২০২১-২২ অর্থবছরের বাজাটে ই-কমার্স খাতকে করের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। ৭ জুন বিকালে জুম প্লাটফর্মে জাতীয় বাজেট নিয়ে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর যৌথ সেমিনারে এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় বাজেটে ই-কমার্স সেক্টরের প্রস্তাব, প্রাপ্তি ও দাবি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সারের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মো. আব্দুর রহিম খান, যুগ্ন সচিব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সমন্বয়ক বিজেনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি)।
বিশেষ অতিথি ছিলেন সিরাজুন নূর চৌধুরী, যুগ্ন সচিব (বাজেট ১) অর্থ মন্ত্রণালয়।
প্রধান অতিথি জনাব মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, বাজেটে যাতে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের দাবি দাওয়ার প্রতিফলন ঘটে সেজন্য বিপিসি সম্ভাব্য সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন এই সেক্টরকে নিয়মের মধ্যে আনতে আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আইন প্রণয়নের ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করতে বিপিসি ও ই-ক্যাব একসাথে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সরকারের নীতির তিনি বিষয়ে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার আইটি, আইটিইএস এবং মেডইন বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাই এ কমার্স সেক্টরের নীতি তৈরীর সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিরাজুন নূর চৌধুরী বলেন, বাজেটে অনেক সময় সরকার এমন কিছু সুবিধা যুক্ত করে যা পরে দেখা যায় সে খাতে খরচ হয় না তাই প্রতিটি সিদ্ধান্ত সরকারকে খুব সাবধানতার সাথে নিতে হয়।
ই-কমার্স সেক্টরের সমস্যা ও প্রস্তাবনাসমূহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে তুলে ধরার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ধরনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ এবং ই-কমার্স সেক্টরে সার্বিক কার্যক্রমের জন্য তিনি বিপিসি ও ই-ক্যাবকে ধন্যবাদ জানান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ফুডপান্ডার হেড অব ফিন্যান্স ও কোম্পানি সেক্রেটারি আওরঙ্গজেব হোসেন। তিনি এবারের বাজেটে ই-কমার্স সেক্টরের দাবির বিপরীতে বাজেট প্রস্তাবনার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন।
ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার এবারের বাজেট নিয়ে ই-ক্যাবের কর্মতৎপরতার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই খাত এখনো লাভের মুখ দেখেনি এবং বেশীরভাগ উদ্যোক্তা এখনো নিয়মিত হয়ে উঠেনি। তাই এই সময়ে ই-কমার্সখাতকে উৎসে করের আওতায় নিয়ে আসলে এর বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ হবে।
তিনি ই-বুক ও ই-লার্নিং থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান। এবং ই-ক্যাবের অন্যান্য দাবীসমূহ সরকার আমলে নিবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ই-ক্যাবের সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন ই-ক্যাবের ৬ দফা দাবী তুলে ধরেন এবং এসব দাবীর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন।
বিশেষ করে ই-কমার্স কোম্পানীর অফিস ও গুদামভাড়া মওকূপ, ক্রসবর্ডারে প্রণোদনা, নূনতম কর ০.১% করা, ভিডিএস কর্তন হইতে ৫ বছরের জন্য এই খাতকে অব্যাহতি প্রদান, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন এর সীমা ১ কোটি টাকা নির্ধারণ এবং অনলাইন পেমেন্টে ভ্যাট প্রত্যাহার, অনলাইন ডেলিভারীতে ভ্যাট ন্যুনতমকরণ, ফুড ডেলিভারী সেবায় ভ্যাট হ্রাসকরণসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।
ই-ক্যাবের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু বলেন, যেখানে এই খাতকে এখনো স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। সেখানে ভ্যাট আদায় কিংবা তাদেরকে উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার প্রস্তাব অযৌক্তিক। কারণ আইন যেখানে স্বীকার করে না দেশে ই-কমার্স বলে কোনো ব্যবসা আছে সেখানে আপনি তার উপর আইন প্রয়োগ করবেন কিভাবে? তিনি ই-কমার্স খাতের সাথে প্রথাগত ব্যবসার কর বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, ই-ক্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্লায়েন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা, বাংলা ক্রাফ্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদ হোসেন শামীম, সিন্দবাদ ডট কম এর সিইও জিএম কামরুল হাসান, ব্যারিস্টার শাওন এস নোবেল, মিজারুল মাশরাফি অন্তু।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভন।