শুক্রবার স্টেট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের আয়োজনে “From Poetry to Passion: English Graduates in an Entrepreneurial Age” শীর্ষক উদ্যোক্তা সামিট ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইয়ং স্টরি টেলার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহজসাধ্যের স্বত্বাধিকারী সৈয়দা ক্যামেলিয়া রহমান।
তিনি একজন শিক্ষিত নারী হয়ে হোমমেইড ফুডের উদ্যোক্তা হওয়ার জার্নি শেয়ার করে বলেন, আমি সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে একটি প্রাইভেট কলেজে শিক্ষকতা করেছি প্রায় ৮ বছর। এরপর নিজের সন্তানকে সময় দেয়ার জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর বাসার কাজ গুলো মেইনটেইন করা সন্তান কে সময় দেয়াই ছিলো আমার সারাদিন রাতের রুটিন। তবে বাসায় সব সময় থাকার কারনে অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি একটিভ হওয়ার সুযোগ পাই। যে কারণে আমি বুঝতে পারি সংসার এবং বাচ্চা কে সময় দেওয়ার পাশাপাশি ঘরে থেকেই আমার অনলাইন উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ঠিক ঐ সময়েই ফেসবুক গ্রুপ ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপে জয়েন করা হয়। সেখানে গ্রুপের এডমিন এবং ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের অনবদ্য সৃষ্টি আরিফা মডেলের বিভিন্ন ধাপ ফলো করে নিজের ভাল লাগার কাজ রান্নাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে হোমমেইড ফুড নিয়ে পথ চলা শুরু করি।
অনলাইন ফুড উদ্যোক্তারা যে শুধুমাত্র খাবার তৈরি করা এবং কাস্টমার পর্যন্ত ডেলিভারী করা, এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বিষয়টি এমন নয়। হোমমেইড ফুড উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে সমগ্র বিষয় টি রন্ধন বিজ্ঞান এবং রন্ধন শিল্পের একটি চমৎকার সমন্বয়। হোমমেইড ফুড উদ্যোক্তাদের খাদ্য বিজ্ঞান, পুষ্টি গুণাবলী সম্পর্কে একটি সামগ্রিক ধারনা থাকতে হয় এবং প্রতিটি উপকরণের পরিমিত ব্যবহার রন্ধন শব্দটিকে শিল্প পর্যায়ে নিয়ে যায়।
ই-কমার্স সেক্টরে কাস্টোমার এবং উদ্যোক্তা দুপক্ষই শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। একজন শিক্ষিত উদ্যোক্তা রন্ধন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এবং শিল্পের সমন্বয় যেমন ঘটাতে পারেন পাশাপাশি পণ্যের প্রচারনা, মূল্য নির্ধারণ, কাঁচামাল সংগ্রহ, প্রস্তুতি শেষে সঠিক সময়ের মধ্যে পণ্যের ডেলিভারী নিশ্চিত করা এই সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা সেই উদ্যোক্তা একাই নিয়ন্ত্রণ করেন। একই ভাবে একজন শিক্ষিত এবং স্বাস্থ্য সচেতন কাস্টোমার হোমমেইড ফুড উদ্যোক্তার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অবগত হয়েই কাস্টোমার হয়ে থাকেন এবং হোমমেইড ফুড কে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন।
হোমমেইড ফুড শুধু শখের খাবারের চাহিদা পূরণ করে না। বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীর খাবার, বাসায় দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থ রোগীদের খাবারও তৈরি করে থাকেন উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে অবশ্যই রোগীর ডায়েট চার্ট সম্পর্কে অবগত হয়েই কোন উপকরণ খাবারে ব্যবহার করা যাবে, কোন উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না, কি পরিমাণে ব্যবহার করা যাবে যে বিষয়ে বিশেষ সতর্কতার সাথে কাজ করে থাকেন হোমমেইড ফুড উদ্যোক্তারা। এজন্যই ডক্টররা বলে থাকেন একজন অসুস্থ রোগীর দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য মেডিসিনের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন পদ্ধতির গুরুত্ব অনেক বেশি। এ সব কিছুই মেইনটেইন করার জন্য অবশ্যই শিক্ষিত নারী হোমমেইড ফুড উদ্যোক্তাদেরকেই প্রয়োজন। তাই হোমমেইড ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে শিক্ষিত নারী উদ্যোক্তাদের ভাল করার সুযোগ রয়েছে অনেক বেশি।
চাকরি ছেড়ে যখন বাসায় বসেছিলাম ঐ সময়টা তে তখন আমি হতাশ থাকতাম। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারি ঐ সময়টাতেই আমি অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়া তে অফুরন্ত সময় দিতে দিতে পেরেছিলাম জন্যই আজ আমি হোমমেইড ফুড উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে পারছি। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার আমাদের মেধার এবং কাজের পরিধিকে অনেক দূর প্রসারিত করতে পারে। খুব সাধারন কেউ চাইলেই এই প্রযুক্তি কে সঠিক ভাবে ব্যবহার করে একজন অসাধারণ উদ্যোক্তাও হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে স্বল্প কর্মসংস্থান সম্পন্ন আমাদের দেশের মত যায়গায় শিক্ষিত কর্মক্ষম নারীরা ঘরে থেকেই নিজেকে হোমমেইড ফুড উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে সফলতার সাথে। আমি ক্যামেলিয়া একজন শিক্ষিত নারী হিসেবে একজন হোমমেইড ফুড উদ্যোক্তা হিসেবে গর্বিত।