিদা কয়েকগুন বেড়ে গেছে। অনেক এলাকার তাঁতিরা এখনকার সময়ে কাপড় বুননে ব্যস্ত সময় পার করছে।
স্বাধীনতার কিছুদিন পরেই হালুয়াঘাট উপজেলার মনিকুড়া, জয়রামকুড়া, গাজিরভিটা, সাংড়া, রান্ধনিকুড়া ও গেষবের গ্রামে শুরু হয়েছিলো তাঁতের পোশাক তৈরির কাজ। শাড়ি, গামছা,চাদর, কম্বল সহ আরো অনেক ধরনের পোশাক তৈরির করতো তাঁতিরা। একসময় এই সব গ্রামে প্রায় ৫ হাজার পরিবারের বসবাস ছিলো। এইসব গ্রামের তাঁতিদের জীবনজীবিকা চলতো তাঁতে বুনা কাপড় বিক্রি করে। এসব গ্রামের প্রতিটা বাড়ির উঠানেই এখনো ২ থেকে ৬টি করে তাঁত আছে। কিন্তু তাঁতের খট খট শব্দটুকুই যেনো নাই এইসব তাঁতিপল্লীতে।
একসময় জয়রামকুড়া ও মনিকুড়া এলাকা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প নামেই পরিচিত ছিলো। কালের বিবর্তনে সেই পরিচিতি আর নেই বললেই চলে। সেই সব এলাকায় তাঁতিদের বসবাস আছে বা তাঁতপল্লী গুলোতে এখনো টুকটাক বুননের কাজ চলে। কিন্তু এখন আর শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা বুনন করা হয় না সেই তাঁতগুলোতে। এখন শুধু তাঁতীরা গাড়ো আদিবাসীদের জন্য ধকমান্দাসহ অন্যান্য পোশাক তৈরি করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।
হালুয়াঘাটের তাঁতপল্লীর তাঁতিদের মতামত হলো সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা কাপড় বুনার কাজ চালিয়ে যেতে পারছে না।কাপড় বুনার সুতা কেনার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন হয় এবং কাপড়ের মূল্য কম পাওয়ায় সেই টাকায় নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না।
সেখানকার তাঁতিদের ধারণা মেশিনে তৈরি কাপড় একটু কম দামে পাওয়া যায় বলে মানুষ সেদিকেই ঝুঁকছে। বর্তমান সময়ের ই-কমার্স ও ইন্টারনেটের ছোয়া সেখানো এখনো ভালো করে পৌঁছাতে পারেনি।
কিন্তু এখনো এসব তাঁতি বাড়িতে ২ থেকে ৬টা করে তাঁত আছে। সেগুলো বাঁশ,কাঠ দিয়ে তৈরি আবার কিছু কিছু তাঁত রডের চাকাওয়ালা।নানান প্রতিকুলতার মাঝেও শতাধিক মানুষ বংশানুক্রমে তাঁত শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই তাঁতপল্লীগুলো আর্থিক সহায়তা ও প্রচারের অভাবে আজ বিলুপ্তির পথে।
অনেকসময় দেখা যায় হালুয়াঘাট উপজেলার অনেক মানুষই, বিশেষ করে তরুণরা এই তাঁতপল্লী সম্পর্কে অবগত নয়। বর্তমানে ই-কমার্সের মাধ্যমে সেই তাঁতপল্লী গুলোকে ময়মনসিংহ জেলার সম্ভাবনা হিসেবে তুলে আনা সম্ভব।
এ সেক্টরে কিছু তরুণ ই-কমার্স উদ্যোক্তা তৈরী হলে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। তাঁতীদের জীবন ধারণের মাধ্যম হতে পারে তাদের তাঁতশিল্প।
তাছাড়া তাঁতপণ্য নিয়ে ইতোমধ্যে যেসকল ই-কমার্স উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে তারা কয়েকজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে হালুয়াঘাটের তাঁতশিল্পের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখতে পারে। ফলে তাঁতিদের যেমন এ পেশায় টিকে থাকা সম্ভব হবে তেমনি আরো অনেক মানুষের আত্মকর্মসংস্থান তৈরি হবে।
বর্তমানে ই-কমার্সের কল্যাণে দেশীয় তাঁতপণ্যের চাহিদা বেড়েছে অনেক। তাই সঠিক প্রচারণা ও উদ্যোক্তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ওঠে আসতে পারে হালুয়াঘাটের তাঁতিপাড়া।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার এই তাঁত পল্লীগুলো আবার তাদের খট খট শব্দের মাধ্যমে জেগে ওঠুক, ময়মনসিংহের উদ্যোক্তাদের তাঁত পণ্যের সোর্সিং করতে সহজ হবে এই তাঁতপল্লী সচল হয়ে ওঠলে।
তাঁতিদের তাঁতপণ্য গুলো ই-কমার্সের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে পরলে তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছার চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। চাহিদা বাড়লেই তাঁতিরা একটু লাভবান হবে এবং তাঁদের কাজে মনোযোগী হবে।
হালুয়াঘাটের তাঁতশিল্পের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে পারলে আবারো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খট খট যন্ত্রের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠবে সেসব তাঁতপল্লী। তাই এই ঐতিহ্যবাহী তাঁতপল্লীকে বাঁচিয়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরই।