স্বপ্ন ছিল নিজে কিছু করব। এমন কিছু করব, যাতে বাড়তি আয়ের পাশাপাশি নিজের আনন্দটাও থাকে। সেই থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু। প্রথমে সবকিছু গুছিয়ে শুরু করতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল। তারপর আর থেমে থাকতে হয়নি। এভাবেই অনলাইন ভিত্তিক পিঠাশপের শুরুর কথাটা বলছিলেন ফাউন্ডার আয়েশা রহমান শাম্মি।
উদ্যোক্তা কি কাকে বলে সেটাই তো জানা ছিল না শাম্মির। তার এই পথচলার শুরু থেকেই তাকে সাহস জুগিয়েছেন তার স্বামী আনিসুজ্জামান আনিস। একেবারে প্রথম দিককার কথা বলতে গিয়ে শাম্মি বলেন, আমার মেয়ের স্কুলে প্রতি বছর পিঠা উৎসব হয়। সেখানেই আমরা প্রথম স্টল দিই ২০১৭-তে। তারপর ২০১৮ এসে আমরা সিদ্ধান্ত নিই অনলাইনে পিঠা বিক্রি করব। শুরু হয় পিঠাশপের অফিসিয়ালি যাত্রা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে। প্রথম দিকে দু-একটা অর্ডার আসত। দিন দিন বাড়তে লাগল অর্ডার।
ই-কমার্স কি সেটাওতো জানা ছিল না কখনো। মেয়ের স্কলের মেলাতেই সিমাবদ্ধ ছিলাম। আমার স্বামী টেকনোলজিক্যালি সাউন্ড। ওই প্রথম আমাকে বলেছিল। চল অনলাইনে পিঠা সেল করি। যদিও সে বলছিল আর হাসছিল। কারন সে নিজেও প্রথেমে তা বিশ্বাস করতো না। তবে বিশ্বাস ছিল লেগে থাকলে একটা সময় কিছু একটা হবে।
বর্তমানে ফেসবুক পেজ ‘পিঠাশপ’-এর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছেন আয়েশা। তার ব্যবসার প্রধান খাবার হলো বিভিন্ন ধরনের পিঠা। পাটিসাপটা পিঠাই তার সিগনেচার পণ্য। অন্যান্য পিঠার মধ্যে রয়েছে মুগ পাক্কন, তেলে ভাজা পুলি, ভাপা পুলি, এলেবেলে পিঠা, নকশি পিঠা, বিবিখানা, তেলের পিঠা, ভাপা পিঠা, দুধ চিতই, দুধ পুলি, খিরসা পুলি, ছরা পিঠা (সেমাই পিঠা)। এসবের মধ্যে নতুন আইটেম হলো খিরসা রোল ও ঢাকাইয়া আচার। আরও রয়েছে কুনাফা (খাবার), অরিও কেক, প্লেন কেক ও ফ্রুট ডেজার্ট।
আয়েশা রহমান শাম্মি জানান, ২০১৮ এর অক্টোবরে আমার স্বামী একটা ফেজবুক গ্রুপ ওমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম এ। মূলত সেখান থেকেই আমাদের পিঠাশপ এর পূণঃজন্ম হয় রাজিব আহমেদ ভাইয়ের হাত ধরে। একজন সাধারণ ঘরনি থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠা সেটাও রাজিব আহমেদ ভাইয়ের হাত ধরে। একটা অফলাইন আড্ডায় আমরা ‘উই’ মেম্বারদের পিঠা খাওয়াই উপহার হিসেবে। প্রথম মিটআপেই, রাজিব আহমেদ ভাইয়া বলেছিলেন “ভাবীর হাতের পাটিসাপটা পিঠা, ঢাকার মধ্যে বেষ্ট।” এই একটা বাক্য আমাদের জীবন পাল্টে যায়। তার পর থেকে পিঠাশপ কে আর পিছু ফিরে থাকতে হয় নি। উই এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপুর প্রতি কৃতজ্ঞতা। তার তৈরি করা প্ল্যাটফর্ম উই, না থাকলে আমাদের পিঠাশপ এর আজকের এই অবস্থানে আসতে পারতাম না।
আর আমার স্বামীর আন-কন্ডিশনাল সাপোর্ট ছাড়া আমি এতদূর আসা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। ও আমার পিঠাশপ এর কো-ফাউন্ডার। আমাদের টিম মেম্বার কিন্তু আমার সন্তানেরা, পিঠাশপ যতদিন থাকবে, রাজিব আহমেদ ভাইয়ের নাম ততদিন জড়িয়ে থাকবে। তার প্রতি আমাদের পিঠাশপ ও ব্যক্তি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।