গুটিপোকা ও ব্যাড হ্যাবিটের স্বত্তাধিকারী আফসানা সুমী বর্তমানে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীতে বসবাসরত। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক – স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি। এরপর কেন রং-তুলির সাথে ক্যারিয়ার গড়লেন সে গল্প নিয়ে আফসানা সুমীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন টেকজুমের প্রতিবেদক মেহজাবীন রাখী।
টেকজুমঃ উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর অধ্যায় জানতে চাই।
আফসানা সুমীঃ ছোটবেলা থেকেই আঁকতে ভালোবাসতাম। পড়ায় ফাঁকি দিয়ে ছবি আকঁতাম। সবসময়ই বকা খেতাম এজন্য,মায়ের নকশা করা জামা আর আমার একটু-আকটু তুলির আঁচড়, এভাবেই কাটছিল দিন।বন্ধুদের জামাতেও একেঁ দিতাম, ইডেনের হলে বসে অ্যাক্রেলিকে তুলি ডুবিয়ে এই একটা শখের চর্চাই চলতো আমার। সেই সময় বন্ধুরা মিলে প্রথম একটি উদ্যোগ নিই। চার জনের অর্থ বিনিয়োগ, আমার ডিজাইন আর সেই ডিজাইন পোশাকে সবাই মিলে তুলে আনা এই ছিল পরিকল্পনা। নানান কারণে সেই উদ্যোগ অসফল হয়।
দীর্ঘসময় পর ২০১৩ সালের ২২ জুলাই গুটিপোকার জন্ম হয়।এর আগে দুই বছর চাকরিও করেছিলাম যা স্নাতকোত্তর পরীক্ষার সময় ছেড়ে দিই।হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছি, ব্যাংকার হওয়াই ছিল জীবনের লক্ষ্য।আমার শখের উদ্যোগকে পেশাদারিত্বে পরিণত করেন আমার ক্রেতা,বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষীরা। তাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা, প্রশংসা আমাকে আত্মবিশ্বাস দেয়। এক সময় ভাবতে শিখি, নাহ চাকরি নয়, নিজ প্রতিষ্ঠানে ছবি আকাঁই হবে আমার পেশা।
টেকজুমঃ পেশাদারিত্বের জন্য ক্যারিয়ারে ই-কমার্স বিজনেসকেই কেন পছন্দ হলো?
আফসানা সুমীঃ কারণ আমি কিছুটা অন্তর্মুখী। সরাসরি ক্রেতাদের সাথে কথা বলা, পণ্য বিক্রী করা আমার কাছে বেশ কঠিন লাগত। বিশেষ করে কাজটা যখন নিজের করা তখন আরও কঠিন মনে হত। আর আমি যেহেতু নিজেই আকঁতাম, মানে পণ্য উৎপাদন সম্পূর্ণ আমার দায়িত্ব ছিল তাই উৎপাদন, বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন একই সাথে অনলাইন-ব্যবস্থাপনা করা সহজ ছিল আমার জন্য।
টেকজুমঃ “গুটিপোকা”কে অদূর ভবিষ্যতে কতোটা সফল দেখতে চান?
আফসানা সুমীঃ বাংলাদেশের এক নং হ্যান্ড পেইন্ট ব্র্যান্ড হিসেবে দেখতে চাই আমার গুটিপোকাকে। সাথে গহনায় অবদান রাখবে আমার ভিন্ন আরেকটি উদ্যোগ ‘ব্যাড হ্যাবিট’। দেশের বাইরেও আমাদের পণ্য সুনাম কুড়াবে ততোটাই সফলতা প্রত্যাশা করি।
টেকজুমঃ আপনার উদ্যোক্তা জীবনে উই এর অবদান কেমন উপলব্ধি করেন?
আফসানা সুমীঃ আমি সম্পূর্ণভাবে দেশিপণ্যের ভক্ত। উদ্যোগ শুরুর আগে থেকেই বিদেশি পণ্য যথাসম্ভব বর্জন করে আসছি। পাকিস্তানি লনের যুগে পাকিস্তানি পণ্য বর্জন করা যে দেশপ্রেমের প্রকাশক তা নিয়ে বহুবার কথা বলেছি। উই হচ্ছে সেই প্লাটফর্ম যা আমি সবসময় খুঁজেছি। উইতে এসে নিজের পন্য নিয়ে অসংখ্য মামুষকে জানাতে পেরেছি, আজ গুটিপোকা, ব্যাড হ্যাবিটের স্বত্তাধিকারী হিসেবে আমাকেও লাখো মানুষ চেনে। দেশি পণ্যের দূর্বল বাজার যে হতাশা তৈরি করত তা দূর করে দিয়েছে উই। আজ উই আছে বলে এই কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও ভেঙে পড়িনি, বরং শক্ত ভিতের উপর দাড়িঁয়ে আছি। উই আমার জন্য শুধু একটি গ্রুপ নয়, দেশ ও মাটির ঘ্রাণ পাই এখানে। ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা বিনিময় করি এখানে।
টেকজুমঃ ধন্যবাদ আফসানা সুমী, আপনার গুটিপোকার জন্য দোয়া ও শুভকামনা।
আফসানা সুমীঃ টেকজুমকেও ধন্যবাদ।