জীবিকার ত্যাগীদে ও পরিচয় তৈরি করতে বেঁচে নিতে হয় প্রয়োজনীয় পেশা। ব্যবসা, চাকরিসহ পৃথিবীতে রয়েছে শত শত রকমের পেশা। সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয় পেশাও। কেউ বা স্বাধীন আবার কেউ বা পরাধীন পেশা বেচে নেয় ক্যারিয়ার গঠনে। আবার অনেকে উদ্যোগ নেয় নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরির। আজ এমনি একজন নারী উদ্যোক্তার কথা তোলে ধরবো আপনাদের কাছে। মনিকা আহমেদের জন্ম ও বেড়ে উঠা ঢাকাতেই। চাকরির পিছনে না ছুটে নিজের স্বাপ্ন কে প্রাধান্য দিয়ে শুরু করেন ই-কমার্স ব্যবসা। মনিকা আহমেদের ক্যারিয়ারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
উদ্যেক্তা হলেন কিভাবে?
ছোটবেলা থেকে ব্লক-বাটিক সহ সকল প্রকার হাতের কাজে আগ্রহ ছিলো আমার। নিজের ড্রেস, নিজেই ডিজাইন করতাম। ২১ বছর বয়সে বিয়ে হয় আমার। বিয়ের ৩ বছরের মাথায় কোল আলোকিত করে মেয়ে। তার আড়াই বছর পর দুনিয়ায় আসে ছেলে। ২ সন্তানের দেখা শোনা করতে গিয়ে চাকরী করা হয়নি। সমাজে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করার লক্ষ্য থেকেই উদ্যোক্তা হওয়া।
আপনার পেশা ও উদ্যোগ নিয়ে কিছু বলুন
নিজের পরিবার ও বাচ্চাদের দেখাশুনা নিজেই করবো, এমন চিন্তা থেকে বিভিন্ন রকমের তাঁতের শাড়ী সমাহার নিয়ে ২০১৭ সালের ১০ই জানুয়ারী কন্যাসুন্দরীর মাধ্যমে ই-কমার্স পেশা শুরু করি। প্রতিটি শাড়ী আমি নিজেই ডিজাইন করি। যার ফলে দ্রুতগতীতে কন্যাসুন্দরীর সুনাম ও পরিচিতি ছড়িয়ে পরছে চারদিকে।
কন্যাসুন্দরী নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
কন্যাসুন্দরী নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। তাঁতের শাড়ীতে কন্যাসুন্দরী হবে দেশের প্রথম শারির সু-পরিচিত ব্র্যান্ড। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাবে কন্যাসুন্দরী ব্র্যান্ডে শাড়ী। দেশ ও দেশের বাহিরে জমকালো আনুষ্ঠানে মানুষ কন্যাসুন্দরীর শাড়ী পরবে, আনন্দ করবে, এটা আমার অন্যতম স্বপ্ন।
উই গ্রুপে কিভাবে উপকৃত হলেন?
কন্যাসুন্দরী যাত্রার ৫ মাস পরেই নারী উদ্যোক্তাদের ই-কমার্স ভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) তে জয়েন করি। ই-কমার্স ব্যবসার ওয়েবসাইট, ট্রেডলাইসেন্স, কাস্টমার খাতির, বিজনেস পেজ সেটাপ সহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছি উইতে। স্টরিটেলিং এর মাধ্যমে প্রোডাক্টের প্রমোশন ও ব্র্যান্ডিং, বিজনেস টু বিজনেসের মাধ্যমে শক্তিশালী নেটওয়ার্কিং, কাস্টমার সম্মানের মাধ্যমে ব্যবসার প্রসার সহ ই-কমার্সের খুটিনাটি উইতে শিখেছি ও বাস্তবায়ন করছি। আমার ব্যবসায় ঘুরে দাড়ানোও উইয়ের মাধ্যমে। উইতে বহুভাবে উপকৃত হয়েছি, সেটা বলে শেষ করা যাবে না। আমার জীবনটাই পাল্টে দিয়েছে উই। তাই উইয়ের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
কন্যাসুন্দরীর ক্রেতাদের নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
ক্রেতারাই হচ্ছে একজন উদ্যেক্তার মোটিভেশন। তাই ক্রেতা সন্তুষ্ট করতে পারলে একটি উদ্যোগ অনেক দ্রুততার সাথে এগিয়ে যায়। আমার কাছেও কন্যাসুন্দরীর ক্রেতারা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি সব সময় চাই, ক্রেতার সাথে আন্তরিকতা ও সু-সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং সাধ্যের মধ্যে উন্নত মানের পণ্য দিতে। আমি বিশ্বাস করি সু-সম্পর্ক, রিজনেবল প্রাইস এবং উন্নত কোয়ালিটি দিতে পারলে ক্রেতারা আমার কাছে বার বার ফিরে আসবে ও কেনাকাটা করবে।
আপনার সাফল্যকে কিভাবে পরিমাপ করবেন?
আমি সবসময় চেষ্টা করি আন্তরিকতা, প্রোডাক্ট কোয়ালিটি এবং দ্রুত ডেলিভারি সেবার মাধ্যমে গ্রাহক সন্তুষ্ট করতে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে তখনই সফল মনে করবো, যখন আমার দেয়া সেবায় ক্রেতারা সন্তুষ্ট হয়ে প্রতিবেশীদের কাছে কন্যাসুন্দরীকে প্রচার।
ক্যারিয়ারে আপনার অর্জন কি?
ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স্যারকে পরামর্শদাতা হিসেবে পেয়েছি। যিনি দেশীয় পণ্যের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন এবং দেশি পণ্যকে তোলে ধরছেন।স্যারের দিকনির্দেশনায় চলছি বলেই ক্যারিয়ারে সফলতা পেয়েছি। আমার আরেকটি অর্জন হলো, উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) গ্রুপের প্রথম সফলতার গল্প হিসেবে আমি সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দিয়েছি। আমার সফলতার গল্পে অনেক নতুন উদ্যেক্তা অনুপ্রেরণা পায়। এটা আমার তৃপ্তির।