চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই পর্যায়ে এসে প্রতিটি দেশ প্রযুক্তির গুরুত্ব খুব ভালোভাবেই টের পাচ্ছে। তাই সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছি কিভাবে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটানো যায় এবং এনিয়ে অনেক গবেষণাও হচ্ছে। আমাদের দেশও এদিক থেকে পিছিয়ে নেই। সরকার এখন “স্মার্ট বাংলাদেশ” গড়ার লক্ষ্যে প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠতে সাধারণ নারী-পুরুষ সবার জন্য বিশেষ ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করছে যেন “স্মার্ট বাংলাদেশ” গড়ায় তারা তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে। দেশি পণ্যের একজন অনলাইন উদ্যোক্তা হিশেবে আমি মনে করি আমরা যারা অনলাইনে উদ্যোগ পরিচালনা করছি তা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা করবে। কারন এর ফলে অনলাইনে দেশীয় পণ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
একটা সময় ছিল যখন দেশি পণ্যের অফলাইনেই তেমন প্রচারণা ছিল না আর অনলাইনতো অনেক দূরের কথা। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক সহজলভ্য হওয়াতে অনলাইন উদ্যোক্তার সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। তবে প্রথম দিকে এসব উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিদেশি পণ্য নিয়ে কাজ করার মানসিকতা বেশি ছিল। কিন্তু দেশি পণ্যের প্রচার এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করছে। এখন অনলাইন উদ্যোক্তারা দেশি পন্য নিয়ে কাজ করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যেবোধ করে। বিশেষ করে এ বছর দেশীয় শীতকালীন পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে কারন এ বছর তুলনামূলকভাবে শীত একটু বেশিই পড়েছে।
শীতকালীন পোশাকের মধ্যে শাল অন্যতম। দেশীয় শালের মধ্যে খাদি, বাটিক, জামদানি, মণিপুরী, ভিসকস, খেশ ইত্যাদি শাল অনলাইনে গত কয়েক বছর ধরে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। অথচ এসব শালের কথা অফলাইনেও এক সময় তেমন একটা শুনা যেতো না। দেশি পণ্যের একজন খাদি উদ্যোক্তা হিশেবে বিগত কয়েক বছরে অনলাইনে দেশীয় খাদি শালের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে দেখেছি। এর অন্যতম কারন খাদি শাল নিয়ে অনলাইনে অনেক লেখালেখি হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্যোক্তারা খাদি নিয়ে কাজ করতে পারছে। যা খাদি শালের নতুনত্ব বৃদ্ধি করেছে।
অনলাইনে উদ্যোগ পরিচালনার জন্য এখন খাদি উদ্যোক্তার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর ফলে খাদি শালের কাট, লুক এবং ডিজাইনের অনেক ভেরিয়েশন এসেছে। কারন একেকজন উদ্যোক্তা তার উদ্যোগের খাদি পণ্যগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন কাজ এড করে পণ্যের ভেলু বাড়াতে সক্ষম হচ্ছে। এই যেমন এক সময় এক রঙের খাদি শালের আধিপত্য বেশি থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন ডিজাইন এবং প্যাটার্নের শাল লক্ষ্য করা যায়। সেই সাথে শাল তৈরির কাপড়টিতে বিভিন্ন কাটের মাধ্যমে নতুন লুক দেয়াও সম্ভব হচ্ছে যা শীতকালীন খাদি পোশাকের ভেরিয়েশন বাড়াতে সহায়তা করছে। সেই সাথে নতুন নতুন বিভিন্ন ডিজাইন যেমন ঃ হ্যান্ডপেইন্ট, বাটিক, ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্রাশ প্রিন্ট, হাতের কাজ ইত্যাদি খাদি শালে নতুনত্ব আনতে সহায়তা করছে। আবার শীতকালে বিয়ের মৌসুম থাকার ফলে বিয়ের কনের জন্যও খাদি কাপড় দিয়ে শাল তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে দিন দিন খাদি শালের পুরনো সেই চাহিদা আবার ফিরে আসছে।
এছাড়া অনলাইনে শালের ছবি, ভিডিও, শাল নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি ইত্যাদির মাধ্যমে যত দিন যাচ্ছে অনলাইনে খাদি শালের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশি শালের আধিপত্য কমাতে গত দুই বছর ধরে অনলাইনে দেশীয় শালের প্রচার ব্যাপকভাবে সাফল্য অর্জন করেছে বললেও ভুল হবে না। কারন অনলাইন উদ্যোক্তারা শুধু দেশীয় শালের প্রচার নয় সেই সাথে মান উন্নয়নের বিষয়টির দিকেও খেয়াল রাখছে এবং শাল নিয়ে রিসার্চ করার ফলে ক্রেতা কি ধরনের শাল পছন্দ করে এনিয়েএ বিস্তারিত জানা সম্ভব হচ্ছে।
আশা করি এভাবে অনলাইন প্রচারণার ফলে এক সময় দেশীয় শাল অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদা পূরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে।