আলোচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালিকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করতে কাগজ-কলমে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মো. রাসেল ও সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। যদিও হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বোর্ড বলছে, এই মামলায় হাইকোর্টের একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
২০২০ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে দুদক। সেসময় দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপ-সহকারী পরিচালক শিহাব সালামকে নিয়ে দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। দুদকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৫ কোটি ১৭৮ লাখ টাকা। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটির দায়দেনার পরিমাণ ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম হিসেবে নেওয়া দায় প্রায় ২১৪ কোটি টাকা। আর মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির দেনা ১৯০ কোটি টাকা।
দুদকের তথ্য বলছে, স্বাভাবিক নিয়মে ইভ্যালির কাছে ৪০৪ কোটি টাকার সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু ইভ্যালির কাছে চলতি সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার, যা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তার চলতি দায়ের বিপরীতে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে।
তবে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন না করে গ্রাহক-বিক্রেতাদের দেনা-পাওনা পরিশোধের বিষয়ে হাইকোর্ট একটি বোর্ড গঠন করে দেন। বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নাম ঘোষণা করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নাম পাঠানো তিন জনের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. রেজাউল আহসান (স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগ), চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে ফখরুদ্দিন আহমেদ ও আইনজীবী হিসেবে খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ এবং সরকারি বেতনে এক্স অফিসিও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে অতিরিক্ত সচিব (ওএসডি) মাহবুব কবিরের নাম ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু দেনার দায়ে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্ধকারে পড়ে যান হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বোর্ড। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির স্বল্পসংখ্যক কর্মীর বেতন মেটাতে বিক্রি করতে হয় ইভ্যালির গুদামে থাকা পচনশীল পণ্য ও প্রতিষ্ঠাতা মো. রাসেলের বিলাসবহুল গাড়িটি।
এদিকে গত ৬ এপ্রিল জামিনে কারামুক্তি পান প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। এর কিছু দিন পর ইভ্যালিকে পুনরায় চালু করার বিষয়ে আদালতের নির্দেশে গঠিত বোর্ডের কাছে আবেদন করেন তিনি।
তার আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় চালু করার বিষয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে। একই আবেদনে তাকে (শামীমা নাসরিন), তার মা ও বোনের স্বামীকে পরিচালনা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
আবেদনটি পাওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমরা আবেদনটি পেয়েছি। এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশ হয়েছে। আমরা আদেশের অনুলিপি এখনও হাতে পাইনি। খুব শিগগিরই তা হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই আদেশের কপি হাতে পেলে আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানাতে পারবো। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’