দেশের বিখ্যাত মন্ডা হিসেবে পরিচিত মুক্তাগাছার মন্ডার পর এবার দেশ-বিদেশে খ্যাতি ছড়াচ্ছে শেরপুরের মন্ডা। ইতিমধ্যে ই-কামার্স বা জেলা ওয়েবসাইট আওয়ার শেরপুরের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে এ মন্ডা। কেবল মাত্র অনলাইন গ্রাহকদের মাধ্যমে মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কেজি মন্ডা বিক্রি করছে জেলা ওয়েবসাইট ‘আওয়ার শেরপুর’। এছাড়া জেলার নানা পেশাজীবী মানুষ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গেলে মন্ডার যেন বিকল্প নেই। ২ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত মন্ডা নিয়ে যাচ্ছে তাদের আত্মীয় বাড়িতে। এছাড়া শেরপুরের এই সুস্বাদু মন্ডা দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইতিমধ্যে আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুর সহ প্রতিবেশী দেশ ভারতে যাচ্ছে হরহামেশাই।
শেরপুর জেলা শহর সহ অন্যন্যা উপজেলাতে বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে মন্ডা বিক্রি হলেও শহরের প্রসিদ্ধ বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকানের মন্ডার খ্যাতি রয়েছে বেশি। এরমধ্যে অনুরাধা, আদি গিরীশ ও স্বদেশের দোকানের মন্ডার চাহিদা রয়েছে প্রচুর। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সন্ধ্যার পর পরই উল্লেখিত দোকানের মন্ডা শেষ হয়ে যায়। এছাড়া শেরপুরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও অফিস আদালতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রসগোল্লা বা অন্য মিষ্টির চেয়ে এই মন্ডা দিয়ে আপ্যায়ন করাটা এখন রেওয়াজ হয়ে উঠেছে। ফলে আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া মানুষজন এখন অন্যান্য মিষ্টির বদলে এই মন্ডা নিয়ে যাচ্ছে বেশি।
মন্ডা ব্যবসায়ী সূত্রে জানাগেছে, এটি তৈরী করতে প্রথমে খাটি দুধ থেকে ছানা তৈরী করা হয়। পরে সে ছানার সাথে ক্ষীড়, সামান্য চিনি ও এলাচ দানা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ জাল দিয়ে মন্ডার ছানা তৈরী করে পরে তা মন্ডার আকৃতি দেয়া হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানাযায়, ছানা, ক্ষীড়, এলাচি ও চিনির সমন্বয়ে মন্ডা উৎপাদন হওয়ায় এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ডি, বি-১২, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, রিবোফ্লাভিন, ম্যাগনেশিয়াম, নিয়াসিন। যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারি। অনেকেই আছেন যারা সরাসরি দুধ খেতে পারেন না, তাদের অনেকের ক্ষেত্রে এ মন্ডা খেতে কোন সমস্য হয় না।
শেরপুর জেলা ওয়েবসাইট সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে শেরপুরের এই মন্ডা অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় খ্যাতি ছড়াচ্ছে শেরপুর জেলার। অনলাইনে যারা এ মন্ডা খেয়েছেন তাদের অনেকেই শেরপুরের মন্ডার ভূয়েসি প্রসংশা করে তাদের নিজ নিজ ফেইসবুক পেইজে লিখেছেন নানা প্রশংসার কথা। এদের মধ্যে, ঢাকার বাসিন্দা আইনুন্নাহার চৌধুরী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যদি অর্ডার না করতাম অপুর্ণতা রয়ে যেতো। আলহামদুলিল্লাহ অনেক অনেক মজা শেরপুর এর মন্ডা। যে খাবে রিপিট কাস্টমার হতেই হবে। আমি ও হবো রিপিট কাস্টমার।’ ফারজানা সিফাত লিখেছেন, ‘আওয়ার শেরপুর পেইজ থেকে মন্ডা কিনেছিলাম। কম মিষ্টির স্বাদের মন্ডা ছোট বেলা থেকেই পছন্দ আমার। শেরপুরের মন্ডাটা খেয়ে আমার সেই পুরোনো স্বাদ ফিরে পেলাম। সত্যি এত মজার মন্ডা। একটু পর পর টুক টুক করে খেয়ে যাচ্ছি।
শহরের অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের মন্ডা ব্যবসায়ী বাপ্পি দে বলেন, আমরা বাপদাদার আমল থেকে অন্যান্য মিষ্টির পাশপাশি মন্ডা তৈরী করি। আমি নিজে আমাদের মন্ডা দেশের বাইরে আমেরিকা, লন্ডন, কেনাডা, দুবাইসহ প্রতিবেশি দেশ ভারতে প্রচুর বিক্রি করেছি। ওইসব দেশ থেকে বেড়াতে আসা প্রবাসিরা বিদেশ যাওয়ার সময় এবং ভারতে বসবাসরত বিভিন্ন আত্মীদের জন্য শেরপুর থেকে প্রায় প্রতিমাসেই আমাদের দোকানের মন্ডা নিয়ে যায়।
আওয়ার শেরপুর এর প্রতিষ্ঠাতা মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ শেরপুরের বিখ্যাত মন্ডা দেশবাসীর দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা কাজ শুরু করেছি। গত ২ মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা পৌঁছে দিতে পেরেছি। শেরপুরের মন্ডা খেয়ে সেটিস্পাই শতভাগ ক্রেতা। প্রতিকেজি মন্ডা বিক্রি করা হয় সাড়ে ৬ শত টাকা।