২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী অনলাইনে কেনাকাটা করেছেন ২৭১ কোটি মানুষ, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার বিচারে ৩৩ শতাংশ। এ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। আগামী বছর অনলাইন ক্রেতার সংখ্যা ২৭৭ কোটি হবে বলে ধারণা করছে অনলাইন রিসোর্স ও ডাটা বিশ্লেষণ প্লাটফর্ম ডিমান্ডসেইজ। সংস্থাটির মতে, ইন্টারনেটের বিস্তার ও বিভিন্ন সুবিধার কারণে মানুষ অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে।
ডিমান্ডসেইজের তথ্যানুযায়ী, অনলাইনে কেনাকাটার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে চীন। দেশটির ৯১ কোটি ৫১ লাখ মানুষ কেনাকাটার জন্য অনলাইন মাধ্যম বেছে নেন। এছাড়া ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ২৭ কোটির বেশি মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করেছেন। ২০২২-২৩ সালের মধ্যে অনলাইন ক্রেতার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায়, যা ৫ শতাংশের বেশি। এ সময় বিশ্বব্যাপী অনলাইন ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে ৩ শতাংশ।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সব খুচরা (রিটেইল) বিক্রির ২০ শতাংশের বেশি হয়েছে অনলাইনে। ২০২৭ সালে যা বেড়ে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসার অনলাইন বিভাগে আরো বেশি বিনিয়োগ করা উচিত। খুচরা বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকার জন্য এটি অপরিহার্য।
বর্তমানে ট্রিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক শিল্পের একটি ই-কমার্স। ডাটা বিশ্লেষণ প্লাটফর্মটির পূর্বাভাস বলছে, ২০২৪ সাল শেষে বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স বাজারের বিক্রির পরিমাণ ৬ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ৬ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করবে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২৭ সালের মধ্যে এ খাতে বিক্রয় প্রতি বছর ৭ দশমিক ৮ হারে বাড়বে। ২০২৭ সাল শেষে বৈশ্বিক ই-কমার্স বাজারের আকার দাঁড়াবে ৮ লাখ কোটি ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, ফিজিক্যাল স্টোরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে অনলাইন স্টোর। ফলে ই-কমার্স বিশ্বব্যাপী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরো লাভজনক বিকল্প হয়ে উঠছে।
চলতি বছর পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স সাইটের সংখ্যা ২ কোটি ৭২ লাখ। সংখ্যাটি আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৬৮৫টি নতুন ই-কমার্স সাইট চালু হয়েছে। বিশ্বব্যাপী এসব ই-কমার্স সাইটের অর্ধেকই যুক্তরাষ্ট্রের। এ বাজারে দেশটিতে শীর্ষে আছে জনপ্রিয় ই-কমার্স পরিষেবা অ্যামাজন। ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওয়ালমার্ট।
মোবাইল ই-কমার্স অর্থাৎ মোবাইল ডিভাইস (যেমন স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট) ব্যবহার করে অনলাইনে পণ্য বা সেবা কেনাবেচাও দ্রুত বাড়ছে। ২০২৩ সালে এ খাতে বিশ্বব্যাপী বিক্রি হয়েছে চার লাখ কোটির বেশি পণ্য। যেখানে ২০২২ সালে বিক্রি হয় ৪৪ হাজার কোটির বেশি।
ডিমান্ডসেইজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৪ শতাংশ ক্রেতা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার অনলাইনে কেনাকাটা করেন। প্রতি মাসে অন্তত একবার অনলাইনে কেনাকাটা করেন এমন ক্রেতার সংখ্যা ৮২ শতাংশ।
কর্মব্যস্ত জীবনে সময় স্বল্পতার কারণে অনেকেই কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট, অ্যাপ কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন। সময়ের সঙ্গে কয়েক বছর ধরেই অনলাইন কেনাকাটা অনেকের জীবনেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে কেনাকাটায় সুবিধা হলেও অনলাইন প্লাটফর্ম হওয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে অনলাইন শপিংয়ের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। তাই প্রযুক্তিবিদদের মতে, অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান থেকে বিরত থাকা, ক্যাশ অন ডেলিভারি নিশ্চিত করার বিষয়গুলো খেয়াল রাখা প্রয়োজন।