বাংলাদেশে স্থাপিত স্যামসাং কারখানায় গত এক বছরে ১৫ লাখ ফোরজি স্মার্টফোন উৎপাদিত হয়েছে। এর ফলে স্যামসাং দেশের বাজারে স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হিসেবে অর্থমূল্য এবং সর্ব্বোচ্চ বিক্রির সংখ্যা উভয় বিচারেই চলতি বছরে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এই এক বছরে স্যামসাং কারখানায় এক হাজার বাংলাদেশি তরুণের প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন কর্মী হিসেবে কর্মসংস্থান হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সময় কারখানা স্থাপনের বর্ষপূর্তিতে আগামী দশ দিন পর থেকেই স্যামসাং স্মার্টফোন কোন ধরনের পূর্বমূল্য (ডাউন পেমেন্ট) ছাড়াই কিস্তিতে বিক্রির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশে স্যামসাং স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স।
সংবাদ সম্মেলনে দেশে স্মার্টফোন উৎপাদন এবং প্রযুক্তি পণ্যে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ উৎসাহিত করতে কিছু অসাধু কোম্পানির তৃতীয় পক্ষ ব্যবহার করে ‘আন্ডার ইন ভয়েসিং’ বা বাজার মূল্যের চেয়ে কমমূল্য দেখিয়ে স্মার্টফোন আমদানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুব।
এতে আরও বক্তব্য দেন- স্যাসমাং বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার স্যাংওয়ান ইয়ুন এবং ফেয়ার গ্রুপের চিফ মার্কেটিং অফিসার মো.মেজবাহউদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়ন ডিরেক্টর এইচ ডি লি, জেনারেল ম্যানেজার বোমিন কিম, হেড অব মার্কেটিং আশিক হাসান, হেড অক প্রোডাক্ট ফজলুর মুশাইর চৌধুরী ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া স্যামসাং ব্রান্ডের প্রায় ৯৫ শতাংশই র্স্মাটফোনই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লোগো সহ বাংলাদেশে উৎপাদিত। আগামী দুই মাসের মধ্যে স্যামসাং এর ফ্ল্যাগশিপ মডেল ‘এস’ ও ‘নোট’ সিরিজের উচ্চ স্মার্টফোনও বাংলাদেশে উৎপাদন শুরু হবে। এর ফলে বাংলাদেশের বাজারে এই উচ্চ প্রযুক্তির স্মার্টফোনও আগের চেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে। এর ফলে বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া একশ’ ভাগ স্যামসাং স্মার্টফোনই হবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’।
এতে আরও জানানো হয়, আগে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে স্মার্টফোন কেনার সুযোগ ছিল। এখন স্যামসাং সেই সুযোগকে আরও সহজ করছে। এখন থেকে ব্যাংকের ক্রেডিট ছাড়াই এবং কোন পূর্ব জমা মূল্য বা ডাউন পেমেন্ট ব্যতিরেকে কিস্ততিতে কেনা যাবে স্যামসাং স্মার্টফোন। আগামী দশ দিনের মধ্যে এ সেবা চালু সংক্রান্ত ঘোষণা আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্টের সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানানো হয়, বর্তমানে অর্থমূল্য এবং সর্বোচ্চ বিক্রির সংখ্যা, উভয় দিক থেকেই স্যামসাং ব্র্যান্ড বাংলাদেশের বাজারে শীর্ষে রয়েছে। অর্থমূল্যে বর্তমানে স্যামসাং স্মার্টফোনের মার্কেট শেয়ার ৪৩ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ বিক্রির দিক দিয়ে ৩১ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, বর্তমান সরকারের গৃহীত সহায়ক নীতির কারণেই দেশের কারখানায় বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন সফলভাবে উৎপাদন এবং বাজারজাত করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সরকারের সংশ্নিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কিছু ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন মূল উৎপাদকের মাধ্যমে রপ্তানি না করে অসাধু উদ্দেশ্যে প্রায় নাম পরিচয়বিহীন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রপ্তানি করা হচ্ছে। আর এসব ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্য দেখিয়ে বা ‘আন্ডার ইন ভয়েসিং’ কৌশল নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি দেশীয় স্মার্টফোন উৎপাদন শিল্পও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
তিনি এ ধরনের অসাধু পন্থায় এবং চোরাচালানোর মাধ্যমে স্মার্টফোন আমদানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের নীতি নির্ধারকদের প্রতি অনুরোধ জানান।