কয়েক যুগ আগে থেকে কুমিল্লার খাদি কাপড়ে জুড়ি মেলা ভার। খাদি কাপড় উপমহাদেশের সহজলভ্য পোশাক। স্বদেশী কাপড় হওয়ায় আবেগ জড়িয়ে আছে এ কাপড়ের সাথে। মূলত বিদেশী কাপড় বর্জন করে স্বদেশী কাপড়ের ব্যবহার বাড়াতে তৎকালিন সময়ে খাদি কাপড়ে জোড় দেওয়া হয়েছিল।
খাদি কাপড় একসময় স্বল্প আয়ের মানুষের পোশাকে পরিচিত হলেও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদনে শৈল্পিক ছোঁয়ায় বৈচিত্র আনায় বাঙালির ফ্যাশন প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ঈদ, পূজা, বিয়ে সহ সকল উৎসবে ব্যবহার করা হয় খাদি কাপড়, পাঞ্জাবি ইত্যাদি। খদ্দর পাঞ্জাবি ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায় ঈদ, পূজা।
জানা গেছে, গার্মেন্টসের কাপড় উৎপাদন ও প্রচার দিন দিন বাড়লেও কমেনি খাদি কাপড়ের কদর। অভিজাত শ্রেণীর মানুষের কাছে বেড়েই চলেছে খাদির কদর। ধারণা করা হয় এ কাপড়ে ফিউশন, ইনোভেশন ও প্রচারণা বাড়ালে ব্যবহার বাড়বে সকল শ্রেণীর মানুষের।
কুমিল্লার ইতিহাসকে সমৃদ্ধতর করেছে খাদি কাপড়। খাদি শিল্পকে কুমিল্লার গুরুত্বপূর্ণ সম্পদও বলা হয়। এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে বহু পরিবার। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথে কুমিল্লার খাদি জড়িয়ে আছে ওতোপ্রতোভাবে।
স্বল্প প্রচারণার কারণে ব্যাপক হারে নতুন প্রজন্মের নজর কাড়ছে না খাদি কাপড়। এ কাপড়ের ব্যবহার, যত্ন, ফিউশন ও ইনোভেশ নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব রয়েছে। টেলিভিশন, রেডিও, পেপার, বিলবোর্ড, মেলা, সেমিনারের মাধ্যমে প্রচার চালাতে প্রচুর অর্থের যোগান প্রয়োজন। নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা দুষ্কর।
বিটিআরসির তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৫ লাখের বেশি। এ বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে দ্রুত ও অল্প খরচে খাদি কাপড়ের ব্যাপক প্রচারণা সম্ভব। শুধু নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই নয় তাতি, মহাজন, ব্যবসায়ী, গ্রাহক ও শুভাকাঙ্ক্ষী সহ যেকেউ ইন্টারনেটে খাদির তথ্য আপলোড করে দেশ-বিদেশে প্রচারণায় অংশ নিতে পারে। মানুষ খাদি নিয়ে যত বেশি তথ্য জানতে পারবে তত বেশি খাদি কাপড় ব্যবহারে আগ্রহী হবে।
ই-কমার্সের কল্যাণে খাদি কাপড়ের বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। কুমিল্লার একাধিক দেশি পণ্যের ই-কমার্স নারী উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, শহরের খদ্দর শোরুম গুলোতে জমজমাট বিক্রি থাকলেও ইন্টারনেটে খাদি কাপড়ের নানা রকম তথ্য ও ছবি আপলোড করার ফলে দিন দিন বাড়ছে বিক্রি। ক্রেতারা পর্যাপ্ত সময় দিয়ে বাছাই ও জিজ্ঞাসা করতে পারে। তারা আরও বলেন, ফেসবুক তথা ইন্টারনেটে ছবি আপলোড দেওয়ার ফলে ক্রেতারা অনুষ্ঠান বা পরিবেশের সাথে ম্যাচিং করে কেনাকাটা করতে পারে।
কুমিল্লার বাহিরে অন্য কোন জেলায় শুধু খাদি কাপড় শোরুমের সন্ধান মেলেনি। তাই মানুষ চাইলেও নিজ জেলায় পাচ্ছে না খাদি কাপড়। তবে ইন্টারনেটের কাল্যাণে যেকোন স্থান থেকে ঘরে বসে পেতে পারছে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড়।
তাঁত খিতিশ দেবনাথ বলেন, ‘৩২ বছর যাবত তাঁতের কাজ করি, সম্প্রতি ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের কারণে প্রচার, উৎপাদন, চাহিদা ও বিক্রি বাড়ছে। কয়েকমাস আগেও দুপুরের খাবার শেষ করে ১ ঘন্টা ঘুমিয়ে অন্য কাজ করতাম। বর্তমানে ই-কমার্সে খাদি কাপড়ের চাহিদা বাড়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বুনন কাজে ব্যস্ত থাকি। তিনি আরও জানান, থান কাপড়, ওড়না, শাড়ী, চাঁদর সহ নারীদের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে।
সর্বত্রে ক্রয় বিক্রিয় খাদি কাপড় উপহার দেওয়ার নেওয়া সহ দেশে বিদেশে প্রচার ও বিক্রি বাড়াতে মুখ্য ভূমিকা রাখবে ই-কমার্স।
লেখক : ইমরান হোসেন, প্রতাপ পলাশ ও দেলোয়ার হোসেন।