চলতি বছর শেষে বিশ্বব্যাপী মোবাইল গেমিং বাজারের আকার দাঁড়াবে ১০ হাজার ৫৪ কোটি ডলার। বাজারটি ২০২৯ সালের মধ্যে ১৬ হাজার ৪৮১ কোটি ডলারে পৌঁছবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এ সময় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গ্লোবনিউজওয়্যারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য হয়ে ওঠার কারণে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের ব্যবহার এখন উর্ধ্বমুখী। ফলে মোবাইল গেমের জন্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা ও এ খাতের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। উন্নত হার্ডওয়্যারের কারণে মোবাইল ডিভাইসগুলোয় এখন উচ্চ মানের ও আকর্ষণীয় গেম খেলা সম্ভব। পাশাপাশি ফোরজি ও ফাইভজি নেটওয়ার্কের মতো মোবাইল ইন্টারনেটের অগ্রগতির ফলে অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমিং আরো সহজ হয়েছে। গেম ডাউনলোডও দ্রুততর হয়েছে, যা বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৯ সালের মধ্যে বৈশ্বিক ফাইভজি সাবস্ক্রিপশন ৫৩০ কোটি অতিক্রম করবে, যা হবে মোট মোবাইল সাবস্ক্রিপশনের ৫৮ শতাংশ। ২০২৮ সালের মধ্যে মোবাইলের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হবে ফাইভজি। ক্রমবর্ধমান ফোরজি ও ফাইভজি নেটওয়ার্কের কারণে ত্রিপলএ মানের (বড় গেমিং স্টুডিওগুলোর তৈরি উচ্চ বাজেট ও উচ্চ মানের গেম) মোবাইল গেম এ বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গুগল প্লে ও অ্যাপল অ্যাপ স্টোর ডেভেলপারদের মোবাইল গেম বিকাশ ও মনিটাইজেশন সহজ করেছে। এসব প্লাটফর্মগুলো লাখো স্মার্টফোনের সঙ্গে যুক্ত, যা ডেভেলপারদের একটি বৃহৎ ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ইন-অ্যাপ কেনাকাটা ও বিজ্ঞাপন থেকে আয় করার সুবিধা দেয়। ফ্রি-টু-প্লে গেম, যেগুলো বিনামূল্যে ডাউনলোড ও খেলার সুযোগ দেয়, কিন্তু ইন-অ্যাপ কেনাকাটার মাধ্যমে আয় করে মোবাইল গেমিং বাজারের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সংযোগ ও মোবাইল ইম্পোর্টসের জনপ্রিয়তা গেমগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করেছে। ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের মতো প্লাটফর্মগুলোও বিশেষ ধরনের মোবাইল গেম তৈরি করছে। তবে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত সমস্যা, পাশাপাশি মোবাইল গেমের দুর্বলতা নিয়ে সরকারের নিয়মকানুন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এসব কারণে মোবাইল গেমিং বাজারের প্রবৃদ্ধি ভবিষ্যতে সীমিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
ফাইভজি প্রযুক্তি ও ক্লাউড গেমিং প্রসারের ফলে বৈশ্বিক গেমিং সফটওয়্যারেরও বাজার দ্রুত বাড়ছে। এর মধ্যে আছে ভিডিও গেম তৈরি, খেলা ও পরিচালনায় ব্যবহৃত কম্পিউটার প্রোগ্রাম। বাজার গবেষণা সংস্থা অ্যালাইড মার্কেট রিসার্চ বলছে, বৈশ্বিক গেমিং সফটওয়্যার শিল্প বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণে বাড়ছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো ফাইভজি প্রযুক্তির প্রবর্তন, যা বিশেষভাবে মোবাইল গেমিংকে প্রভাবিত করছে। এছাড়া মোবাইল ডিভাইসে প্রতিযোগিতামূলক ও ইমার্সিভ গেমিংয়ের (গেমের দুনিয়ায় পুরোপুরি নিমজ্জিত করা) জনপ্রিয়তা এ বাজারের সম্প্রসারণে অবদান রাখছে।
এদিকে ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ভিডিও গেমিং খাতের আয় ২৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে পৌঁছার পূর্বাভাস দিয়েছেন গবেষকরা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি। বেইন অ্যান্ড কোম্পানির গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছর সারা বিশ্বে ভিডিও গেমের বাজার আয় স্ট্রিমিংসেবা ও বক্স অফিসের সম্মিলিত আয়কেও ছাড়িয়ে গেছে।