সালমা নেহার জন্ম ও বেড়ে উঠা কিশোরগঞ্জে। মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার জন্য চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। তেজগাঁও কলেজ থেকে একাউন্টটিং বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করে বাবা-মায়ের সম্মতিতে নিজ পছন্দে বিয়ে করেন সালমা নেহা। চাকরি নেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে। তিনি এখন শুধু একজন মা’ই নন, তিনি একজন রোল মডেল উদ্যোক্তা। নিজের পেজ/ওয়েবসাইট ছাড়া শুধু মাত্র ফেসবুক গ্রুপে একটিভ থেকে মাত্র ৫ মাসে হয়ে উঠেন মিলিনিয়ার। নেহার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন। সালমা নেহার সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
উদ্যোক্তার বীজ বুনলেন কিভাবে?
৯-৫ টায় বাধা চাকরী জীবন আমার কখনোই পছন্দ ছিলোনা। আমি সবসময় স্বাধীনচেতা টাইপের নারী। নিজের মতো করে চলা আমার পছন্দ। তাছাড়া টিভিতে নারী উদ্যোক্তাদের প্রোগ্রাম, খবরের কাগজে উদ্যোক্তা দের নিয়ে লেখা ফিচার গুলো দেখে আমিও তাদের মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু পারিবারিক সহযোগীতা না থাকায় শুরু করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে ২০১৬ সালে ক্লথিং আইটেম নিয়ে স্বামীর সহযোগিতায় উদ্যোক্তা জীবন শুরু করলেও ২০১৮ এর শেষের দিকে এসে তার ইতি টানতে হয়েছিল। পরবর্তী তে ২০১৯ সালে অক্টোবরে উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) গ্রুপের জয়েন করে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নতুন করে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করি। নিজের উদ্যোগকে গুরুত্ব দিয়ে চাকরি থেকে সম্পূর্ণ অব্যহতি নেই।
পেজ/ওয়েবসাইট কেন করেন নি?
উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) গ্রুপে জয়েন হওয়ার পর বেশ কিছু পোস্টে দিকনির্দেশনা পেলাম উইয়ের সম্মানীত উপদেষ্টা রাজিব আহমেদ স্যারের। তিনি পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন। স্যারের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে পেজ/ওয়েবসাইট ছাড়াই দেশীয় পণ্যের মাধ্যমে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরির চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি আমার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং, গুণগত পণ্য এবং গ্রাহক সন্তুষ্টিই আমার কোম্পানি ব্র্যান্ডিং।
কাজ করেন কি পণ্য নিয়ে?
আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আদি চমচম, অন্যান্য আঞ্চলিক মিষ্টি, লিচু ও ব্র্যান্ডিং পণ্য আম নিয়ে কাজ করছি। ইচ্ছে আছে নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের ব্যান্ডিং পণ্য ’পনির’ নিয়ে কাজ করার। আমি চাই ই-কমার্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলা সহ সকল উপজেলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের স্থানীয় পণ্য গুলো পৌঁছে দিতে। এ সকল দেশীয় খাবার নিয়ে আমার কোম্পানি একদিন দেশি পণ্যের ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে যার সুনাম থাকবে দেশে-বিদেশে সর্বত্র ইনশাআল্লাহ।
আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ জানতে চাই।
আমার গ্রাহক বা কাস্টমার পুরোটাই উই কেন্দ্রিক। আমার উদ্যোক্তা জীবনের প্রাণ হলো উই এর সম্মানীত গ্রাহকগণ। যাদের আন্তরিক সহযোগীতায় আমার আজকের অবস্থান। উই গ্রুপের গ্রাহকদেন সহযোগীতা আর অনুপ্রেরণায় মাত্র ৫ মাসে ১ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে মিলিয়ন টাকা বিক্রির মাইলফলক অতিক্রম করেছি।
উইতে আপনার সাফল্য গুলো কি?
উই তে আমার প্রথম সফলতা হলো চাকুরী ছেড়ে ফুল টাইম দেশীয় পন্যের উদ্যোক্তা হতে পারা। তা সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র উই এর কল্যাণে। আমি শুধু শেখার জন্য সময় দিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু এর বিপরীতে পাওয়া সাফল্য আমার কাছে অতুলনীয়। উইয়ের সকল মেম্বার ও এডমিন প্যানেলে আস্থা অর্জন করে দেশি পণ্যের পরিচিত উদ্যোক্তারদের একজন হতে পারা। সাধারণ মেম্বার থেকে এডমিন প্যানেলে যোগদানের সুযোগ ও ট্রেইনিং টীমে সাপোর্টার হতে পারা। উইয়ের সম্মানীত উপদেষ্টা রাজিব আহমেদ স্যারের দিকনির্দেশনায় এতো সাফল্যের ঝুড়ি ভারি করতে পারার জন্য কৃতজ্ঞতা স্যারের কাছে এবং উই এর প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশা আপুর কাছে।