দীপা বনিকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফেনীতে। ফেনী সরকারী কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতার মাধ্যমে শুরু হয় পেশা জীবন। বিয়ের পর ২০১৩ সালে চলে আসেন পাশের জেলা কুমিল্লায়। স্বামী প্রবাসি হওয়ায় ২ বাচ্চা আর সংসার সামলিয়ে চাকরি করা হয়নি। বাচ্চাদের সাথে রেখে কর্মজীবন শুরু করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে কুমিল্লার খাদি ও বাটিকের শাড়ি, থ্রি পিস, পাঞ্জাবি ইত্যাদি নিয়ে শুরু ই-কমার্স উদ্যোগ ‘দীপান্বিতা’।
প্রাচীনকাল থেকেই এই উপমহাদেশে হস্তচালিত তাঁতশিল্প ছিল জগদ্বিখ্যাত। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সবসময় এই তাঁতের কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হত।কুমিল্লার খাদি কাপড়ের কদর বিশ্বজুড়ে। দীপা উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন। কুমিল্লার দীপা বনিকের জীবন সংগ্রাম নিয়ে কথা বলে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
উদ্যোক্তার আগ্রহ কিভাবে তৈরি হলো?
সবসময়ই ইচ্ছা ছিলো নিজের মতো কিছু করবো। কিন্তু বাচ্চা, সংসার সামলে সম্ভব হয়নি। হঠাৎ করে বান্ধবী বলে তাকে কিছু কাপড় কিনে দিতে। কাপড় কিনে বাসায় আসার পর মাথায় আসলো বাচ্চা ও পরিবার সামলে ই-কমার্স করা যাবে খুব সহজে। তারপর ফেসবুক পেজ খুলে খাদি ও বাটিকের ব্যবসা শুরু করেছি। ঐ বান্ধবী সহ অন্য বান্ধবীরাও আমার নিয়মিত ক্রেতা। ই-কমার্স করার জন্য নির্দিষ্ট সময় ও অফিসের প্রয়োজন নাই। সবদিক থেকেই ই-কমার্স পেশা আমার সহযোগী।
আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি??
‘দীপান্বিতা’ নিয়ে আমার স্বপ্ন। ই-কমার্স ও নিজস্ব তাতির মাধ্যমে কুমিল্লা ঐতিহ্যবাহী খাদি’ নিত্য নতুন ডিজাইনে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে দিতে চাই। খাদি কাপড়ের যে সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে তা অক্ষত রাখতে আমার ‘দীপান্বিতা’ ভূমিকা রাখবে। কুমিল্লা ও কুমিল্লাহ বাহিরে প্রতিটি গ্রামে যাবে দীপান্বিতার খাদি কাপড় এমনটাই প্রত্যাশা।
আপনার চ্যালেঞ্জ গুলো কিভাবে মোকাবেলা করেছেন??
উদ্যোক্তা জীবন মানেই চ্যালেঞ্জে ভরপুর আর নারী হলেতো কথাই নেই। নারী হিসেবে প্রচুর বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনেকেই বলেছে টাকার কি অভাব লেগেছে, একজন মেয়ে হয়ে ব্যবসা করতে হবে? তবে এসব ক্ষেত্রে আমি পূর্ণ সাপোর্ট পেয়েছি আমার স্বামীর। যেহেতু শুরু থেকে প্রোডাক্ট সোসিং, প্যাকেজিং, কাস্টমার, ডেলিভারি সবকিছু একা ম্যানেজ করতে হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমার উদ্যোক্তা জীবন ভীষন চ্যালেঞ্জিং ছিলো। আমার কাজের প্রতি আন্তরিকতা আর ভালোবাসাই এসব চ্যালেঞ্জ জয় করতে সাহায্য করে।
উই থেকে প্রাপ্তি গুলো কি?
উইমেন্ড এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) দেশী পণ্যের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম। আমরা যারা দেশী পণ্য নিয়ে কাজ করি তাদের জন্য উই ফেসবুক গ্রুপ একটা স্বপ্নের জায়গা। আর আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সেই স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন ইক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা-সাবেক সভাপতি ও উইয়ের উপদেষ্টা রাজীব আহমেদ স্যার। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে উই ও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ঝড়ের গতিতে। স্যার দেশের সকল নারী উদ্যোক্তাদের সমান তৈরি করে দিয়েছেন। উইতে এসে মাত্র ৫ মাসে আমি যে নাম ও সম্মান পেয়েছি তা আমাকে আরো পাঁচ বছর এগিয়ে নিয়েছে। কোন রকম টাকা খরচ ছাড়াই থেকে বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারি ট্রেনিং এর সুযোগ পেয়েছি। তাছাড়া স্যারের দেওয়া বিভিন্ন টপিক, হোমওয়ার্ক ও অনলাইন আড্ডার মাধ্যমে নিজেকে ই-কমার্স ইন্ড্রাস্টিতে নিজেকে দক্ষ করতে পারছি। সবচেয়ে বড় কথা করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা গুটিয়ে বসে থাকাতে হতো সেখানে উইতে এক্টিভ থেকে লাখ টাকা সেল পেয়েছি। এজন্য রাজীব আহমেদ স্যার এবং উই এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপুর কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।