বাংলাদেশে ই-কমার্স খাত গত এক দশকে দ্রুত বিকাশ ঘটিয়েছে। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের বিস্তৃতি, নগরায়ণ এবং তরুণ প্রজন্মের প্রযুক্তি গ্রহণযোগ্যতার কারণে দেশে অনলাইন বাণিজ্য এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজন। একসময়ের বিলাসবহুল ধারণা এখন মধ্যবিত্তের নিত্য প্রয়োজনীয় অংশ হয়ে উঠেছে। ফেসবুক পেইজ থেকে শুরু করে বড় বড় প্ল্যাটফর্ম—সবার লক্ষ্য এখন দেশের কোটি কোটি গ্রাহককে ঘরে বসে কেনাকাটার অভ্যেসে অভ্যস্ত করে তোলা।
তবে এই খাতে সম্ভাবনার পাশাপাশি রয়েছে কিছু জটিল চ্যালেঞ্জ। গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা, সময়মতো পণ্য না পৌঁছানো, নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ, রিফান্ড জটিলতা ও স্বচ্ছতা ঘাটতির মতো সমস্যাগুলো ই-কমার্সের প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়নে দুর্বলতা। একাধিক অনলাইন প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে।
২০২১ সালে দেশের কিছু নামকরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তোলপাড় শুরু হলে বিষয়টি জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। এরপর সরকার কিছু উদ্যোগ নিলেও এখনো একটি সমন্বিত, প্রযুক্তিনির্ভর ও কার্যকর নিয়ন্ত্রক কাঠামো গড়ে ওঠেনি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর বাস্তবায়নের পথে এ যেন এক বড় অন্তরায়।
অন্যদিকে, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ই-কমার্স এখনো একটি বড় সম্ভাবনার জায়গা। স্বল্প মূলধন, সীমিত স্থানের মধ্যেই একটি ছোট অনলাইন ব্যবসা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে আশাব্যঞ্জক। সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন উদ্যোগে প্রশিক্ষণ, ফিনান্সিং ও প্রযুক্তি সহায়তা এ খাতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে।
তবে এই গতিকে টেকসই করতে হলে প্রয়োজন স্বচ্ছতা, আস্থা ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা। গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল পেমেন্টের নিরাপত্তা, পণ্য ফেরত ও রিফান্ড পলিসির কার্যকর বাস্তবায়ন—এসবই হতে হবে ই-কমার্স ব্যবস্থার অংশ।
এখন সময় এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী, স্বয়ংক্রিয় এবং ন্যায়ভিত্তিক ই-কমার্স নীতি বাস্তবায়নের। কেবল আইন করলেই হবে না, দরকার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োগ। একইসঙ্গে অনলাইন বিক্রেতাদের জন্যও থাকতে হবে প্রশিক্ষণ ও নৈতিক বাণিজ্যের অনুশীলন।
বাংলাদেশের ই-কমার্স অর্থনীতির ভবিষ্যৎ রূপ নির্ধারণে এখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা শুধু এই খাত নয়—সারা দেশের ডিজিটাল অগ্রগতির গতিপথও নির্ধারণ করবে।
বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত ও এর চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে ই-কমার্স খাত গত এক দশকে দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। ডিজিটাল লেনদেন, ঘরে বসে কেনাকাটার সুবিধা এবং উদ্যোক্তা বৃদ্ধির ফলে এই খাত হয়ে উঠেছে নতুন প্রজন্মের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। তবে এই খাতে এখনও বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
১. বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব: কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা ও পণ্যে দেরি করে সরবরাহের কারণে গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হয়েছে।
২. নিয়ন্ত্রণ ও নীতিমালার দুর্বলতা: একটি কার্যকর নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অভাব এবং বিদ্যমান নীতিমালার বাস্তবায়নে ঘাটতির কারণে প্রতারণা রোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
৩. লজিস্টিক ও ডেলিভারি চ্যালেঞ্জ: বিশেষ করে গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সময়মতো ডেলিভারি পৌঁছানো এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
৪. ডিজিটাল পেমেন্ট ও সাইবার নিরাপত্তা: অনেক গ্রাহক এখনও ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারেন না। পাশাপাশি, তথ্য চুরি ও সাইবার হুমকিও একটি বড় সমস্যা।
৫. প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা: আন্তর্জাতিক ও বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দেশীয় ছোট উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।
ই-কমার্স খাতকে টেকসই করতে হলে স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা, কার্যকর নীতিমালা এবং প্রযুক্তিগত অবকাঠামো আরও শক্তিশালী করা জরুরি।