বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে আধিপত্যের পতন ঘটতে যাচ্ছে স্যামসাংয়ের। বাজার দখলে শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও ডিভাইস সরবরাহ বিবেচনায় স্মার্টফোন বাজারে হুয়াওয়ের সঙ্গে স্যামসাংয়ের যে ব্যবধান, তা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের বৃহৎ টেলিযোগাযোগ ও দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ে স্মার্টফোন সরবরাহে প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাংয়ের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে চলতি বছর শেষে স্যামসাংয়ের দখল ২১ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। চলতি বছরজুড়ে স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন সরবরাহ ৩২ কোটি ৩০ লাখ ইউনিটে পৌঁছতে পারে। অন্যদিকে বাজারটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী হুয়াওয়ের দখল ১৭ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। চলতি বছর প্রতিষ্ঠানটির স্মার্টফোন সরবরাহ ২৫ কোটি ১০ লাখ ইউনিটে পৌঁছার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর শেষে স্মার্টফোন বাজারে হুয়াওয়ের দখল ছিল ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ, যা চলতি বছর ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার টানা কয়েক প্রান্তিক ধরে খারাপ সময় পার করছে। এর পরও হুয়াওয়ের বাজার দখল প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া চলতি বছর মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে হুয়াওয়েকে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যকার বাণিজ্য বিরোধের প্রধান ভুক্তভোগী হলেও স্মার্টফোন সরবরাহে হুয়াওয়ের প্রবৃদ্ধিকে প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাংয়ের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর স্যামসাংয়ের ডিভাইস সরবরাহ ও বাজার দখল উভয়ই সামান্য বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। গত বছর শেষে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের দখল ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ, যা চলতি বছর কিছুটা বেড়ে ২১ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার খারাপ সময় পার করলেও চীনে রমরমা ব্যবসা করছে হুয়াওয়ে, যা বৈশ্বিক বাজারে প্রতিষ্ঠানটির ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে।
স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের দাবি, আগামী বছর বৈশ্বিক হাইএন্ড স্মার্টফোন ডিভাইস বাজারে উপস্থিতি বাড়াতে কাজ করছে হুয়াওয়ে। অন্য চীনা ব্র্যান্ডগুলো বাজেটসাশ্রয়ী ডিভাইস দিয়ে উদীয়মান বাজারগুলোয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা জোরদার করছে। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে আইওএস-চালিত ডিভাইসের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। চীনা ব্র্যান্ডগুলো অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মভিত্তিক ডিভাইস দিয়ে হাইএন্ড স্মার্টফোন বাজারে ব্যবসা চালাচ্ছে। ফলে অ্যাপলকে খুব বেশি বেগ পেতে না হলেও বিপদে পড়বে স্যামসাং। এখন পর্যন্ত হাইএন্ড স্মার্টফোন বাজারে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস দিয়ে আধিপত্য ধরে রেখেছে স্যামসাং। চীনা ব্র্যান্ডগুলোর কারণে আগামী বছর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হবে স্যামসাংকে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বৈশ্বিক প্রিমিয়াম স্মার্টফোন বাজারের এক-চতুর্থাংশ দখলে রেখেছে স্যামসাং। গত এক বছরে প্রিমিয়াম স্মার্টফোন বাজারে এটাই দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ দখল। পাশাপাশি এ সময়ে প্রথমবারের মতো স্যামসাং তাদের ‘এস’ সিরিজের তিনটি ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস উন্মোচন করেছে। এর আগের বছরগুলোতে সাধারণত সিরিজটির দুটি ডিভাইস উন্মোচন করে আসছিল স্যামসাং। বলা হচ্ছে, প্রিমিয়াম স্মার্টফোন বাজারে ক্রেতাদের আরো বেশি পছন্দের অপশন দিতে গত এক বছরে এস সিরিজের মোট তিনটি ডিভাইস উন্মোচন করেছে স্যামসাং।
হুয়াওয়ে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বৈশ্বিক প্রিমিয়াম স্মার্টফোন বাজারে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে। বিশেষত, ফ্ল্যাগশিপ মেট ও পি সিরিজের ডিভাইসগুলোর উন্নত ক্যামেরা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ও ডিভাইসগুলোর অত্যাধুনিক ডিজাইনের কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দুই অংকের প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে হুয়াওয়ে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানা কয়েক প্রান্তিক ধরে অ্যাপলের আইফোনের সরবরাহ কমছে। ডিভাইসগুলোর চড়া দামই চাহিদা কমার প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। চড়া দামের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি বছর আইফোন হালনাগাদের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে আইফোনের সরবরাহে। গ্রাহকরা এখন এক আইফোন তিন বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করছেন। অথচ আগে দুই বছরের মধ্যে আইফোন ব্যবহারকারীদের ডিভাইস হালনাগাদ করতে দেখা যেত। এছাড়া ডিভাইসগুলোর আয়ুষ্কালও বেড়েছে। একই ডিভাইস টানা কয়েক বছর ব্যবহার করা যাচ্ছে। আইফোন ও স্যামসাং ব্র্যান্ডের হাইএন্ড ডিভাইসের চড়া দামের কারণে গ্রাহকরা চীনা ব্র্যান্ডগুলোর সাশ্রয়ী প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের দিকে ঝুঁকছেন।