মণিপুরী জাতি ভারত ও বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা জনসমাজের নাম। এদের আদি বসতি ভারতের মণিপুর রাজ্যে। মণিপুরীদের স্বকীয় ভাষা, বর্ণমালা, সাহিত্য ও সমাজনীতিসহ সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে। বর্তমানে ভারতের মণিপুর রাজ্যে ও বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে মণিপুরী গোষ্ঠীর মানুষ বাস করে। মণিপুরী নারীদের সুনাম আছে তাঁতে তৈরি কাপড়ের জন্য। তাঁতে কাপড় বুননের জন্য তাদের নিজস্ব তাঁত রয়েছে। মণিপুরী নারী তাঁতিরা জন্মসূত্রে মায়ের কাছ থেকেই তাঁতের কাজ শেখেন।
দিন দিন মনিপুরী তাঁতের তৈরি কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে। বাড়ছে শাড়ীর দাম ও । মূলত চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারনে মনিপুরী শাড়ীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তবে এর সাথে আরো কিছু কারন সম্পৃক্ত রয়েছে। মনিপুরী শাড়ীর দাম নির্ভর করে তার বুনন, নকশা, সুতার মান এবং কারিগর এর দক্ষতার উপর।
এই বিষয়গুলো নিয়েই কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করছি
ভলো মানের সুতাঃ সরাসরি তাঁতিদের কাছ থেকে শাড়ী সংগ্রহ করি আর তাই তাদের শাড়ীর কাজ সম্পর্কে অনেকটাই জানা হয়েছে। মাঝে একটা সময় মনিপুরী তাঁতিদের খুব খারাপ অবস্থা গিয়েছে। মহাজনদের চাপে শাড়ীর দাম কমাতে গিয়ে কমেছে এই শাড়ীর গুনগত মান। কিন্তু এখন আমরা উদ্যোক্তারা চাইছি ক্রেতাদেরকে সঠিক মানের অরিজিনাল মনিপুরী শাড়ী পৌঁছে দিতে আর এ কারনেই ভালো সুতা ব্যাবহার করতে হচ্ছে তাঁতিদের। আর ভালো সুতা মানেই ভালো দাম। বর্তমান সময়ে করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে তৈরী হয়েছে ভালো সুতার সংকট। আর এ কারনেই বেড়েছে সুতার দাম। তাই শাড়ীতেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
নকশাঃ মনিপুরী শাড়ীর চাহিদা বৃদ্ধির কারনে স্বভাবতই তার চিরায়ত নকশার পাশাপাশি নতুনত্ব যুক্ত করার একটা প্রবণতা দেখা গিয়েছে। যেহেতু এই শাড়ী সম্পুর্ন হাতে নকশা করা হয় তাই নকশা যত বাড়বে সেই সাথে বাড়ছে একটি শাড়ী তৈরীর সময়। এ কারনেও মনিপুরী শাড়ীর দাম বেড়েছে কিছুটা।
শাড়ীর বুননঃ যদিও মনিপুরী শাড়ীর বৈশিষ্ট্য হলো এটি জালি বুননের হয়। তবে শাড়ীর চাহিদা বৃদ্ধির ফলে ভালো মানের এবং টেকসই শাড়ীর তৈরীর ক্ষেত্রে এর বুননে কিছুটা ঘনত্ব বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে। বুনন যত মজবুত এবং ফিনিশিং করা হয় তখন তাতে সুতা এবং সময় দুটোই বেশি প্রয়োজন হয়। আর তাই শাড়ীর দামে তা সরাসরি প্রভাব ফেলে।
দক্ষ কারিগরঃ বিশেষ করে আমি আমার কথাই বলি। দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন ভাবে খোঁজ করে আমি খুঁজে নিয়েছি মনিপুরী শাড়ীর দক্ষ কারিগর। আমি হয়তো আগেও বলেছিলাম যে বর্তমানে সিলেটের নানা অঞ্চলে মনিপুরী নারীদের পাশাপাশি বাঙ্গালী নারীরাও তাঁতে শাড়ী বুনছে। তবে তারা ততোটা দক্ষ হতে পারেনি এখনো। একজন মানুষ যেমন জন্মের পর থেকে মায়ের কাছে কথা শেখে, হাটা শেখে ঠিক তেমনই একজন মনিপুরী মেয়ে জন্মের পর থেকেই কোনো না কোনোভাবে শাড়ী বুননের কাজ শেখে মায়ের কাছ থেকেই। তাই মনিপুরী নারীরাই মনিপুরী শাড়ী তৈরীতে বেশি দক্ষ হয়। আর অবশ্যই একজন দক্ষ কারিগরের দক্ষতার দামটাও বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। ভালো মানের শাড়ী আমার ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে তাই আমি সেই দক্ষ মনিপুরী তাঁতির কাছ থেকেই শাড়ী সংগ্রহ করি।
উপরের এই করনগুলোই মূলত মনিপুরী শাড়ীর দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও আরো বেশ কিছু কারন রয়েছে, তবে ব্যবসায়ীক এবং পারষ্পরিক কারনেই সেই সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত নয় বলে আমি মনে করি। শুধু এইটুকুই বলি আমরা যারা মনিপুরী শাড়ী নিয়ে কাজ করছি তাদের মধ্যে একটা ভালো সম্পর্কের তৈরী হোক। প্রতিযোগিতা সব সময়ই থাকবে তবে তা যেনো কোনো রেষারেষিতে পরিনত না হয়।
শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যার ও নিশা আপুর কাছে আমার একটা আবেদন থাকবে। আর তা হলো এই মনিপুরী শাড়ীর দাম স্থিতিশীল করতে কোনোভাবে সম্মিলিত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় কি না। আপনারা বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ এর দেশী পন্যেই ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির পথিকৃৎ। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে উদীয়মান এই শীল্পকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
লেখক : টুম্পা চৌধুরী। স্বত্বাধিকারী, রিৎসিকা