বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে আমাদের দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবন। করোনার ভয়াল থাবায় স্কুল এবং কলেজ বন্ধ ছিল প্রায় ৬ মাস। যদিও এখন অনলাইনের মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে তবুও সেশন জট নিয়ে উদ্বিগ্ন বেশিরভাগ অনার্স,মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী। একইসঙ্গে উদ্বিগ্ন ভবিষ্যত কর্মজীবন নিয়ে। আর তাই সময়কে কাজে লাগিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি এখন অনেকেই নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সেই প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখছে ই-কমার্সের হাত ধরে। পুরো দেশের পাশাপাশি বগুড়াতেও এখন সেই সফলতার হাতছানি। শুধু কি শিক্ষার্থী?? না, একজন গৃহিনীও সংসার,বাচ্চা সামলে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলেছে দৃঢ় মনোবল নিয়ে। আর সেই মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)। উই এর হাত ধরে বয়স এবং একই সঙ্গে নারী-পুরুষ ভেদাভেদের তোয়াক্কা না করে অনেকেই বেছে নিয়েছেন উদ্যোক্তা জীবন। যার মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়।
বগুড়া জেলা সদরে বসবাসরত এবং অনার্স ১ম বর্ষে প্রাণীবিদ্যা বিভাগে অধ্যায়নরতএকজন শিক্ষার্থী প্রমি পোদ্দার। তার ইচ্ছা ছিল নিজে বাবার ব্যবসার একটা অংশ হবে। কিন্তু বিধিবাম, বয়সের দোহাই দিয়ে পরিবার দিয়েছে বাঁধা। তবে সব বাঁধাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রমি আজ একজন উদ্যোক্তা। জুন মাসের ২০ তারিখে পুস্পরেণু নামে একটি অনলাইন পেজের মাধ্যমে উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু হয় প্রমি পোদ্দারের। তার যাত্রা পথে সাহস যুগিয়েছে উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম উই। এরই মধ্যে তার বিক্রয় হয়েছে ৫০,০০০/- ছুই ছুই। প্রমি কাজ করছেন হাতে তৈরি গহনা, পোশাক এবং মশারি কাভার নিয়ে। এছাড়া বয়স যে কোনোই বাঁধা নয় সেই বিশ্বাসকে পুঁজি করে মা এবং কাকিদের স্বাবলম্বী করার জন্য তাদের হাতে তৈরি নাড়ু এবং আচার নিয়েও সে প্রচারণা চালাচ্ছেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।
প্রমির উদ্যোগ পুস্পরেণুঃ
অন্যদিকে বগুড়ার মেয়ে জারিন তাসনিম। বি,এস,সি শেষ করেছে্ন কম্পিউটার সায়েন্স থেকে। পড়াশোনা চলাকালীন সময়েই ২০১৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর পার্টনার ওয়ারেসা মোস্তফা জয়কে নিয়ে শুরু করেন নিজেদের উদ্যোগ জেএনজে। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রত্যয় ছিল সেই ছোটবেলা থেকেই। আর সেই প্রত্যয়েই পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের উদ্যোগ জেএনজে কে নিয়ে পথচলা শুরু। অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েও তারা কেউই পিছপা হননি। তাই আজ শুধু নিজেরাই স্বাবলম্বী নন। তাদের পাশাপাশি আরও ১০ জন মানুষকে তারা স্বাবলম্বী করেছেন। জারিন এবং জয় কাজ করছেন হোম ডেকর পন্য এবং পোশাক নিয়ে। করোনাকালীন সময়ে উই’কে পেয়ে তাদের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হয়েছে। তারা দুজনেই সম্মিলিতভাবে লাখপতির খাতাতেও নাম লিখিয়েছেন।
জারিন এবং জয় এর উদ্যোগ জেএনজেঃ
বগুড়ার আরও একজন শিক্ষার্থী এবং উদ্যোক্তা সিরাজুম মনিরা স্নিগ্ধা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত। পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করার ইচ্ছা থেকেই ২০১৮ সালে আটপৌরে নামে একটি পেজের মাধ্যমে বিদেশী পোশাক বিক্রীর মাধ্যমে নিজ উদ্যোগের যাত্রা শুরু। কিন্তু খুব বেশিদিন সেই পন্য নিয়ে কাজ করতে পারেন নি। দেশীয় পন্যের প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি কাজ শুরু করেন ব্লকের পোশাক নিয়ে। তবে বর্তমানে এর সাথে আরও যুক্ত হয়েছে কুশিকাটার পন্যসহ, হাতের কাজের পোশাক। এই মুহুর্তে ৩ জন কর্মী রয়েছে তার। তিনি চান চাকরীর বাজারে না ঘুরে সেই সময় নিজ উদ্যোগে প্রদানের মাধ্যমে নিজের পাশাপাশি আরও কিছু পরিবারে স্বচ্ছলতা এনে দিতে।
স্নিগ্ধার অনলাইন পেজ আটপৌড়েঃ
এছাড়া হাতে তৈরি গহনা এবং সুতার চুড়ি নিয়ে কাজ করছেন বগুড়া শহরের মেয়ে সাদিয়া ইবনাত দৃষ্টি। পড়াশোনা করছেন মার্কেটিং নিয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে পথচলা শুরু দৃষ্টির। দৃষ্টি’স কালেকশন নামে ফেসবুক ভিত্তিক পেজের মাধ্যমে এ বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করেন নিজের উদ্যোক্তা জীবনের পথচলা। এরই মধ্যে তার হাতে তৈরি সুতার চুড়ি পেয়েছে আলাদা এক গ্রহণযোগ্যতা। আর এই গ্রহণযোগ্যতা এবং নিজের আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব নিয়েই দৃষ্টি এগিয়ে চলেছেন তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
দৃষ্টির উদ্যোগ দৃষ্টি’স কালেকশন অনলাইন পেজঃ
প্রমি,জারিন,স্নিগ্ধা এবং দৃষ্টির মত আরও শ’খানেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বগুড়া জেলার আনাচে কানাচে। কেউ কাজ করছেন হাতে তৈরি গহনা নিয়ে আবার কেউ কাজ করছেন হ্যান্ড পেইন্টেড পোশাক নিয়ে। এছাড়া রান্না করা খাবার, মিষ্টান্ন, হাতের কাজের পোশাকও প্রাধান্য পেয়েছে অনেকের উদ্যোক্তা জীবনে। নিজেদের ভাল লাগার কাজকে গুরুত্ব দিয়ে সেই কাজ সম্পর্কিত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলেছেন এসকল উদ্যক্তারা।
লেখক-কান্তা চক্রবর্তী
সত্ত্বাধিকারী –KLAZE FOOD