খাতুনে জান্নাত আশা, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি, টেকজুম টিভি// ময়মনসিংহ সদরের একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা তাপস চন্দ্র পাল, যিনি কাজ করছেন মৃৎশিল্প বা মাটির তৈরী বিভিন্ন পণ্য নিয়ে, উদ্যোগের নাম “মাটি ও মৃৎশিল্প”। উদ্যোক্তার পাশাপাশি তিনি একজন ছাত্র, বিবিএ করছেন গাজীপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। গতবছর ৩১ শে মে ২০২০ থেকে ই-কমার্স সেক্টরে তার এই উদ্যোগের শুরু হলেও পেশাটা তার বংশগত ভাবেই শুরু হয়ে এসেছে, কারণ তার পরিবারের সবাই এর সাথে জড়িত।
মৃৎশিল্পের এই অসাধারন সব পণ্য তিনি কোথা থেকে সংগ্রহ করেন জানতে চাওয়া হলেই তিনি এ কথা বলেন যে, “এগুলো আমাদের পন্য, আমার মা বাবা তৈরি করেন, তাই আমাদের এগুলো সংগ্রহ করতে সোর্স খুঁজতে হয়না, বরং আমরাই এগুলো বানিয়ে গুদামজাত করে থাকি।“
এই শিল্প নিয়ে অনলাইনে কাজ করার কথা তিনি ভাবলেন কেনো জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, অনেকদিন যাবত তিনি দেখে আসছেন অনলাইনে মৃৎশিল্প নিয়ে অনেক মানুষ কাজ করছেন, কিন্তু বাস্তব জীবনে তারা এই পেশা বা এই পন্য উৎপাদনের সাথে জড়িত না বিধায় এই ব্যাপারে ১% ও জ্ঞান রাখেন না। তারা যেহেতু এই শিল্প নিয়ে কাজ করতে পারছে তবে তিনি কেনো পারবেন না! তিনি তো তাদের থেকে ভাল কিছু পারবেন , কেনো না এই পন্য সামগ্রীর উৎপাদনটাই তারা করে, পেশাটাই তাদের, তাই এর সম্পর্কে জানেন বেশি, ক্রেতাদেরকে তাই জানাতে পারবেনও বেশি। সেই চিন্তাধারা থেকেই তার এই শিল্প নিয়ে ই-কমার্স প্লাটফর্মে আগমন।
এই বিজনেসে কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “অনলাইনে এই মাটির পন্য নিয়ে ব্যবসা করার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো বাংলাদেশের কুরিয়ার এর বাজে সিষ্টেম। কারণ মাটির জিনিস একটা ভঙ্গুর পণ্য যত ভাল করেই প্যাকেজিং করে দেই না কেনো মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে পন্যটা ভাল ভাবে পৌছাবে তো? এইটাই অন্যতম প্রধান সমস্যা।“
মৃৎশিল্পের ক্রেতা চাহিদা সম্পর্কে তার মতামত হল, মাটির জিনিসের অনলাইন চাহিদা ১০০ এর মধ্যে ৪০ভাগ বলে মনে করেন তিনি। এই পন্য সবাই ক্রয় করতে চায়না, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন এবং সৌখিন নাগরিকদেরই এইসব পণ্যের প্রতি বেশি আগ্রহ, তারাই এগুলো ক্রয় করেন। কারণ মাটির হাড়ি পাতিলের রান্না সব থেকে স্বাস্থ্যসম্মত, এছাড়া কিছু সংখ্যক মানুষ শখের বসে কেনে শুধুমাত্র মাটির পাত্রে রান্না করবে আর অভিজাত ভাবে খাবার পরিবেশন করবে বলে। তার সবচেয়ে বিক্রিত পণ্য মাটির তরকারির পাতিল এবং কড়াই।
তাপস চন্দ্র পাল তার উদ্যোগের শুরু থেকে (৩১ শে মে ২০২০ থেকে) এই পর্যন্ত মোট ২ লক্ষ ৪২ হাজার টাকার মৃৎশিল্প সামগ্রী বিক্রয় করেছেন শুধুমাত্র অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমেই।
তার এই উদ্যোগ নিয়ে স্বপ্ন কি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “উদ্যোগ নিয়ে স্বপ্ন একটাই মাটির হাড়ি পাতিল যে গ্যাসের চুলায় ব্যবহার করা যায়, দৈনন্দিন রান্না খাওয়ার সব কাজে ব্যবহার করা যায়, এর সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা। আমি চাই আরো এগিয়ে যেতে,,আমার এই পণ্যের প্রচার বাড়াতে।“
এদেশের মৃৎশিল্পের শুরুটা যাদের হাত ধরে, সেই পাল সম্প্রদায়ের একজন উত্তরাধিকারী হিসেবে তাপস পাল চান, বাংলার হারানো এই ঐতিহ্য আবারো ফিরে আসুক গ্রামের পাশাপাশি এই শহুরে নগর জীবনেও। মৃৎশিল্প যেন বিলুপ্ত না হয়, যুগ যুগ ধরে যেন টিকে থাকে এটাই উনার প্রত্যাশা এবং এর জন্য তিনি একজন দায়িত্বশীল শিক্ষিত বংশধর হিসেবে এই ই-কমার্স সেক্টরের মাধ্যমে মৃতশিল্পকে জনপ্রিয় করে তুলতে কাজ করে যাবেন।