দেশজুড়ে ই-কমার্সের প্রসারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কুরিয়ার সার্ভিসের চাহিদা। তবে ই-কমার্স পণ্য ডেলিভারিতে ই-কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর বিরুদ্ধে গাফিলতি, বিলম্ব এবং পণ্যের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর কার্যকর নজরদারি এখনো নিশ্চিত হয়নি।
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলছেন, ই-কুরিয়ার সার্ভিসগুলো অর্ডার নেওয়ার সময় নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার অর্ধেকও পালন করে না। অনিয়মিত ডেলিভারি, অল্পমূল্যের পণ্য হারিয়ে ফেলা বা নষ্ট করে ফেলার ঘটনা নতুন কিছু নয়।
মনিটরিংহীন কুরিয়ার ব্যবস্থা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে বেশ কয়েকবার ই-কুরিয়ার সেবার মান উন্নয়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনো কার্যকর মনিটরিং মেকানিজম চালু হয়নি।
বিভিন্ন শহর ও গ্রামে কুরিয়ার হাব গড়ে উঠলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এখনো লাইসেন্স সংক্রান্ত নিয়মকানুন মানছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ই-কুরিয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, দেশে এখন ১৫০০-এর বেশি ই-কুরিয়ার সার্ভিস সক্রিয়। এর মধ্যে মাত্র ৩০% প্রতিষ্ঠান সরকারের অনুমোদিত তালিকাভুক্ত। বাকিরা চলছে নিজস্ব নিয়মে, কোনোরকম মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই।
গ্রাহক ভোগান্তির চিত্র
একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ,
-
সময়মতো পণ্য ডেলিভারি না হওয়া
-
প্যাকেজ হারিয়ে যাওয়া
-
পণ্যের ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পৌঁছানো
-
ক্ষতিপূরণ না পাওয়া
ঢাকার মিরপুরের একজন অনলাইন উদ্যোক্তা জানান, “আমি ২০টি পণ্য পাঠিয়েছিলাম, যার মধ্যে ৫টি প্যাকেজ হারিয়েছে কুরিয়ার। এক মাস ধরে ঘুরেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি।”
কী বলছে কর্তৃপক্ষ?
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, “ই-কুরিয়ার সার্ভিসের নীতিমালা আপডেটের কাজ চলছে। নজরদারি জোরদারের জন্য নতুন গাইডলাইন আসবে।“
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু নীতিমালা নয়, প্রয়োজন দ্রুত বাস্তবায়ন এবং কঠোর মনিটরিং।
সামনে কী করণীয়?
বিশ্লেষকরা বলছেন,
-
প্রতিটি ই-কুরিয়ার কোম্পানির বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিং
-
পণ্য হারানো বা নষ্ট হওয়ার দায়ে জরিমানা
-
গ্রাহক অভিযোগের জন্য স্বাধীন অভিযোগ নিষ্পত্তি সেল
-
ই-কুরিয়ার সার্ভিসের জন্য আলাদা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন
এই পদক্ষেপগুলো ছাড়া ই-কমার্সের সঙ্গে সম্পর্কিত গ্রাহক আস্থা পুরোপুরি ফিরবে না বলে মনে করছেন তারা।