গত ১০ বছরের তুলনায় চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সব মিলিয়ে বলতে হয়, জিআই পণ্যের সবচেয়ে বেশি প্রচার ও প্রসার বেড়েছে ২০২৩ সালে। এই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সাল হবে জিআই পণ্যের বছর।
২০২৩ সালের প্রথম দিন জিআই পণ্য নিয়ে নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু হয়েছিল আরিফা মডেল অনুসরণ করা কিছু উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে। এর মূলে ছিল ময়মনসিংহের খাতুনে জান্নাত আশা এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সাবেক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজিব আহমেদ। এছাড়াও ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি) এর প্রেসিডেন্ট কাকলী তালুকদার, তার টিম ও আরিফা মডেল অনুসরণ করা দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তারা। সকলের প্রচেষ্টায় জিআই পণ্য নিয়ে প্রচার, আবেদন ও স্বীকৃতির সংখ্যা বেড়েছে।
ফেসবুক ও গণমাধ্যমে প্রচারের কারণে বিভিন্ন মহলে জিআই পণ্য নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এটি জিআই পণ্যের ভবিষ্যতের জন্য একটি ভালো দিক। সবাই নিজ নিজ ভৌগোলিক অঞ্চলের পণ্যের স্বীকৃতি পেতে সচেতন হচ্ছে। ইতমধ্যে পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিপি) ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজার জার্নাল প্রকাশ পেয়েছে। যা এখন স্বীকৃতির অপেক্ষায়। এই চারটি পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার পর দেশে আগামী বছরের শুরুর দিকেই জিআই পণ্যের সংখ্যা ২১টিতে পৌঁছবে। যা ২০২২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১১টিতে স্থীর ছিল।
২০২৪ সালে মুক্তাগাছার মন্ডা, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, যশোরের খেজুর গুড়, রংপুরের হারিভাঙ্গা আম, নরসিংদীর সাগর কলা, নরসিংদীর লটকন, রাজশাহীর মিষ্টি পান, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, মাগুরার হাজরাপুরের লিচু, মনিপুরি শাড়ি, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার ছানামুখী, জয়পুরহাটের কচুর লতি, শেরপুরের ছানার পায়েস, টাঙ্গাইলের আনারস, জামালপুরের নকশিকাঁথা সহ আরও কিছু পণ্য জিআই স্বীকৃতির আওতায় চলে আসতে পারে। এছাড়াও নতুন নতুন কিছু পণ্যের আবেদন হতে পারে।
চলতি বছরের ২০শে জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ, ডিপিডিটি ও ইডিসি মিলে ’বাংলাদেশের জিআই পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিকল্প ও চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আগামী বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আয়োজনের সংখ্যা বাড়ালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিআই পণ্য নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও জিআই পণ্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এটি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক হবে।
যে ১৭টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে সেগুলোর ব্যবহারকারী রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করার সময় এসেছে। এই কাজটি করা শুরু হলে জিআই পণ্য নিয়ে উৎপাদনকারীদের মধ্যে আরও বেশি সচেতনতা ও আগ্রহ সৃষ্টি হবে। একই সাথে অন্যান্য সম্ভাব্য জিআই পণ্যের আবেদনের করার ব্যপারে তারা ইচ্ছাপোষণ করবে।
আবেদেন করার ব্যপারে জেলা পর্যায়ে অভিক্ষ লোক খুঁজে বের করা দরকার। যারা নিজ জেলার সম্ভাব্য পণ্য চিহ্নিত করে আবেদন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আবেদনকারীদের সার্বাত্মক সহযোগিতা করবে। জিআই পণ্য আবেদনের সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে ডকুমেন্টেশন তৈরি করা। সেখানে রেফারেন্স যুক্ত করা। এই কাজটি এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে জিআই নিয়ে দক্ষ লোকেরা।
সর্বত্র দেশি পণ্যের কদর বাড়াতে এবং আমদানিকৃত পণ্যের উপর থেকে নির্ভরতা কমাতে জিআই স্বীকৃতির বিকল্প নেই। এর জন্য ২০২৪ সালে সর্ব মহল নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করা দরকার। তাহলে খুব শীঘ্রই জিআই পণ্যের সুবিধা ভোগ করতে পারবে ক্রেতা বিক্রেতা সকলে।
লেখক: জেনিস ফারজানা তানিয়া। স্বত্বাধিকারী, আলিয়ার’স কালেকশন।