যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর দিক থেকে অ্যান্ড্রয়েডকে ছাড়িয়ে গিয়েছে অ্যাপলের আইফোন। বাজার বিশ্লেষক সংস্থা কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের উপাত্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের সাম্প্রতিক উপাত্তে দেখা গিয়েছে, জুন প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আইওএস-চালিত আইফোন ব্যবহারকারী ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। স্যামসাং ও লেনোভোর নেতৃত্বে ১৫০টি মোবাইল ব্র্যান্ডের ব্যবহূত গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে।
আইফোন ১৩ ও সাশ্রয়ী আইফোন এসইর ওপর ভর করে জুন প্রান্তিকে হিস্যা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে অ্যাপল। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মার্কিন ব্যবহারকারীরা অন্য যেকোনো ব্র্যান্ডের চেয়ে আইফোন পছন্দ করে। ১৬ সেপ্টেম্বর আইফোন ১৪ উন্মোচন করতে যাচ্ছে অ্যাপল। এতে বছরের দ্বিতীয়ার্ধেও যে অ্যাপলের জয়জয়কার থাকবে তা সহজেই অনুমেয়।
২০০৭ সালে আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে যাত্রা আইওএসের। তার এক বছর বাদেই গুগলের মালিকানায় যাত্রা অ্যান্ড্রয়েডের। ২০১০ সালের মধ্যেই বাজারে শীর্ষে আসীন হয় এ অপারেটিং সিস্টেম। অ্যান্ড্রয়েড বাজারে শক্তিশালী অবস্থান যখন করে নিচ্ছিল তখন অনেক পিছিয়ে ছিল আইওএস। নকিয়া, মটোরোলা, উইন্ডোজ ও ব্ল্যাকবেরির অপারেটিং সিস্টেম থেকেও পিছিয়ে ছিল অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমটি। অ্যাপলের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আইফোন। প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের ওপর ভর করে বর্তমানে অ্যাপলের বাজার মূলধন আড়াই ট্রিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে বিশ্বে আইফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ কোটির সীমা অতিক্রম করেছে।
বিস্তুত গ্রাহকশ্রেণীর কাছে পৌঁছতে আইফোন ১৩ মিনি নিয়ে এলেও তা ছিল তাদের সবচেয়ে অজনপ্রিয় ফোন। কনজিউমার রিসার্চ ইন্টেলিজেন্স পার্টনার্স (সিআইআরপি) প্রকাশিত উপাত্তে দেখা গিয়েছে, অ্যাপলের মোট স্মার্টফোন বিক্রিতে আইফোন ১৩ মিনির হিস্যা মাত্র ৩ শতাংশ। আইফোন ব্যবহারকারীরা প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা ধরে রাখতে চায়। এজন্য সামনের আইফোন ১৪-তে বড় ফোন নিয়েই আসছে অ্যাপল। বলা হচ্ছে, আইফোন ১৪ ও আইফোন ১৪ প্রো হবে ৬ দশমিক ১ ইঞ্চির। অন্যদিকে আইফোন ১৪ ম্যাক্স ও আইফোন ১৪ ম্যাক্স প্রো হবে ৬ দশমিক ৭ ইঞ্চির। এবার ৫ দশমিক ৪ ইঞ্চির আইফোন মিনি উন্মোচন করছে না অ্যাপল।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, আইফোন ১৩-তে ভর করে চীনের স্মার্টফোন বাজারে হিস্যা বাড়িয়েছে অ্যাপল। স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, জুনে চীনের অনলাইন শপিং ফেস্টিভ্যালে ১ কোটি ৪০ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে। শাওমি, অপো ও ভিভোর বিক্রি কমলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের বাজারে শীর্ষস্থান অ্যাপলের।
সার্বিক স্মার্টফোন বিক্রি কমলেও আল্ট্রা প্রিমিয়াম সেগমেন্টে চাঙ্গা বিক্রি অ্যাপলের। চীনে ১ হাজার ডলার বা তার চেয়ে বেশি দামের আইফোন বিক্রি ১৪৭ শতাংশ বেড়েছে। এ সেগমেন্টে স্যামসাংয়ের বিক্রিও ১৩৩ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্লেষক ঝ্যাং মনে করেন, চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ের বাজার হিস্যা হ্রাস এবং পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নিয়েছে শীর্ষ এ ব্র্যান্ড দুটি। চীনসহ বৈশ্বিক বাজারে ভিভোর সাম্প্রতিক উত্থান নিয়ে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক আইভান ল্যাম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানের জন্য অ্যাপল ও হুয়াওয়ে দীর্ঘদিন ধরেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে আসছিল। এখন ভিভোসহ অন্যান্য প্রধান চীনা কোম্পানি এ সেগমেন্টে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
অ্যান্ড্রয়েডকে হটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষস্থান অর্জন করার পাশাপাশি আইওএসের নতুন ভার্সন নিয়ে কাজ করছে অ্যাপল। ব্লুমবার্গের প্রযুক্তি বিশ্লেষক মার্ক গুরমানের বরাতে জানা গিয়েছে, আইওএস ১৬-এর ফার্স্ট ভার্সন সম্পন্ন করেছে অ্যাপল। কয়েক সপ্তাহ আগে এ কাজ সম্পন্ন করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি।