দেশে ই-কমার্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধকারীদের কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। পাশাপাশি দ্রুততার সঙ্গে অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে তাদের অপরাধ দমন করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক ওয়েবিনারে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মাধ্যমে কিছু ই-কমার্স খাতে সন্দেহজনক লেনদেন করা গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট সাময়িক বন্ধ করা এবং সে সকল তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
ওয়েবিনারে অংশ নেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, অর্থনৈতিক অপরাধ এবং মানব পাচার ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশর সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল এবং নগদ-এর চিফ অপারেটিং অফিসার আশীষ চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ‘নগদ’-এর চিফ পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার সোলায়মান সুখন।
‘ই-কমার্স: বর্তমান পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওই ওয়েবিনারে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “মানুষ যেমন অপরাধের জন্য টেকনোলজি ব্যবহার করে, তেমনি টেকনোলজি দিয়ে অপরাধীদের দমন করতে হবে। ডিজিটাল অপরাধীকে দমনের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি দরকার যেমনটা ‘নগদ’ করছে।’ ‘ডিজিটাল অপরাধীদেরকে এখনই শাস্তি না দিতে পারলে ভবিষ্যতে তারা দশ গুণ বড় হয়ে সংখ্যাটা দশ গুণ বাড়িয়ে দেবে।”
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমরা এমন একটি ডিজিটাল সোসাইটি চাই, যেটা সম্পূর্ণভাবে অপরাধ মুক্ত থাকবে।” তিনি বলেন, “নগদ ডাক বিভাগেরই একটি সেবা। সুতরাং সরকারের দিক থেকে বলতে পারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে, যাতে তারা সহজেই অপরাধীদেরকে খুঁজে বের করতে পারে।”
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, “মানি লন্ডারিং আইনে ৪ থেকে ১২ বছরের শাস্তি এবং যে অর্থ প্রতারণা করছে তার দ্বিগুণ জরিমানা করার নিয়ম রয়েছে। এই আইনের আওতায় যেকোনো প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্য দিতে বাধ্য। এ ছাড়া একজন ব্যক্তি কোথায় এবং কোন প্রতিষ্ঠানে টাকা ট্রান্সফার করেছে, সে বিষয়ে তথ্য দিতে বাধ্য। প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বপ্রণোদিত হয়েও তথ্য দিতে হয়। অস্বাভাবিক লেনদেনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠাই।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে ‘নগদ’-এর চিফ অপারেটিং অফিসার আশীষ চক্রবর্তী বলেন, “লেনদেনে আমরা সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্টের কেবল তালিকা শেয়ার করতে পারি, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাকি কাজটা করে থাকে। তবে সন্দেহভাজনের মধ্যে কিছু অ্যাকাউন্ট হয়তো রয়েছে যারা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না-ও হতে পারেন, আমরা আপাতত সেই অ্যাকাউন্টগুলোও বন্ধ করেছি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি করবে, তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।”
তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী বিএফআইইউ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অপরাধ যারা করেছেন, তারাই এখন দেখছি ‘নগদ’-কে নিয়ে নানান রকম প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন।”
ই-কমার্সে প্রতারকদের শাস্তির বিষয়ে সিটিটিসি-এর কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “২০১৮ সালে ই-কমার্সের যে নীতিমালা হয়, সেখানে পুলিশকে ইনভলভ করা না হলেও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ২২ ও ২৩ ধারা ও প্যানেল অ্যাক্ট অনুসারে পুলিশ এখানে ব্যবস্থা নিতে পারে। আর ভোক্তারাও থানায় অভিযোগ করতে পারেন, যেখানে অপরাধীকে ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনা যায়।”
তিনি বলেন, “যে ই-কমার্সগুলো প্রতারণা করছে, তাদের ক্ষেত্রে অ্যাকশন নিতে হবে এবং অসাধু ই-কমার্স ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান নেওয়ার এখনই প্রকৃত সময়।”
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, “যে ই-কমার্সগুলো প্রতারণা করছে, তাদের ক্ষেত্রে অ্যাকশন নিতে হবে এবং অসাধু ই-কমার্স ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান নেওয়ার এখনই প্রকৃত সময়।”
সম্প্রতি ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে সন্দেহজনক লেনদেনের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। নগদ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে বেশ কিছু সন্দেহভাজন লেনদেন সনাক্ত করে সেসব অ্যাকাউন্টের তথ্য একাধিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। পাশাপাশি সাময়িকভাবে অ্যাকাউন্টগুলোর লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়েছে।